পোশাক শিল্পে অসন্তোষ
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩নতুন মজুরি বোর্ড গঠন হওয়ার পর পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩,৬০০ টাকা করার প্রস্তাব করে মালিক পক্ষ৷ শুধু তাই নয়, এর বেশি মজুরি বাড়াতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন তাঁরা৷ আর শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করে ৮,১১৪ টাকা৷ গত শনিবার ন্যূনতম মজুরি ৮০০০ টাকার দাবিতে ঢাকায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা সমাবেশ করেন৷ সেদিন থেকেই ঢাকার বাইরে শ্রমিক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে আর রবিবার তা অব্যাহত থাকে৷ সোমবার ঢাকায়ও দেখা দেয় শ্রমিক অসন্তোষ৷
সকালে রাজধানীর তেজগাঁ, মহাখালী, বনানি এলাকায় শত শত পোশাক শ্রমিক সড়ক অবরোধ করে৷ প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে তাদের সেই অবরোধে রাজধানীর একাংশের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়৷ এ সময় তারা কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে৷
ঢাকার বাইরে, গাজীপুর, সাভার এবং আশুলিয়ায় সকাল থেকেই গার্মেন্টস শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন৷ তাঁরা ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক কয়েক ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রাখেন৷ সাভারে অবরোধ তুলতে গেলে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হন৷ গাজীপুরের ভোগড়া এলাকায় এক আনসার সদস্যের ওপর হামলা চালিয়ে তার রাইফেল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে কয়েকশ' পোশাক কারখানায় তাৎক্ষণিক ছুটি ঘোষণা করা হয়৷
এদিকে দুপরে মালিক, শ্রমিক এবং সরকার এই তিন পক্ষ বৈঠক করে সচিবালয়ে৷ নৌ-পরিবহণ মন্ত্রী শাহজাহান খান বৈঠক শেষে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মজুরি নির্ধারণ হবে সব পক্ষের ঐক্যমতের ভিত্তিতে৷ তাই মালিকরা কী প্রস্তাব করলো তা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই৷ তিনি বলেন, অবশ্যই সব দিক বিবেচনায় রেখে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে৷
গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, মালিকদের অযৌক্তিক আচরণের কারণেই এই শ্রমিক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে৷ মাত্র ৬০০ টাকা বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করে তাঁরা শ্রমিকদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন৷ তিনি বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করতে হলে খুব দ্রুত ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করতে হবে৷ তাঁদের দাবি, ন্যূনতম মজুরি ৮০০০ টাকা করা হোক৷ বিজিএমইএ-র সহ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, তারা একটা প্রস্তাব দিয়েছেন, শ্রমিকরাও একটা প্রস্তাব দিয়েছেন৷ এটা নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে৷ কিন্তু সিদ্ধান্ত হওয়ার আগেই এ ধরণের অসন্তোষ কাম্য নয়৷
বাংলাদেশে সর্বশেষ ২০১০ সালে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয় ৩,০০০ টাকা৷ তখনকার মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন ইকতেদার আহমেদ৷ তিনি চলতি সপ্তাহেই ডয়চে ভেলেকে বলেন, ২০১০ সালে ৩,০০০ টাকায় যে জিনিস কেনা যেত এখন কি তা ৩,৬০০ টাকায় কেনা সম্ভব? বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ১,০৪৪ ডলার, যা কম বেশি ৮০,০০০ টাকা৷ তাঁর মতে, সেই বিচেনায় শ্রমিকদের মাসিক ন্যূনতম মজুরি হওয়া উচিত ৬,৫০০ টাকা৷