বড়দিনের কেনাকাটা
২১ ডিসেম্বর ২০১২বড়দিন উপলক্ষ্যে জার্মানির চারিদিকে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে৷ অনেক বাড়ির জানালায় দেখা যাচ্ছে আলোর মালা৷ অফিস, আদালতে শোভাবর্ধন করছে আলোক সজ্জিত ‘ক্রিসমাস ট্রি'৷ শহরের কেন্দ্রস্থল ও দোকানপাটও ঝকমক করছে৷ কনকনে শীতের আলো-আঁধারিকে অনেকটা কাটিয়ে দিতে পারছে এই দীপসজ্জা৷
জার্মানির রাজধানী বার্লিনসহ বড় বড় শহরগুলিতে এখন চোখে পড়ে ব্যস্ত মানুষের ঢল৷ আর সপ্তাহান্ত হলে তো কথাই নেই! আনন্দের চেয়ে উৎকণ্ঠাই যেন অনেকের চোখে মুখে বেশি৷ শেষ মুহূর্তে সবার মন রক্ষা করা যাবে তো? হ্যাঁ এই হচ্ছে বড়দিনের কেনাকাটার সমাপ্তি লগ্নের চিত্রটা৷ তবে ব্যবসায়ীরা খোশমেজাজে থাকেন এই সময়টাতে৷ কারণ বছরের এই দিনগুলিতে তাদের ব্যবসা হয় সবচেয়ে ভালো৷
অনেকের একই চিন্তা
বার্লিনের আনিয়া বাখহোফার সপ্তাহান্তে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করবেন বলে ঠিক করেছেন৷ কিন্তু তিনি শুধু একাই নন, আরোহাজার হাজার পরিবার একই চিন্তা করছেন৷ তাই মানুষের স্রোতে শহরের কেন্দ্রে ও বড়বড় মলগুলিতে তিল মাত্র জায়গা পাওয়া যায় না৷ থরে থরে সাজানো জিনিসপত্র৷ কসমেটিক্স সামগ্রী, অলঙ্কার, বইপত্র, খেলনা, ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র – কী নেই?
অনলাইনে কেনাকাটা সুবিধাজনক হলেও তা আনিয়া বাখহোফার-এর মনঃপূত নয়৷ এর কারণটাও জানালেন তিনি, ‘‘দোকানপাটে ঘোরাঘুরি করাটাও তো মজার, কতরকম আইডিয়া পাওয়া যায়৷ আর বড় দিনের সময় তো কথাই নেই৷ বাচ্চারাও উপভোগ করে তা৷ এই সুযোগে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বড়দিনের বাজারটাতেও একটু ঘুরে দেখা যায়৷ সবাই মিলে একটা সুন্দর দিন উপভোগ করি আমরা৷''
ক্রিসমাসের আগে কাপড় চোপড়ের বিক্রি ব্যবসাই ভালো হয়৷ দামি বুটিক থেকে শুরু করে বড় বড় দোকানের মালিকরাও তাদের ব্যবসায় সন্তুষ্ট৷ অলঙ্কার ও খেলাধুলার সামগ্রীও ভালো বিক্রি হয়৷
হাজার মানুষের ভিড়
অনেক ব্যবসায়ী জিনিসপত্র বিক্রি করে কুলিয়ে উঠতে পারেন না৷ বার্লিনের ব্যবসায়ী সমিতির মুখপাত্র নিল্স বুশ- পেটারসেন এই প্রসঙ্গে জানান, ‘‘বড় বড় দোকানগুলিতে সপ্তাহান্তে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ মানুষের সমাগম হয়৷ সারা শহরে ১০ লাখ মানুষ এখন বাড়ির বাইরে৷ বার্লিনবাসী ছাড়াও পর্যটকদের আনাগোনাও এই শহরে কম নয়৷''
ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ক্রিসমাসের আগের সপ্তাহগুলিই বছরের সেরা সময়৷ বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন আমেজ৷ লাভের অঙ্কটাও কম নয়৷
বাখহোফার পরিবার দোকান দোকানে আড়াই ঘণ্টা ঘোরাঘুরির পর কিছুটা ক্লান্ত, কিন্তু আনন্দের কমতি নেই তাদের৷ দুশো ইউরোর বেশি খরচ হয়েছে৷ দোকানের মালিকরা তুষ্ট এতে৷
উপহার কেনা সহজ নয়
বার্লিনের ডিপার্টমেন্টাল স্টোর কাউফহোফ-এর ম্যানেজার টরস্টেন ক্রুসে বলেন, ‘‘গত বছর থেকেই একটা প্রবণতাটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ তা হলো, উপহারসামগ্রী কিছুদিন আগে থেকেই কিনতে থাকে মানুষ, বিশেষ করে খেলাধুলার সামগ্রী৷ কেননা যে সব জিনিস কিনতে চায় ক্রেতারা, তা অনেক সময় পাওয়া যায় না৷ আজকাল এটা বেশি করে লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷''
প্রথমদিকে অবশ্য অনেকেই ‘উইন্ডো শপিং'-এ আসেন৷ শেষের দিকে কেনাটাই প্রাধান্য পায়৷ আনিয়া বাখহোফার জানান, ‘‘আমরা অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস দেখেছি, যেগুলি উপহারের টেবিলে সাজিয়ে রাখা যেত৷ আজ অবশ্য আমরা বেশি কেনাকাটা করিনি৷ অবশ্য সময় তো আর বেশি নেই৷''