জামিন বাতিল আর গ্রেপ্তারে বিএনপিতে আবার অস্বস্তি
১৫ মে ২০২৩এর ফলে নতুন করে অস্বস্তিতে পড়েছে দলটি। দলটির দপ্তর সূত্র বলছে, বর্তমানে কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের ৫৮৬ জন নেতা-কর্মী কারাবন্দি আছেন। সর্বশেষ রবিবার রাতে শেরপুর থেকে ১১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং ৫৩ জনের নাম উল্লেখ করে শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নতুন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের তৎপরতায় বেশ অস্বস্তিতেই পড়েছে বিএনপি।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) আকন কুদ্দুসুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমার বাড়ি গৌরনদী-আগলঝড়ার ৭০ ভাগ নেতা-কর্মী বাড়ি-ছাড়া। বিএনপি নেতার মার্কেটও তারা দখল করে নিয়েছেন। অর্থাৎ, মার্কেটের মালিক বিএনপি, ভাড়া তুলে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। কয়েকদিন আগে মিথ্যা মামলায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা জামিন নিতে বরিশাল কোর্টে এসেছিল। সেখানে আইনজীবীর চেম্বারে থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগ তাদের পিটিয়েছে। এই এলাকায় আমরা চারজন কেন্দ্রীয় নেতা আছি। আমরা তো এলাকায় যেতেই পারি না। ঝটিকা সফরে কখনও বাড়িতে গেলেও দ্রুত ফিরে আসতে হয়।”
বিএনপির দপ্তর থেকে পরিবেশন করা তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে বিএনপিসহ বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদের নামে১ লাখ ১১ হাজার ৫৪৩টির অধিক মামলা দেওয়া হয়েছে। সেসব মামলায় আসামির সংখ্যা প্রায় ৩৯ লাখ ৭৮ হাজার ৪৮১ জনের বেশি বলেও দাবি বিএনপির। তাদের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ২ হাজার ৮৩০টিরও বেশি। ঢাকাতেই ১ হাজার ৫০০ মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিরোধী মত ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে আসামী করা হয়েছে। বর্তমানে কারাগারে আছেন ৫৮৬ জন নেতা-কর্মী আছে বলেও বিএনপির দপ্তর থেকে দাবি করা হয়েছে ।
হঠাৎ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার ও জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন বিএনপির হাইকমান্ডও। দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঝেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেকের বাসা-বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তল্লাশির ঘটনা ঘটছে। ফলে অনেকেই বাড়িতে থাকছেন না।
খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ১০ দফা দাবি আদায় এবং গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে গত শনিবার রাজধানীতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। একই দাবিতে ১৯ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত যুগপৎ আন্দোলনের চার পর্বের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি।
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে বলছিলেন, "জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলেই এই ধরনের গয়েবী মামলা, পুলিশের হয়রানি বাড়তে থাকে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও একই ঘটনা ঘটেছিল। এবারও সেই কাজ হচ্ছে। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ, বিএনপি এখন আন্দোলনে রয়েছে। এগুলো করে আন্দোলন দমানো যাবে না।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, "অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন যখন দানা বাঁধছে, ঠিক সেই সময় তারা মামলা-হামলা দিয়ে বিরোধী মতকে স্তব্ধ করতে চায়। এই দেশে উচ্চ আদালত জামিন দেন, কিন্তু নিম্ন আদালত তা বাতিল করে দেন। যেখানে কোনো ঘটনাই ঘটেনি, সেখানে ককটেল ফাটানোর মামলা দেওয়া হয়। এসবের উদ্দেশ্য হচ্ছে আবারও গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকা। সেজন্যই গায়েবি ও মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। সিটি নির্বাচন বর্জন করলেও গাজীপুর ও সিলেটে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও বাসা-বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি করছে। অনেক নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মাসের পর মাস বন্দি রেখেছে।”
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এখন তো আইন মন্ত্রণালয় তালিকা করছে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে যে মামলা আছে তার কোনটির রায় দ্রুত দিতে হবে, যাতে তাদের কারাগারে বন্দি রাখা যায়। নির্বাচনের আগে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কারাগারে বন্দি করে রাখার পরিকল্পনা করেছে সরকার। এবার তাদের সেই উদ্দেশ্য সফল হবে না। গত ১৪ বছর হামলা, মামলা নির্যাতন সহ্য করেই আমরা আন্দোলন করেছি, সামনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে। আন্দোলন সফল করেই বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঘরে ফিরবে।”
বিএনপির দপ্তর সূত্র জানায়, গত ৮ মে বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদসহ নারায়ণগঞ্জের ১৩ নেতা-কর্মীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর একদিন পর গত ৯ মে মিথ্যা মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৮৫ নেতা-কর্মীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। গত ২৭ এপ্রিল খুলনার ডুমুরিয়া থানার নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খানসহ আটজনকে কারাগারে পাঠানোর পর গত বুধবার তারা ছাড়া পেয়েছেন। এ ছাড়া মে মাসের শুরুতে সিলেটে বিভিন্ন মামলায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৫০ নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এসব মামলার বিবরণের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে সবমিলিয়ে ১৭ জন বিএনপির নেতা-কর্মী রিমান্ডে আছেন বলে দলটির দপ্তর জানিয়েছে।