1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিএনপির চাওয়া - সরকারের ওপর চাপ বাড়ুক

১৭ এপ্রিল ২০২৩

আন্দোলন ও নির্বাচন ইস্যু দু'টি নিয়ে দ্বিমুখী চাপে বিএনপি৷ দলের তৃণমূল ও বিদেশি বন্ধুদের চাপ নির্বাচনে অংশ নেবার৷ আর বিএনপির একাংশ ও শরীকদের চাপ আরো কঠোর আন্দোলন করে সরকারকে আরো চাপে ফেলার৷

https://p.dw.com/p/4QCMC
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর মানববন্ধন (ফাইল ফটো)
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর মানববন্ধন (ফাইল ফটো)ছবি: Mortuza Rashed/DW

বিএনপি চাইছে তাদের চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচির আগে সরকারের ওপর বিদেশিদের চাপ আরো বাড়ুক৷ এই চাপ বাড়াতে বিএনপি আরো তৎপর হবে৷ সামনে পাঁচ সিটির নির্বাচনে বিএনপি স্বতন্ত্র প্রার্থীতায় বাধা দেবে না ৷ দলীয়ভাবে তারা নির্বাচনে যাচ্ছেনা৷ তবে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে বাধা দেবেনা৷ হয়তো দল থেকে নৈতিক কারণে বহিষ্কারের চিঠিও দেয়া হবে, তবে নিরুৎসাহিত করা হবেনা৷

পাঁচ সিটিতে আগে থেকেই বিএএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা প্রস্তুত আছেন৷ সবার আগে আলোচনায় আছেন সিলেটের মেয়র ও বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী৷ এদিকে বিএনপির কোন কোন নেতা মনে করেন সামনের জাতীয় নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলে স্বতন্ত্রভাবে বিএনপির অনেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে৷ সরকার আগামী নির্বাচন যে কোনোভাবেই হোক অংশগ্রহণমূলক করতে চায়৷ বিএনপি নির্বাচনে না গেলে স্বতন্ত্র প্রার্থিতাকে আওয়ামী লীগের দিক থেকে নানাভাবে উৎসাহিত করা হবে বলে তারা মনে করেন৷ সরকার সিটি নির্বাচনকে অংশগ্রহণ মূলক করে বিদেশিদের বার্তা দিতে চায়৷ তাই বিএনপি সিটি নির্বাচনের সুযোগটি কৌশলে নিলেও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের ‘ফাঁদের ব্যাপারে' সতর্ক অবস্থানে আছে৷
আন্তর্জাতিক মহল থেকে বিএনপির ওপর নির্বাচনে অংশ নেয়ার চাপ আছে৷ আর সরকারের ওপর চাপ আছে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার৷ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রোববার ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন গুরুত্ব পেয়েছে৷ জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন মার্কিন দূত৷ আর সেক্ষেত্রে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে আবারো তাদের যুক্তি তুলে ধরছে৷ যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো অবস্থান না নিলেও অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে তাদের আকাঙ্খা ও চেষ্টার কথা বলেছে৷ মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘রাষ্ট্রদূত হাস বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও শামা ওবায়েদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন৷ তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং অহিংস রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা করেন৷''
বৈঠকে অংশ নেয়া বিএপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ তবে যেহেতু মার্কিন দূতাবাস একটি বিবৃতি দিয়েছে তাই আমরা আর কোনো কথা বলতে চাইনা৷ তারই তো বলেছে৷''
জানা গেছে, বিএনপি ঈদের পরে আরো কঠোর আন্দোলনে যাবে৷ তবে সেটা হরতালের চেয়ে আর বেশি কিছু নয়৷ কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর যেমন চাপ আছে, তেমনি আন্দোলনের ধরন নিয়ে বিএনপি তথা বিরোধীদের ওপর চাপ আছে৷ তাই বিএনপি আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে একটা ব্যালেন্স করতে চায়৷ আর মন্দার কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ৷ তাই যদি এমন কোনো আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হয় যাতে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হয় তাহলে তা সাধারণ মানুষ ও বিদেশিরা কীভাবে নেবে তাও বিবেচনায় নিচ্ছে বিএনপি৷
বিএনপির এখন চলমান কর্মসূচি হলো দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা-সমাবেশ৷ এটা ঈদের পরও অব্যাহত থাকবে৷ ঈদের পর শরীক ও সমমনা দলগুলো নিয়ে তারা যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে চায়৷ বিএনপির সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলনে আছে তাদের অধিকাংশই মনে করে প্রচালিত সভা-সমাবেশে স্টাইলের আন্দোলন আর চূড়ান্ত পর্যায়ে নেয়ার কিছু নেই৷ এখন হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে৷ বিএনপি চাইছে ঈদের পর তৃণমূল পর্যায়ে আরো আন্দোলন জোরদার করে শেষ দিকে এসে ঢাকায় কঠোর কর্মসূচি দিতে৷ বিএনপি এই সময়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ আরো বাড়িয়ে সরকারের ওপর আরো বড় চাপ সৃষ্টি করতে চায়৷ বিভিন্ন দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক প্রেসার গ্রুপের কাছে তাদের বক্তব্য হলো, ‘‘আমরা গণতান্ত্রিক রীতি বজায় রেখেই আন্দোলন করব৷ তবে সরকারকেও গণতান্ত্রিক আচরণ করতে হবে৷''
গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘‘আমাদের অবশ্যই চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যেতে হবে৷ আমরা যারা যুগপৎ আন্দোলন করছি তারা অভিন্ন দাবী ও কর্মসূচি নিয়ে আসছি৷''
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘‘আমরা ১০ দফার আন্দোলন করছি৷ তৃণমূল পর্যন্ত দেশের জনগণ এতে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে৷ এখন জনগণের আকাঙ্খা হলো এই সরকারের বিদায় এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ সেই আকাঙ্খা বাস্তবায়নে আমরা অবশ্যই আরো কঠোর কর্মসূচি দেব৷ রোজার মাসেও আমরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি৷ আমরা চূড়ান্ত আন্দোলনের সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ আমরা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে আন্দোলনের পরবর্তী ধাপের কর্মসূচি খুব দ্রুতই ঘোষণা করব৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমাদের যুগপৎ আন্দোলন চলছে৷ তবে আন্দোলনের একটি যৌথ কর্মসূচি ও আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে৷ আমরা এখন একটি টার্নিং পয়েন্টে আছি৷ শিগগিরই আমরা একটি যৌথ কর্মসূচিতে যাব৷''
নির্বাচনের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো ধরনের নির্বাচনেই অংশ নেবনা৷ কেউ যদি সিটি নির্বাচনে অংশ নেয় তাকে বহিস্কার করা হবে৷ তারপর স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আমাদের তোর আর কিছু বলার থাকবেনা৷''
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘উন্নয়ন সহযোগী ও বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে আমাদের যে আলোচনা হচ্ছে এটা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া৷ এই আলোচনা চলবে৷'' তার কথা, ‘‘আমরা আলোচনা করলে সরকার বলে আমরা ধরনা দিচ্ছি৷ তাহলে তারা আলোচনা করলে সেটা কী বলবেন৷ আমরা যাদের সঙ্গে কথা বলি তারাও তো তাদের সঙ্গেই কথা বলছেন৷ আমরা যেখানে মিটিং করি তারাও তো সেখানে মিটিং করেন৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা আন্দোলনকেও চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাবো৷ তবে এটা ঠিক কখন হবে তা বলা সম্ভব নয়৷ চূড়ান্ত আন্দোলন আগে থেকে বলে কয়ে সম্ভব না৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবেনা৷ এখন সিটি নির্বাচনে কেউ স্বতন্ত্র অংশ নিলে সেটা তাদের ব্যাপার৷ আমরা এ ব্যাপরে কিছু জানিনা৷''

‘আন্দোলন কখন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে তা বলা সম্ভব নয়’