গোটা ইউরোপেই ইউরোপ-বিরোধীদের রমরমা
২১ নভেম্বর ২০১৪ইউরোপের নানা দেশে ‘ইউরোস্কেপটিক' বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্কে সংশয়বাদীদের শক্তি বাড়ছে৷ অর্থাৎ সাধারণ মানুষের ভোটেই তারা সংসদে এসে নিজেদের ভাবধারা তুলে ধরছে৷ ব্রিটেন ছাড়াও ফ্রান্স ও ডেনমার্কে তাদের যথেষ্ট সাফল্য দেখা যাচ্ছে৷ সেই সঙ্গে রয়েছে উগ্র দক্ষিণপন্থি কিছু দল, যারা তাদের সার্বিক কর্মসূচি নিয়ে হাঙ্গেরি ও গ্রিসের মতো দেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে৷ তবে সব দলই যে ইইউ থেকে নিজের দেশকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করতে চায়, এমনটা বলা চলে না৷ প্রত্যেকেরই নিজস্ব অ্যাজেন্ডা রয়েছে৷ ফলে ইউরোপীয় পার্লামেন্টেও তাদের মধ্যে ঐক্যের পথে বাধা রয়ে গেছে৷ যেমন জার্মানির এএফডি পার্টি অভিন্ন মুদ্রা ইউরো ত্যাগ করে পুরানো ডয়চে মার্ক আবার চালু করার পক্ষে সওয়াল করছে৷ ফ্রান্সের ন্যাশানাল ফ্রন্ট মূলত বিদেশিদের অভিবাসনের বিরোধিতা করে আসছে৷ হাঙ্গেরির দক্ষিণপন্থি দল ইইউ-কে উপেক্ষা করে সে দেশে প্রায় এক স্বেচ্ছাচারী শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলছে৷
ইউরোপের অনেক ভোটারের দৃষ্টিতেই রাজনীতির মূল স্রোতের নেতারা আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংকট সামলাতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ প্রবৃদ্ধির অভাব, চরম বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের ধীর গতির সরাসরি কুফল ভোগ করছেন তাঁরা৷ এই অবস্থায় মানুষ এমন সব দলকে সমর্থন করছে, যারা জনমোহিনী বিকল্প কর্মপন্থা তুলে ধরছে৷ ফ্রান্স ও জার্মানির শীর্ষ স্তরের নেতারাও এই অবস্থায় কর্মসংস্থান ও প্রবৃদ্ধির উপর জোর দিতে শুরু করেছেন৷ হতাশ ভোটাররা ‘পপুলিস্ট' দলগুলির ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিন, এটা তাঁরা চান না৷ এই সব দল মানুষের ক্ষোভ ও ভয়ের ভিত্তিতে উঠে এলেও বিকল্প পথ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারে না৷ দায়িত্বশীল, দীর্ঘমেয়াদি বা বাস্তবসম্মত নীতিও তাদের ঝুলিতে নেই৷ শক্তি বাড়া সত্ত্বেও তারা এখনো মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলির জায়গা নিতে পারে নি৷ ফলে পরিস্থিতি বদলানোর জন্য এখনো সময় রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷
তবে বর্তমান অচলাবস্থা কাটাতে ইউরোপীয় কাঠামোর আমূল সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে বলে ইউরোপীয় নেতারা মনে করছেন৷ ব্রাসেলস-এর হাতে বড় বেশি ক্ষমতা রয়েছে এবং ইউরোপীয় কমিশনের যথেষ্ট জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই – এই অভিযোগ সম্পর্কে তেমন মতবিরোধ নেই৷ এই অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের স্পষ্ট এক রোডম্যাপের প্রয়োজন রয়েছে বলে অনেক নেতা মনে করছেন৷ একমাত্র এভাবেই ইউরোপের হতাশ ভোটারদের ইউরোপীয় সমন্বয়ের আদর্শের পথে ফেরানো সম্ভব হবে বলে তাঁদের আশা৷
এসবি/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স, এপি, এএফপি)