নতুন করে আবারো ঠান্ডা লড়াই নয়
১৭ নভেম্বর ২০১৪ব্রিসবেনে প্রধানত বৈশ্বিক অর্থ তথা অর্থনীতি সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আদতে যে প্রশ্নটি সর্বাধিক গুরুত্ব পায়, সে'টি ছিল ইউক্রেন৷ এমনকি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সুদীর্ঘ আলাপেও কোনো লাভ হয়নি৷ ওদিকে ইউক্রেন সংকট থেকে নতুন ঠান্ডা লড়াই শুরু হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে৷
রাশিয়া ও পশ্চিমের মধ্যে এই নতুন বিরোধিতা নিঃসন্দেহে ইউক্রেনের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের প্রশ্ন নিয়ে – এবং সেই বিরোধিতা রাশিয়ার ক্রাইমিয়া সংযোজন ও পূর্ব ইউক্রেনে স্থিতিহীনতা সৃষ্টির প্রচেষ্টার ফলে আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে৷ কিন্তু সব সত্ত্বেও পশ্চিমের এই রুশ প্ররোচনায় স্থৈর্য হারিয়ে একটি নতুন ঠান্ডা লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়া উচিত নয়৷
এই পরিস্থিতিতে ম্যার্কেল যা করছেন, সেটাই ঠিক: ক্রেমলিন – এবং বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট পুটিনের সঙ্গে যোগাযোগের পথগুলি খোলা রাখা প্রয়োজন, যদিও সে'ধরনের আলাপ-আলোচনা থেকে আপাতত কোনো ইতিবাচক ফলশ্রুতি আশা করা যাচ্ছে না৷
একদিকে বিপদ, অন্যদিকে সম্ভাবনা
রাশিয়ার ইউক্রেন নীতি ব্যাপক অনাস্থা ও বিমূঢ়তার সৃষ্টি করেছে৷ তবুও পশ্চিমি কূটনীতির লক্ষ্য হওয়া উচিত, পুটিনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রাখা৷ ন্যূনতম আস্থা সৃষ্টি না হলে কোনোরকম স্থায়ী বন্দোবস্ত সম্ভব নয়৷ মিন্স্ক চুক্তির ভঙ্গুরতা এবং দোনেৎস্ক-এ বারংবার সশস্ত্র সংঘর্ষ মাথা চাড়া দেওয়া থেকেও এই নীতির আবশ্যকতা অনুভব করা যায়৷ বিশ্ব শান্তির পক্ষে আরো অনেক বড় বিপদ হলো, উত্তর অতলান্তিকে রুশ বোমারু বিমান কিংবা অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে রুশ যুদ্ধজাহাজ থেকে অজান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি শুরু হয়ে যেতে পারে৷
এছাড়া পশ্চিমা বিশ্ব এবং সেই সঙ্গে ইউক্রেন সরকারকে এই অপ্রিয় সত্যটি মেনে নিতে হবে যে, রাশিয়ার সহযোগিতা ছাড়া ইউক্রেনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটনা বস্তুত অসম্ভব৷ ইউক্রেনকে গ্যাস সরবরাহ, ইউক্রেনের ভিতর দিয়ে ইউরোপে গ্যাস পাঠানোর জন্য রাশিয়া যে শুল্ক দিয়ে থাকে, ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় পণ্য আমদানি, এবং রাশিয়ায় যে সব ইউক্রেনীয় কাজ করেন, তারা স্বদেশে যে টাকা পাঠান – এই সব কারণে ইউক্রেনের ভালোমন্দ আসলে রাশিয়ার হাতে৷ এবং রাশিয়া যে এই সব অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবে না, সেটাও আজ স্পষ্ট৷
রাশিয়া কি চায়, পশ্চিম তথা ইউক্রেন কি দিতে পারে
ক্রেমলিনের গোপন বাসনা ও লক্ষ্য ইত্যাদির কথা ভেবে কিয়েভ সরকার এবং পশ্চিমা দেশগুলিকে তাদের প্রস্তাব রাখতে হবে৷ অবশ্যই কোনো নয়া সাম্রাজ্যবাদি ‘স্ফিয়ার অফ ইনফ্লুয়েন্স' মেনে নেওয়া চলবে না৷ অপরদিকে ইউক্রেনে ইউরোপের আদলে আইনের শাসন এবং খোলা বাজারের অর্থনীতি চালু হওয়ার পথে কোনো বাধা সৃষ্টি হলেও চলবে না৷
কাজেই আপোশের একটি পন্থা হতে পারে, যদি ইউক্রেন নিরাপত্তা নীতির দিক থেকে পূর্বাপর নিরপেক্ষ থাকে এবং ন্যাটোর সদস্য হবার প্রচেষ্টা না করে; এছাড়া ইইউ-এর সঙ্গে ইউক্রেনের ‘অ্যাসোসিয়েশন' চুক্তির ফলে রাশিয়ার কোনো বড় অর্থনৈতিক ক্ষতি হলে চলবে না; তৃতীয়ত, ইউক্রেনের বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে অঞ্চলগুলিকে আরো বেশি অধিকার প্রদান করতে হবে৷ রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হয় আরো কড়া, নয়তো আরো শিথিল করা হবে, রাশিয়া রাজনৈতিক আপোশের মনোভাব প্রদর্শন করছে কিনা, সে' অনুযায়ী৷