গাছ তুলবে খনিজ, কমাবে দূষণ
৩ জুন ২০১৭জার্মানির ফ্রাইবুর্গ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এক ধরণের খাগড়া ঘাসের মাধ্যমে মাটি থেকে জারমেনিয়াম নামে একটা খনিজ পদার্থ উত্তোলন করেছেন৷
পৃথিবীতে ধাতুর চাহিদা তেলের মতোই ব্যাপক৷ এমনকি কোনো কোনো পূর্বানুমান বলছে, ইলেকট্রিক গাড়ির সংখ্যা বাড়তে থাকায় একটা সময়ে গিয়ে তেলের চেয়েও ধাতুর চাহিদা বেড়ে যাবে৷
সমস্যা হচ্ছে, এসব ধাতু অনেক মূল্যবান এবং এগুলোর উত্তোলনও সহজ নয়৷ উপধাতু জার্মেনিয়ামের কথাই ধরা যাক৷ এটা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতিতে ব্যবহার করা হয়৷ এ জন্য সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানায় এর বেশ চাহিদা রয়েছে৷ এটা আলো পরিবাহী৷ এ কারণে রাতের গগলস, গাড়ির দূরত্ব পরিমাপক সেন্সরে এর ব্যবহার রয়েছে৷
প্লাস্টিক বোতলকে স্বচ্ছ রাখতেও এই পদার্থের ব্যবহার হয়৷
কিন্তু জার্মেনিয়াম সহজে মিলে না৷ যদিও এটা সিলিকনের কাছাকাছি এবং সারা পৃথিবীর মাটিতেই এটা পাওয়া যায়৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মাটিতে এর ঘনত্ব খুবই কম৷ এক মেট্রিক টন মাটিতে সাধারণত ১ দশমিক ৫ গ্রাম জার্মেনিয়াম পাওয়া যায়৷
এই পদ্ধতি বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায় শিল্প কারখানাগুলো তাদের চাহিদা মেটাতে কয়লার ছাই বা প্রক্রিয়াজাতকৃত আকরিক দস্তা থেকে এটা সংগ্রহ করে৷ এক কেজি জার্মেনিয়ামের দাম দুই হাজার ইউরোর মতো৷
গাছই সংগ্রাহক
ফ্রাইবুর্গের ইউনিভার্সিটি অফ মাইনিং অ্যান্ড টেকনোলজির জীববিজ্ঞানী হ্যারমান হাইলমায়ার মাটি থেকে জার্মেনিয়াম সংগ্রহে গাছকে কাজে লাগিয়েছেন৷ তিনি এক ধরণের খাগড়া ঘাসের মাধ্যমে এই পরীক্ষা চালান৷
আর্দ্র তৃণভূমিতে এই গাছটি বেশ চোখে পড়ে৷ দক্ষিণ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার কৃষকরা জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এর চাষ করে থাকেন৷
এই গাছগুলো সিলিকন অ্যাসিড শুষে নেয় এবং তাদের পাতায় ছোট ছোট বালুকণার মতো করে একত্রিত করে৷ এটা শিকারীর হাত থেকে গাছকে সুরক্ষা দেয়৷ বালুকণা বা ঘাসের স্বাদ ভালো না৷
এই ঘাস জার্মেনিয়ামকেও একইভাবে প্রক্রিয়াজাত করে৷ চাষের পর এটিকে শুকিয়ে পোড়ানো হয়৷ এই ঘাস থেকেও খুব বেশি জার্মেনিয়াম পাওয়া যায় না৷ এক মেট্রিক টন ছাই থেকে ১০০গ্রাম পাওয়া যায়৷
ক্রসিফার্স নামে আরেক প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে, এটা ধাতু আহরণে আরো বেশি পারঙ্গম৷
রুর ইউনিভার্সিটির মোলিকুলার জেনেটিকস অ্যান্ড ফিজিওলজি অফ প্ল্যান্টস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক উটে ক্র্যামার বলেন, এই গাছটি কেবল দূষণকারী পদার্থকে মাটির ভেতর থেকে বের করে আনতেই সক্ষম নয়, পাশাপাশি রেকর্ড পরিমাণ মূল্যবান ধাতুকে একত্রিত করতেও সক্ষম৷
অধ্যাপক ক্র্যামার দুটি প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন৷ এগুলো হচ্ছে, এই উদ্ভিদ কি প্যাথোজেন থেকে বাঁচতে ক্যাডিয়াম এবং দস্তাকে কাজে লাগায়? এবং এইসব ধাতু সংগ্রহ, কাণ্ডে স্থানান্তরে কোন ধরণের পন্থা অবলম্বন করে?
কোন ধরণের গাছের মাধ্যমে কোন ধাতু সংগ্রহ করা যায়– তার একটা হিসাব রয়েছে৷ এটা মাটি ও জলবায়ুর উপরও নির্ভর করে৷ ভুট্টা, সূর্যমুখী, কাষ্ঠল গাছও অনেক সময় ব্যবহার করা হয়৷
উইলো এবং পপলার গাছও তাদের পাতায় ধাতু একত্রিত করে৷ এটা সংগ্রহ করতে একটা ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে পাতাগুলোকে একত্রিত করতে হবে৷ তবে এটা এখনো অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয়৷
ধাতু সংগ্রহে অনেক গাছ হয়ত লাভজনক না-ও হতে পারে৷ তবে পরিবেশ দূষণ কমাতে এসব গাছের অনেকগুলোরই রয়েছে কার্যকর ভূমিকা৷
ফাবিয়ান শ্মিড্ট/এসএন