1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিক নির্যাতনে আওয়ামী লীগ নেতার ভাই

৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে এক সাংবাদিককে গাছে বেঁধে নির্যাতনের মূল হোতা স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ভাই ও একজন ইউপি সদস্য৷ তারা ওই এলাকায় প্রশাসনের চোখের সামনেই নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ৷

https://p.dw.com/p/3oo70
বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে এক সাংবাদিককে গাছে বেঁধে নির্যাতনের মূল হোতা স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার ভাই ও একজন ইউপি সদস্য৷ তারা ওই এলাকায় প্রশাসনের চোখের সামনেই নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ৷
ছবি: Ferdous Bin Rashid/DW

নির্যাতনে আহত দৈনিক ‘সংবাদ’-এর তাহিরপুর প্রতিনিধি কামাল হোসেন এখন সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন৷ তারা মাথা ও কপালসহ শারীরের বিভন্ন স্থানে আঘাতে চিহ্ন আছে৷ তিনি একই সঙ্গে উপজেলা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদকও৷

তিনি হাসপাতাল থেকে টেলিফোনে জানান, তাহিরপুরের বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাঘটিয়া এলাকায় যাদুকাটা নদীতে অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে সোমবার দুপুরের দিকে সেখানে যান৷ গিয়ে দেখেন শ্রমিক নিয়োগ করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পাথর ও বালু তুলছেন৷ তিনি প্রথমে পুলিশকে খবর দেন৷ পুলিশ তাকে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেয়ার অনুরোধ করে৷ এরপর তিনি  খবরের জন্য ছবি তোলেন ও ভিডিও করেন৷ তখন সেখানে উপস্থিত এই অবৈধ ব্যবসার ‘গডফাদার’ মাহমুদ আলি কোথাও ফোন করে৷ এরপরই সে সাংবাদিক কামালের কাছে গিয়ে জামার কলার ধরে তার হাতে থাকা ভোজালি দিয়ে মাথায় কোপ দিলে তিনি সরে গেলে তার কপালে লাগে৷

কামাল হোসেন

ওই সময় তারা সেখানে ২০-৩০ জন ছিলেন৷ এরপর তাকে  রড দিয়ে আঘাত ও কিল ঘুষি দেয়া হয়৷ তখন তিনি জ্ঞান হারান৷

কামাল জানান, ‘‘যখন জ্ঞান ফেরে তখন আমি দেখি আমাকে হাত-পা বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ পাশের বাদাঘাট চকবাজারে নিয়ে  গিয়ে গাছের সাথে বাঁধা হয়৷ আমি প্রতিবাদ করলে তারা আবারো মারপিট করে৷’’

খবর পেয়ে দুপুর দুইটার দিকে আরেকজন সাংবাদিক আবির হাসান পুলিশ নিয়ে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তাহিরপুর উপজেলা হাসপাতাল ও সেখান থেকে সুনামঞ্জ জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান৷ আবির হাসান জানান, ‘‘আমরা সেখানে গিয়ে তাকে গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থাতেই পাই৷ তবে পুলিশ যাওয়ার আগেই দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়৷’’

আহত সাংবাদিক কামাল অভিরযোগ করেন, তার ওপর হামলার মূল পরিকল্পনাকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোশাররফ তালুকদারের ভাই মুশাহিদ তালুকদার ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার মনির উদ্দিন৷ তারও ঘটনাস্থলে ছিলেন৷ তাদের নির্দেশেই হামলা হয়েছে৷ তারা অনেক দিন ধরেই অবৈধভাবে পাথর ও বালু তোলার সঙ্গে জড়িত৷ তাদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা আছে৷ বাধ কাটার মামলাও আছে৷ প্রতি বছরই তাদের এই অবৈধ কাজ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট হয়, কিন্তু কোনো কাজ হয় না৷

তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোশাররফ তালুকদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,‘‘আমরা ভাই মুশাহিদ ঘটনার সময় সেখানে ছিলোনা৷ আর মনির মেম্বার অকে জনপ্রিয়৷ সে তিন বারের মেম্বার৷’’ তবে তিনি বলেন,তারা পাঁচ ভাই৷ মুশাহিদ সবার ছোট৷ সবাই প্রাপ্ত বয়স্ক৷ যার যার ব্যবসা স্বাধীনভাবে করে৷ সে কি করে সব সে জানেনা৷ এলাকার অনেকেই গোপনে এবং রাতে পাথর ও বালু তোলে৷ তিনি নিজে পাথরের ব্যবসা করেন৷

মোশাররফ তালুকদার

এই ঘটনায় মোট পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে৷ আসামিরা হলেন, মাহমুদ আলী শাহ, রইস উদ্দিন, দীন ইসলাম, মুশাহিদ তালুকদার ও মনির উদ্দিন মেম্বার৷ পুলিশ সন্দেহজনকভাবে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ তবে এজাহারভুক্ত কাউকেই  এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি৷ থানার সাব-ইন্সপেক্টর দীপঙ্কর বিশ্বাস জানান, ‘‘এজাহারভুক্তরা পলাতক আছে৷ তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে৷’’

আহত সাংবাদিক কামাল জানান, তার পরিবারের সদস্যরা এখন আতঙ্কের মধ্যে আছেন৷ মামলা করায় তার বাড়িতে হামলার আশঙ্কা করছেন তিনি৷

তাহিরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, তারা মঙ্গলবার উপজেলায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন৷ আসামিদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন৷ তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘মফস্বল সাংবাদিকদের কোনো ধরনেরই নিরাপত্তা নাই৷ আর্থিক বা শারীরিক কেনোটাই না৷ অধিকাংশ সাংবাদিক বেতন পান না৷ আবার প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও দুর্বৃত্তদের চাপের মুখে থাকতে হয়৷’’ তার মতে, হামলা হুমকি এড়াতে সাংবাদিকদের একসঙ্গে চলার বিকল্প নাই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান