কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: হলিউডে চাকরি হারানোর শঙ্কা
৩ মে ২০২৩টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহারে রাশ টেনে ধরার দাবি তুলেছে দ্য রাইটার্স গিল্ড অব অ্যামেরিকা-ডাব্লিউজিএ৷ তবে স্টিমিং সেবায় মুনাফার কাটতি আর পড়তি বিজ্ঞাপনী আয়ে ধুঁকতে থাকা হলিউড স্টুডিওগুলো সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে৷
স্টুডিওগুলোর পক্ষে চুক্তির মধ্যস্থতাকারী অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার্স অ্যান্ড টেলিভিশন প্রোডিউসার্সের মুখপাত্রের সঙ্গে এই বিষয়ে রয়টার্সের তরফে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি৷
গত কয়েক বছর ধরেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে হলিউড পাড়ায় বিতর্ক চলছে৷ শেষমেস সোমবার থেকে ধর্মঘটে নেমেছেন মার্কিন চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের চিত্রনাট্যকাররা৷
ডাব্লিউজিএর সমঝোতা কমিটির সদস্য চিত্রনাট্যকার জন অগাস্ট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে তাদের উদ্বেগের মূল দুইটি কারণ উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই না আমাদের উপকরণ দিয়ে তাদের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার) খাওয়ার যোগান দিতে৷ সেই সঙ্গে আমরাও তাদের অপেশাদার খসড়া লেখা ঠিক করার ভূমিকায় থাকতে চাই না৷''
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হলিউডডের চলচ্চিত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার বেড়েই চলেছে৷ এআই বয়স্ক শিল্পীদের মুখের বলিরেখা মুছে দিতে সহায়তা করছে, অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রকে বাস্তবের মতো করে তুলে ধরছে, এমনকি চিত্রনাট্য তৈরিতেও এআই-এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার চলছে৷
এমন অবস্থায় চলচ্চিত্র জগতের সৃজনশীল এই পেশাটি কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দখলে চলে যাবে? সিডনি ইউনিভার্সিটির মোটুস ল্যাবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাইক সেমুর বলেন, একটা সময় ভাবা হয়েছিল যে যন্ত্র সৃজনশীল কাজ অন্তত মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না৷ সেই বিশ্বাসে চিড় ধরলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিত্রনাট্যকারদের সহায়তা করতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷ অন্তত কোন কিছুর শুরুর শূন্যতা কাটাতে প্রযুক্তি ভূমিকা রাখতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি দাবি করছি না এআই অতি বুদ্ধিমান হয়ে উঠবে এবং ‘সিটিজেন কেইন' তৈরি করে ফেলবে৷ কেননা এটা যথার্থও হবে না৷''
তারপরও চলচ্চিত্রের কাহিনি রচয়িতাদের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে৷ যেমন, চিত্রনাট্যকার ওয়ারেন লেইট মনে করেন এর ফলে সামনের দিনে প্রযোজনা সংস্থা চিত্রনাট্যকারদের প্রথম খসড়ার বদলে দ্বিতীয় খসড়া তৈরির জন্য ভাড়া করবে৷ যার কারণে তাদেরকে কম টাকা দেয়া হবে৷
চিত্রনাট্যকারদের ইউনিয়নের প্রস্তাব চ্যাটজিপিটির মতো কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি করে দেয়া রচনাকে ‘সাহিত্য উপকরণ' বা মূল উপকরণ' হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা যাবে না৷ অর্থাৎ, এই ধরনের লেখা যদি চিত্রনাট্যকারকে দেয়া হয় এজন্য তার মজুরি কমানো যাবে না৷ সেই সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে দক্ষ করে তোলার কাজে মানুষের রচিত বিদ্যমান চিত্রনাট্য ব্যবহার না করারও দাবি তুলেছেন তারা৷ কারণ এর ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে মেধাস্বত্ত্ব চুরির দুয়ার খুলে যেতে পারে৷
ডাব্লিউজিএ-এর প্রধান সমঝোতাকারী অ্যালেন স্টুটজম্যান বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে তাদের সদস্যরা ‘নকল করার যন্ত্র' হিসেবে অভিহিত করেন৷ ‘‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের লেখকদের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা উচিত হবে না৷ এই চেষ্টা না করার পেছনে আমাদের যৌক্তিক প্রস্তাব রয়েছে,'' বলেন তিনি৷
এফএস/এসিবি (রয়টার্স)