1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা সন্দেহে মাকে বনে ফেলা নিয়ে আমার বিচার

১৪ এপ্রিল ২০২০

প্রতিদিনের মত আজ সকালেও আমরা খবর নিয়ে ভার্চুয়াল মিটিং করেছি৷ নিজেদের মধ্যে শুভ নববর্ষ আদান প্রদান করেছি কয়েকবার৷ কাতর মনে দেখেছি জনহীন রমনা বটমূল, চারুকলা আর মুখোশে ঢাকা নববর্ষের শুভেচ্ছা৷

https://p.dw.com/p/3arXa
Screenshot Prothom Alo
ছবি: Prothom Alo

সবাই আমরা ঠিক করি কিছু ভাল খবর খুঁজে বার করবো, এই বিষাদ আর মৃত্যুর মত অন্ধকার আর ভাল লাগে না৷

প্রথম আলোর অনলাইনে বড় করে রাখা খবরে চোখ পড়লো৷ সেখানে বলা হয়েছে করোনা সন্দেহে মাকে সখীপুরের বনে ফেলে গেছেন সন্তানেরা৷ সেই মায়ের কাছ থেকেই এ কাহিনি শুনে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে৷ পাঠানো হয়েছে হাসপাতালে৷

সিরিয়াসলি! সত্য বটে মানুষের জীবনই তার কাছে সবচাইতে মূল্যবান৷ কিন্তু করোনা হলেই কেউ মরে যাবেন এই ধারণা মানুষের কেন হল? কেন মানুষের মনে হয়, করোনা আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে মাকে রাতের আঁধারে বনে ফেলে যাওয়া ভাল?

আমরা দেখতে পাচ্ছি করোনা ভাইরাস নিয়ে নানা ধরনের অসত্য অর্ধসত্য ভয় আমাদের মনে ঢুকে বসে আছে৷ করোনা সংক্রমণে মৃত ব্যক্তির লাশ কবর দিতে না দেওয়া এমনকি করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় হাসপাতাল তৈরি করতে দিতেও মানুষের আপত্তি আমরা এখনো দেখে চলেছি৷ করোনায় একটি প্রতিষ্ঠানের কেউ আক্রান্ত হলে অন্যদেরও বাসা ভাড়া না দেওয়া এমনকি ডাক্তার নার্স দেখলেও দূর হয়ে যাওয়া বা দূর দূর করা এখন আমাদের সমাজে খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে৷ ইমিউন সিস্টেম ভাল থাকলে করোনা ভাইরাস কারোরই খুব বেশি কিছু করতে পারার কথা না৷ অথচ আমরা সকলেই এমন ভাব করছি করোনা ধরলেই আমরা শেষ!

Khaled Muhiuddin
খালেদ মুহিউদ্দীন, প্রধান, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগছবি: DW/P. Böll

পরিত্যক্ত মায়ের কথায় ফিরে আসি৷ তিনি যতোটুকু বলেছেন তাকে সত্য ধরে নিলে পুরো ঘটনাটা যেন আমি চোখের সামনে দেখতে পাই৷ তার সন্তানেরা অর্থাৎ দুই বা তিন বা তারও বেশি ছেলেমেয়ে মিলে পরামর্শ করছে যে তাদের মায়ের নিশ্চিত করোনা সংক্রমণ হয়েছে৷ তারপর মাকে সঙ্গে করে সখীপুরের বনে আসে ওই সন্তানেরা৷ সন্তানেরা মাকে বলেন, এই বনে এক রাত থাকতে৷ পরে এসে তাকে নিয়ে যাবেন৷ কিছুক্ষণ পরে সেই মা কান্নাকাটি করতে থাকলে প্রশাসন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়৷

কিন্তু গল্পটি ওই নারী বানিয়েও বলে থাকতে পারেন৷ এরকমও হতে পারে যে, সন্তান বা কল্পিত সন্তানদের উপর রাগে তিনি এই কথা বলেছেন৷ কারণ রিপোর্টটিতে উল্লেখ নেই যে, তাকে যেখানে পাওয়া গেছে সেই জায়গা তার বাড়ি থেকে কত দূর? তিনি আসতে রাজি ছিলেন কিনা? কয়জন ছেলে বা মেয়ে ছিল, তারা চলে যেতে সময়ে তিনি আটকালেন না কেন? এই বনে এক রাত থাকো বলার সঙ্গে সঙ্গেই তো চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ি ঘর বন সব মাথায় তোলার কথা৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা?

ঘটনা সত্য হলে আমাদের পুরো মানবিকতা নিয়ে তা এক অশনি সংকেত দেয়৷ আর ঘটনা মিথ্যা বা বানোয়াট হলেও আমাদের বুঝতে হবে যে, মা, মায়ের সন্তানেরা বা সাংবাদিকেরাসহ আমরা সবাই করোনায় না মরে গিয়েও  ভূতগ্রস্ত হয়ে পড়েছি, মুখোশ পড়ে ভয় দেখানোই এখন আমাদের একমাত্র কাজ৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য