করোনায় বেহাল ভারত, অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু
২৬ এপ্রিল ২০২১ভারতে করোনা পরিস্থিতি আরো বেহাল হয়েছে। হাসপাতালে বেড নেই। অক্সিজেন নেই। করোনা পরীক্ষা করাতে প্রচুর বেগ পেতে হচ্ছে। পরীক্ষা হলেও তার রিপোর্ট আসতে পাঁচ থেকে সাতদিন লেগে যাচ্ছে। অনলাইনে চিকিৎসকের পরামর্শ পেতে দিন তিনেক লেগে যাচ্ছে। ওষুধ পেতেও তাই। পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে। যাদের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে, তাদের চারজনের মধ্যে একজনের রিপোর্ট পজিটিভ আসছে। ফলে আতঙ্ক বাড়ছে।
এরই মধ্যে হরিয়ানায় হিসারে সোমবার অক্সিজেন না পেয়ে চারজন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। এই নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় হরিয়ানার তিনটি হাসপাতালে রোগীরা অক্সিজেনের অভাবে মারা গেলেন। এর আগে গুরুগ্রামে তিনজন ও রেওয়ারিতে চারজন অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন।
দিল্লির পরিস্থিতি এখনো খুব খারাপ। তাই দিল্লিতে লকডাউন আরো সাতদিন বাড়ানো হয়েছে। দিল্লির চারদিকে করোনার থাবা। ওষুধের দোকান, মুদিখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কর্মীরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর। ওষুধের দোকানে অনেক ওষুধই পাওয়া যাচ্ছে না। গার্গল করার ওষুধও উধাও। মানুষ পাগলের মতো অক্সিজেন ও হাসপাতালের বেডের খোঁজ করছেন। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ, দুই দিন আগে দিল্লির একটি হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে ২০ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভারতকে পুরো ঝাঁকিয়ে দিয়েছে। পুরো ভারত এখন করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ঘোষণা করেছেন, দিল্লিতে ১৮ বছরের বেশি সকলকে বিনা মূল্যে পয়সায় করোনার টিকা দেয়া হবে।
মাদ্রাজ হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ
মাদ্রাজ হাইকোর্টর পর্যবেক্ষণ, এখন ভারতের করোনার এই বাড়বাড়ন্তের কারণ, নির্বাচন কমিশন। তারা ভোট করেছে বলে পরিস্থিতি এই জায়গায় দাঁড়িয়েছে। এখন সব চেয়ে বড় বিষয় মানুষের বেঁচে থাকা ও সুস্থ থাকা। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা করা যেতে পারে বলে বিচারপতিদের মত। যদি ঠিকভাবে ব্লুপ্রিন্ট জমা দেয়া না হয়, তাহলে ভোটগণনা বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও হাইকোর্ট জানিয়েছে। কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী জানিয়েছেন, হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ একেবারে ঠিক।
সাহায্যের হাত
ভারতের এই অবস্থায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিভিন্ন দেশ। যুক্তরাজ্য প্রচুর অক্সিজেন কনসেনট্রেটর এবং ভেন্টিলেটার পাঠিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, ভারতকে সবরকম সাহায্য করবে যুক্তরাজ্য।
ইইউ-ও সব ধরনের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস বলেছেন, জার্মানি ভারতকে অক্সিজেন ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠাবে। মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেনা বাহিনীকে আরো অক্সিজেন তৈরি করতে এবং তা ভারতে পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে।
ইইউ-র বাকি দেশগুলিও ভারতকে সাহায্য করার কথা জানিয়েছে।
বাইডেনের আশ্বাস
অ্যামেরিকার কাছ থেকে গত কয়েক দিন ধরেই টিকা তৈরির কাঁচামাল চাইছে ভারত। ভারতের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে অন্য দেশগুলি সাহায্য করলেও অ্যামেরিকা এতদিন কিছুই বলেনি। ফলে বাইডেন এবং হ্যারিস, ভারতে তো বটেই, নিজের দেশেও সমালোচিত হয়েছেন। নিজের দলের নেতারাও তাদের সমালোচনা করছিলেন।
অবশেষে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, তারা ভারতের পাশে থাকবেন। বাইডেন জানিয়েছেন, যেভাবে ভারত অ্যামেরিকাকে সাহায্য করেছিল, সেভাবেই তারা নয়াদিল্লির পাশে দাঁড়াবেন। হ্যারিস বলেছেন, ভারতকে সব ধরনের সাহায্য করা হবে।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, রয়টার্স, এপি)