1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা বৃদ্ধিতে কতটা দায়ী নির্বাচন

২৪ এপ্রিল ২০২১

করোনায় ত্রস্ত পশ্চিমবঙ্গ৷ এরই মধ্যে বাকি দুই দফা নির্বাচন৷ সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য অনেকে আঙুল তুলছেন নির্বাচন কমিশনের দিকে৷ প্রশ্ন, কেন তারা আগেভাগে কড়া ব্যবস্থা নিল না?

https://p.dw.com/p/3sWC1
Indien Kolkata Wahlen Coronapandemie
ছবি: Payel Samanta/DW

২৯৪ কেন্দ্রে আট দফায় নির্বাচন শুরু হয়েছে ২৬ মার্চ৷ শেষ হবে ২৯ এপ্রিল৷ নির্বাচনী প্রচার যখন পুরোমাত্রায় চলছে, হচ্ছে মিটিং-মিছিল, সেই সময় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গে৷ এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কোভিড সংক্রমণের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী৷ রাজ্যের দৈনিক সংক্রমণ ১৩ হাজারের আশেপাশে, যা গত বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি৷ এই পরিস্থিতিতে রাজনীতিবিদদের একাংশ থেকে চিকিৎসক কিংবা পর্যবেক্ষকরা আঙুল তুলছেন নির্বাচন কমিশনের দিকে৷ তাঁদের বক্তব্য, আগে থেকে সতর্ক হলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না৷

২৬ ও ২৯ এপ্রিল শেষ দুই দফার ভোটে ৭১ কেন্দ্রে নির্বাচন হবে৷ তার আগেই কমিশন মিছিল, পদযাত্রা, বাইক মিছিল, রোড শো-য় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷ সমাবেশের অনুমতি থাকলেও ৫০০-র বেশি মানুষের জমায়েত করা যাবে না৷ তবে এই সংক্রান্ত কমিশনের নির্দেশিকা জারি হয়েছে গত বৃহস্পতিবার, কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণের পর৷ সেদিন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণনের বেঞ্চ করোনা পরিস্থিতিতে নির্বাচন পরিচালনায় কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে৷ শুক্রবার কমিশন আদালতে হলফনামা দিয়ে জানায়, তারা কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে৷

নির্বাচন কমিশন ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণার আগেই রাজ্যে নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছিল৷ সেই সময় করোনা সংক্রমণ ছিল অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত৷ যদিও চিকিৎসকরা বারবার সেকেন্ড ওয়েভ নিয়ে সতর্ক করছিলেন৷ এমনকী মহারাষ্ট্রে দ্বিতীয় ঢেউ দেখা গেলেও, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে লাগাম টানার ক্ষেত্রে কমিশন হাত গুটিয়ে ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে৷ চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, ডাক্তার কৌশিক চাকি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা কমিশনকে পাঁচটা চিঠি দিয়েছি৷ বলেছি, এভাবে প্রচার চলতে থাকলে সর্বনাশ হবে৷ রাজনৈতিক দলগুলিকেও চিঠি দিয়েছি৷ কিন্তু কেউ আমাদের কথায় কান দেয়নি৷ এখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে৷''



রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বার বার প্রশ্ন তুলেছে, কেন আট দফায় পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন হবে৷ যত বেশি সময় ধরে ভোটগ্রহণ চলবে, তত বেশি মিছিল-সমাবেশ হবে৷ তার জেরে বাড়বে সংক্রমণের আশঙ্কা৷ এখনকার পরিস্থিতির জন্য তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আঙুল তুলেছেন কমিশনের দিকে৷ যদিও তারা প্রচার কর্মসূচি সমান তালেই চালিয়ে গিয়েছে৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে এত হিংসা হয় না যে আট দফায় নির্বাচন করতে হবে৷ বিশেষ করে যখন একটা অতিমারির মধ্যে আমরা রয়েছি৷ প্রচারে রাশ টানার ব্যাপারেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আদালত হস্তক্ষেপ না করা পর্যন্ত৷''

‘‘প্রচারে রাশ টানার ব্যাপারেও কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি’’: উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়



যদিও রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির দাবি, সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে প্রচারের সম্পর্ক নেই৷ দলের শীর্ষ নেতা অমিত শাহ জনসভায় বলেছেন, ‘‘মহারাষ্ট্রে নির্বাচন হচ্ছে না, সেখানে এত সংক্রমণ কেন?'' এর জবাবে ডাক্তার চাকি বলেন, ‘‘সংক্রমণ এক জায়গা থেকে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে৷ মহারাষ্ট্রের নাসিকে যেটা দেখা গিয়েছে, সেটা বাংলায় এসেছে আমাদের লাগামছাড়া আচরণের ফলে৷ গত বছরও একই ঘটনা ঘটেছিল৷'' উদয়নের মতে, ‘‘একটাই দেশ৷ বিভিন্ন রাজ্য থেকে নেতারা আসছেন প্রচারে৷ ফলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বেই৷ মার্চে বাংলা ও ওড়িশা সংক্রমণের নিরিখে এক বিন্দুতে ছিল৷ কিন্তু নির্বাচনের জন্য আমরা এখন সঙ্কটে৷ ওড়িশায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে৷''

শুধু প্রচার নয়, অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না৷ গা ঘেঁষাঘেঁষি করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছেন ভোটাররা, কমিশন বুথে গ্লাভস ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখলেও সর্বত্র তা ব্যবহৃত হচ্ছে না৷ এখন নির্বাচনের শেষের প্রহরে প্রচারে লাগাম টানতে তৎপর কমিশন৷ কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে৷ কোভিড বিধি ভঙ্গের জন্য ১৩ জন প্রার্থী-নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে৷ শো-কজ করা হয়েছে ৩৩ জন প্রা্র্থী-নেতা-প্রচারকের বিরুদ্ধে৷ সূত্রের খবর, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের৷ অতিমারী আইন অনুযায়ী তাদেরই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা৷ কিন্তু সংক্রমণে দিশাহারা মানুষ প্রশ্ন তুলছে, আইনের তোয়াক্কা না করে যেভাবে কোভিড বিধি ভাঙা হল, তার বিচার কে করবে?

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷