ঐতিহাসিক জয় চান মামুনুল
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ভারতের আইএফএ শিল্ডে ফাইনালের আগেই কিছু ইতিহাস গড়ে ফেলেছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব৷ শুরুটা হয়েছিল পরাজয় দিয়ে৷ ফাইনালের প্রতিপক্ষ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কাছেই হেরেছিল তারা৷ ফাইনালের আগের দিন প্র্যাকটিসে যাবার আগে ডয়চে ভেলেকে দেয়া এ সাক্ষাৎকারে মামুনুল জানান, মোহামেডানের সঙ্গে হারার পর খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে কেঁদে ফেলেছিলেন ক্লাব সভাপতি মঞ্জুর কাদের৷ তাঁর আবেগ ছুঁয়ে যায় খেলোয়াড়দের৷ দেশ এবং ক্লাবের মর্যাদা রক্ষার প্রতিজ্ঞা নিয়ে তারপর থেকে মাঠে নামে অন্য চেহারার শেখ জামাল ক্লাব৷ শুরু হয় ইতিহাস গড়ার পথ ধরে এগিয়ে চলা৷ বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্লাব হিসেবে ফাইনালে উঠেছে শেখ জামাল৷ এর আগে সেই ১৯৯৫ সালে ফাইনালে উঠেছিল ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব৷ ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে সেবার রানার্স আপ ট্রফি নিয়েই ফিরতে হয়েছিল তাদের৷ সেই ইস্টবেঙ্গলকেই সেমিফাইনালে ৩-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পায় শেখ জামাল৷ এর আগে বাংলাদেশের কোনো ফুটবল দল ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে পারেনি৷ শনিবার বাংলাদেশের ফুটবলে অল্প সময়েই বেশ সাড়া জাগানো দল শেখ জামালের সামনে থাকছে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আরো বড় ইতিহাস গড়ার সুযোগ৷ মামুনুল, এমেকা, ওয়েডসন, সনি নর্দে, মুন্নারা পারবেন তো? অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম খুব আত্মবিশ্বাসী৷ বলেছেন, ‘‘আমরা ঐতিহাসিক একটি জয় নিয়েই দেশে ফিরতে চাই৷''
ভারত যখন ব্রিটিশ উপনিবেশের অংশ তখন থেকেই কলকাতা মোহামেডান এ অঞ্চলের ফুটবলে সাড়া জাগানো নাম৷ ‘জাদুকর সামাদ'-এর পায়ের জাদুতে সে আমলে অনেক সাফল্য পেয়েছে ক্লাবটি৷ তারপরও দীর্ঘদিন দেশে দাপট দেখালেও গত কয়েক বছর ধরে সাফল্যের তীব্র খরা শুরু হয়েছিল৷ হালে আবার যেন জেগে উঠেছে ক্লাবটি৷ এবার আইএফএ শিল্ড শুরুও করেছে শেখ জামালকে হারিয়ে ট্রফি জয়ের আশা উজ্জ্বল করে৷
মামুনুল মনে করেন, যুবভারতীতে প্রথমবারের মতো টার্ফে খেলা ওই ম্যাচ ফাইনালে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করবে না৷ তাঁর মতে, সেই ম্যাচের পর থেকে টার্ফে খেলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে গোটা দল, ছোটখাট ভুলত্রুটিগুলো শুধরে নিয়ে দৃষ্টিনন্দন ফুটবল উপহার দিয়ে ফাইনালে উঠেছে, এখন শেখ জামাল আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে, সুতরাং জয় ছাড়া অন্য কিছুর কথা ভাবা অমূলক৷
এ কথা শুধু মামুনুলই বা বলবেন কেন? প্রথম ম্যাচের পরাজয়ের ধাক্কা সামলে যেভাবে কলকাতার বড় দুই ক্লাব মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলকে নাস্তানাবুদ করে ধানমন্ডির ক্লাবটি ফাইনালে উঠেছে তাতে কলকাতার ফুটবলামোদীরাও তো মুগ্ধ৷ এ সাক্ষাৎকারেই মামুনুল জানিয়েছেন, কলকাতা শহরে কোনো কাজে বেরোলে কিভাবে সাধারণ মানুষ তাঁদের উৎসাহিত করেন৷ ফাইনালের দু'দিন আগেও নাকি এক কলকাতাবাসী জড়িয়ে ধরে বলেছেন, ‘‘দাদা, চ্যাম্পিয়ন হতে হবে৷''
বাংলাদেশের ফুটবলানুরাগী প্রতিটি মানুষই এ আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে শেখ জামাল ক্লাবের দিকে৷ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারিতেও সমর্থকের অভাব হবে না তাদের৷ মামুনুল জানিয়েছেন, অভিনেত্রী মুনমুন সেন, রাইমা সেনরাও নাকি মাঠে এসে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন তাঁদের৷ সেমিফাইনালে পাসিং ফুটবলের পসরা সাজিয়ে ৩০ বারের চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গলকে উড়িয়ে দেয়ার পর গ্যালারিতে সমর্থক অনেক বেড়ে যাওয়ার কথা৷
অবশ্য সমর্থকদের সরব উপস্থিতি উজ্জীবিত করলেও মাঠের খেলাটাই শেষ পর্যন্ত আসল কথা৷ দিদারুল, ইয়ামিন, মুন্না, সোহেল, নাসির, লিঙ্কন, ইয়াসিন, মামুনুল, সনি, ওয়েডসন, এমেকারা তো ফর্মেই আছেন৷ চোটের কারণে সেমিফাইনাল খেলতে না পারা গোলরক্ষক জিয়াউরও দলে ফিরছেন৷ অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম জানালেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জয় ছিনিয়ে নিয়ে দেশবাসীকে আবার উৎসবে মাতাতে চান তাঁরা, ‘‘ফাইনালে ৯০ মিনিট ড্র থাকলে ম্যাচ গড়াবে অতিরিক্ত সময়ে, তারপরও গোল না হলে টাইব্রেকার৷ আমরা ৯০ মিনিটের মধ্যেই খেলা শেষ করে দেশের ১৭ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই৷''