ইউক্রেনকে একশ কোটি ইউরোর সামরিক সাহায্য
২৪ মার্চ ২০২২ইউক্রেনের দিকে আরো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অ্যামেরিকা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রাশিয়ার এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, অ্যামেরিকা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠানোর জন্য জাহাজে তোলা হয়েছে। তবে সেই প্যাকেজে কী কী অস্ত্র আছে, তা তিনি জানাতে পারেননি। বস্তুত, কিছুদিন আগেই অ্যামেরিকা জানিয়েছিল, ইউক্রেনকে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সাহায্য দেওয়া হবে। এই প্রথম সেই অর্থে কেনা অস্ত্রের প্যাকেজ জাহাজে তোলা হলো।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউক্রেনকে সাহায্যের পরিমাণ বাড়ানো হবে। আগে ৫০০ মিলিয়ন ইউরোর সামরিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। এবার সিদ্ধান্ত হয়েছে, ১ বিলিয়ন ইউরোর সামরিক সাহায্য করা হবে। ইতিমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিপুল পরিমাণ প্রতিরক্ষার অস্ত্র ইউক্রেনে পাঠিয়েছে।
ন্যাটোর বৈঠক
বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে বসবে ন্যাটোর জরুরি বৈঠক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য ব্রাসেলস পৌঁছে গেছেন। বৃহস্পতিবার ন্যাটোর বৈঠকের পর তিনি জি ৭ এর বৈঠকে যোগ দেবেন। এরপর তার পোল্যান্ড যাওয়ার কথা। সেখানে সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে তার আলোচনা করার কথা পোল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে।
ন্যাটোর বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ। পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সেনা দ্বিগুণ করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এদিনের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হওয়ার কথা। শুধু তাই নয়, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া এবং রোমানিয়ায় চারটি নতুন সেনার ট্রুপ পাঠানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘেও একটি জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। ইউক্রেনের তোলা একটি প্রস্তাব নিয়ে সাধারণ পরিষদে আলোচনা হওয়ার কথা। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে রাশিয়াকে 'যুদ্ধ' বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘের প্রধান ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভোটাভুটির মাধ্যমে বৃহস্পতিবারই প্রস্তাবটি পাশ করানো হতে পারে।
এর আগে ইউক্রেন নিয়ে একাধিক প্রস্তাব পেশ করেছে জাতিসংঘ। শেষ ভোটাভুটিতে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট পড়েছিল ১৪১টি। বিপক্ষে ভোট পড়েছিল পাঁচটি, যার মধ্যে রাশিয়াও ছিল। ভোট দেয়নি ভারত বাংলাদেশ-সহ ৩৫টি দেশ। মনে করা হচ্ছে, এদিনের প্রস্তাবটিও বিপুল ভোটে পাশ হয়ে যাবে। কিন্তু জাতিসংঘ প্রস্তাব পাশ করলেই রাশিয়া লড়াই বন্ধ করবে, এমন মনে করার কারণ নেই।
রাশিয়ার ক্ষতি
ন্যাটোর দাবি, এখনো পর্যন্ত ইউক্রেনে সাত থেকে ১৫ হাজার রাশিয়ার সৈন্যের মৃত্যু হয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা লড়াইয়ের মানসিকতা ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে। তাদের বক্তব্য, কিয়েভে রাশিয়ার সেনাকে ইউক্রেনের যোদ্ধারা ঘিরে ফেলেছে। তবে এই তথ্য ঠিক কি না, তা যাচাই করা যায়নি। অন্যদিকে মারিউপলে রাশিয়ার আক্রমণ জারি আছে। লাগাতার সেখানে বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে। মারিউপল থেকে পালিয়ে আসা এক ব্যক্তি বিবিসিকে জানিয়েছেন, শহরে আর প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই। কিন্তু বন্দরের বিশেষ ক্ষতি হয়নি। সাম্প্রতিক উপগ্রহ চিত্রেও দেখা গেছে, মারিউপলের বন্দর অক্ষত আছে।
রাশিয়ার সেনা ক্রাইমিয়া হয়ে মারিউপলের মধ্য দিয়ে পূর্ব ইউক্রেন দখল করতে চাইছিল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। কিন্তু মারিউপলে তাদের প্রথম প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। মারিউপল ধ্বংস হয়ে গেলেও এখনো সেখানে ক্রমাগত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনের সেনা এবং সাধারণ মানুষ।
চীনকে হুমকি
রাশিয়ার উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা থাকার সুযোগ চীন নিতে পারে বলে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের ধারণা। রাশিয়ার সঙ্গে তারা ব্যাক চ্যানেলে ব্যবসার পরিকল্পনা করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার এই বিষয়ে চীনকে হুমকি দিয়েছে অ্যামেরিকা। হোয়াইট হাউসে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেছেন, চীন যদি সুয়োগ ব্যবহারের চেষ্টা করে, তাহলে তার জন্য বড়রকমের দাম দিতে হবে তাদের। অ্যামেরিকা এর আগে অভিযোগ করেছিল, বাইরে নিরপেক্ষতা দেখালেও ভিতরে ভিতরে রাশিয়াকে সাহায্য করছে চীন। এমনকী তাদের অস্ত্রও দেওয়া হচ্ছে। যদিও চীন এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছিল।
পরমাণু সতর্কতা
রাশিয়ার স্পেস এজেন্সির রসকসমসের প্রধান বলেছেন, রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্রের যে ভান্ডার আছে, তার সাহায্যে যে কোনো শত্রুকে মুহূর্তে খতম করে দেওয়া সম্ভব। টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, ''যে কোনো দেশ বা দল যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসন দেখায়, তা হলে কয়েক মিনিটে তাকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাশিয়ার আছে। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে তারা হামলা চালাতে পারে।''
বস্তুত, মার্কিন গোয়েন্দারা আগেই জানিয়েছিলেন, যে কোনো সময় রাশিয়া পরমাণু হামলার কথাও ভাবতে পারে। রাশিয়া তা করলে অ্যামেরিকা কীভাবে তার উত্তর দেবে, তা নিয়ে গোপনে অ্যামেরিকা কুচকাওয়াজ শুরু করে দিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনের আশপাশে আরো কোনো দেশেও আক্রমণ চালাতে পারে বলে মনে করছেন মার্কিন গোয়েন্দারা।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি, বিবিসি)