ইউরোপের প্রতিরক্ষা জোরালো করতে ইইউর ঝটিকা বাহিনী
২২ মার্চ ২০২২ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলি এতকাল মূলত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে অভিন্ন নীতি গ্রহণ করার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে৷ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের উদ্যোগ সত্ত্বেও সাহসী পদক্ষেপের জন্য ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় নি৷ কিন্তু ইউরোপের দোরগোড়ায় ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা এই রাষ্ট্রজোটকে নাড়িয়ে দিয়েছে৷ সোমবার ইইউ পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা তাই এক ‘ব়্যাপিড রেসপন্স ফোর্স’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ ২০২৫ সালের মধ্যে এই ঝটিকা বাহিনী প্রস্তুত করার অঙ্গীকার করছে ইইউ সদস্য দেশগুলি৷ ২০০৭ সাল থেকে যে যুদ্ধকালীন ইউনিট চালু আছে, সেগুলির বদলে এই বাহিনী গঠন করা হবে৷ আফগানিস্তান থেকে তড়িঘড়ি করে সেনা প্রত্যাহারের পরেই ইউরোপের কিছু দেশ এমন উদ্যোগ শুরু করেছিল৷ বৃহস্পতি ও শুক্রবার ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাহিনীর ছাড়পত্র দেওয়া হবে৷
ইউরোপের অনেক দেশ সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হলেও কিছু ইইউ রাষ্ট্র সেই কাঠামোর বাইরে রয়েছে৷ অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ডের মতো দেশ বরং নিরপেক্ষ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছে৷ ফলে আক্রান্ত হলেও ন্যাটোর হস্তক্ষেপের আশা করতে পারে না এই দেশগুলি৷ এবার নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে এমন সাহসি পদক্ষেপ নিয়ে সেই দুর্বলতা দূর করতে চায় ইইউ৷ এর আওতায় প্রায় ৫,০০০ সৈন্য সংকটের সময় দ্রুত মোতায়েন করা যাবে৷ ২০২৩ সালেই প্রথম সামরিক মহড়া চালানোর লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে৷
জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টিনে লামব্রেশট জার্মান সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশেষ ইউনিট গঠন করে ইইউ ঝটিকা বাহিনীর সূচনা করতে চান৷ ইইউ-র পররাষ্ট্র বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা জোসেপ বরেল বলেন, এমন বাহিনী গঠনের উদ্যোগ শুরু করার সময় ভাবা যায় নি, যে পরিস্থিতির এতটা অবনতি ঘটবে৷ এখন যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষমতা বিবেচনা করতে হচ্ছে৷ বরেল আরো মনে করিয়ে দেন যে, হুমকি বেড়েই চলেছে৷ এ অবস্থায় হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে তার মূল্য চোকাতে হবে৷ উল্লেখ্য, রাশিয়ার হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি সপ্তাহে ইউরোপে ইইউ ও ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ জি-সেভেন দেশগুলিও আলোচনায় বসছে৷ ভবিষ্যৎ ঝটিকা বাহিনী ন্যাটোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার বদলে সম্পূরক হিসেবে কাজ করবে বলে জানিয়েছে ইইউ৷
সামরিক প্রস্তুতি ছাড়াও রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপের জন্য চাপ বাড়াচ্ছে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি৷ জ্বালানি আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করার পাশাপাশি সে দেশের বিরুদ্ধে আরও জোরালো নিষেধাজ্ঞার দাবি জানাচ্ছে ইউরোপের একাধিক দেশ৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদোমির জেলেনস্কি জার্মানির উদ্দেশ্যে রাশিয়ার গ্যাস ও অন্যান্য পণ্য বর্জন করার ডাক দিয়েছেন৷ তার মতে, জার্মানির সঙ্গে বাণিজ্য, জার্মান কোম্পানি ও ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হলে রাশিয়ার হাতে যুদ্ধের জন্য আর কোনো অর্থ থাকবে না৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক জানিয়েছেন, যে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কমাতে জোরালো তৎপরতা চলছে৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, রয়টার্স)