ইউক্রেন যুদ্ধ জার্মানদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে
২২ মার্চ ২০২২জার্মানিতে অনেকের মধ্যে সংকটের আশঙ্কা ক্রমশ বাড়ছে৷ সুপারমার্কেটে তেল, পাস্তা আর ময়দার মতো ভোজ্যপণ্যের তাকগুলো ইতোমধ্যে খালি হয়ে গেছে৷ পরিস্থিতি অনেকটা করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকের মতো৷ তখন টয়লেট পেপারের সংকট সৃষ্টি হয়েছিল, এখন সূর্যমুখী তেলের৷
জার্মানিতে তেলের বীজ প্রক্রিয়াজাত করা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ওভিড জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহ বা মাসে সংঘাতময় অঞ্চল থেকে সূর্যমুখী, শণ এবং সয়া আসতে বিঘ্ন ঘটতে পারে৷ জার্মানি এসবের চাহিদার ৯৪ শতাংশই আমদানি করে৷
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এক জরিপে অংশ নেয়া এক হাজার জার্মানের মধ্যে ৬৯ শতাংশই মনে করেন, ন্যাটো এবং তার ফলশ্রুতিতে জার্মানির সামরিক বাহিনীকে ইউক্রেন যুদ্ধে জড়ানো হতে পারে৷ আরেক জরিপে অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ মানুষই ধারণা করছেন যে, যুদ্ধের প্রভাব জার্মানির উপরেও পড়বে৷ জরিপে অংশ নেয়া ৬৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, ইউরোপের কেন্দ্রের দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটবে৷
শঙ্কা কমাতে ফোনালাপ
যুদ্ধ নিয়ে উদ্বিগ্ন জার্মানরা একটি নম্বরে ফোন করে কাউন্সেলিংয়ে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন৷ কোলনের ফোন কাউন্সেলিং সার্ভিসের ক্রিস্টিনে জাজাকভস্কি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যুদ্ধ নিয়ে খোঁজখবর নেয়ার হার খুবই বাড়ছে৷ প্রতি পাঁচটি কলের একটি যুদ্ধ সম্পর্কিত৷ অনেকের ভয় হচ্ছে যে, এই সংঘাত সীমান্ত অতিক্রম করে জার্মানিতেও পৌঁছে যাবে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘অনেক মানুষ আশঙ্কা করছেন তাদের পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুরা মারা যেতে পারেন৷ তাদের নিজেদের বাড়িতে বোমা পড়তে পারে, যেমনটা তারা গণমাধ্যমাধ্যমে ইউক্রেনে দেখছেন৷’’
টেলিফোন কাউন্সিলর জাজাকভস্কি মনে করেন, মানুষ যে কল করে তাদের উদ্বেগ এবং ভয়ঙ্করতম কল্পনার কথা জানাচ্ছেন, তা এক দিক থেকে ইতিবাচক ব্যাপার৷
যুদ্ধমুক্ত এবং শান্তিপূর্ণ ইউরোপে বড় হওয়া তরুণ প্রজন্ম তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ক্রমশ শঙ্কার মধ্যে পড়ছেন৷ আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা দেখা প্রজন্মের মাঝে তাদের অন্তরের ভেতর গেঁথে থাকা ভয়, আতঙ্ক আবার ফিরে আসছে৷
ইভাংগেলিশে কিরশেনক্রাইস ন্যয়েকোলন নামের একটি খ্রিষ্টধর্মীয় সংগঠনের টোমাস ডে ভাখরয় বলেন, ‘‘এই প্রজন্ম শান্তিপূর্ণ সময়ে যুদ্ধের স্মৃতি ভুলে ছিল, কিন্তু এখন তা আবার উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করেছে৷’’
তার সংগঠন হাউস ব্রিৎস নামের একটি স্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে, যেখানে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ জার্মান বসবাস করেন৷ ডে ভাখরয় বলেন, ‘‘তারা এই ভাবনা থেকে অত্যন্ত ভয় পাচ্ছেন যে, একসময় রেড লাইন ক্রস হয়ে যাবে এবং ন্যাটো হস্তক্ষেপ করবে৷ তখন সবকিছু আরো খারাপ হয়ে যাবে৷ আমিও এখন বিষয়টি এভাবেই ভাবছি৷’’
তবে বয়োজ্যেষ্ঠরা নিজেদের চেয়ে তাদের সন্তান এবং নাতি-নাতনীর ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন বলে মনে করেন ডে ভাখরয়৷ কেননা, এই প্রজন্ম যে অতীত পার করে এসেছেন, তা নতুন প্রজন্ম করতে পারবে না বলেই আশঙ্কা তাদের৷
নানা প্রস্তুতি
সম্ভাব্য যুদ্ধ এবং পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা থেকে বাঁচতে নানা রকম প্রস্তুতিও শুরু করেছেন জার্মানরা৷ ইন্টারনেটে অনেকেই তাদের জরুরি পরিস্থিতির জন্য গোছানো ব্যাগের ছবি প্রকাশ করেছেন৷ কেউ কেউ তেজস্ক্রিয়তা থেকে বাঁচতে আয়োডিন ট্যাবলেট কিনছেন, কেউ বা জরুরি অবস্থার জন্য পাওয়ার জেনারেটর কিনে রাখছেন৷ অনেকে জরুরি পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে কী কী করতে হবে তা নিয়ে ইউটিউবে ভিডিও প্রকাশ করছেন৷
আর ভয় ব্যবসার জন্য ভালো৷ বার্লিনকেন্দ্রিক ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সংস্থা বিএসএসডি জানিয়েছে, তাদের ওয়েবসাইটে আগে সাধারণত দিনে একশ থেকে তিনশ ক্লিক পড়তো৷ এখন তা বেড়ে দশ হাজারে পৌঁছেছে৷ অনেকেই স্টিলের এক ধরনের বিশেষ রুমের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন, যেখানে জরুরি পরিস্থিতিতে থাকা যায়৷ বাড়ির নীচের তলায় বা গ্যারেজে রাখা যায় এই রুম৷ এগুলোর দাম কয়েক লাখ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে৷
এদিকে, এই শঙ্কাও রয়েছে যে, ক্রেমলিন সাইবার হামলা চালিয়ে জার্মানির জ্বালানি এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ধসিয়ে দিতে পারে৷ খোদ জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসারও এমন আশঙ্কা করেছেন৷ তবে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে৷
রাল্ফ ব্যোসেন/এআই