জার্মানিতে জ্বালানির লাভের টাকা যাচ্ছে কার পকেটে?
২১ মার্চ ২০২২ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জার্মানিতে পেট্রোলের দামও বেড়েছে৷ রোববার প্রতি লিটার পেট্রোল ২.১৩ ইউরো বা ২০৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে৷ অর্থাৎ প্রথমবারের মতো জার্মানিতে সরকারের ভর্তুকি সত্ত্বেও পেট্রোলের চেয়ে ডিজেল বেশি দামে বিক্রি হয়েছে৷
যুদ্ধ শুরুর আগে প্রতি ব্যারেল অশোধিত ব্রেন্ট তেলের দাম ছিল ৮৫ ইউরো৷ এক সপ্তাহ পর সেটা ক্রমে বেড়ে ১১৫ ইউরো হয়েছিল৷ এরপর আবার দাম কমে সোমবার সেটা প্রায় সাড়ে ১০১ ইউরো হয়েছে৷
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যুদ্ধ শুরুর পর অশোধিত তেলের দাম বাড়লেও এখন আবার কমছে৷ কিন্তু গ্যাস স্টেশনগুলোতে পেট্রোল ও ডিজেল এখনও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে৷ কিন্তু কেন?
পেট্রোল পাম্পে পেট্রোল বা ডিজেল কিনতে একজন ক্রেতা যে দাম দেন সেটা পাঁচজনের মধ্যে ভাগ হয় - তেল কোম্পানি, সরবরাহকারী, তেল শোধনাগার, পেট্রোল পাম্পের মালিক ও সরকার৷
পেট্রোল বা ডিজেলের প্রকৃত মূল্য আসলে ক্রেতা যে দামে কিনছেন তার অর্ধেকের বেশি৷ অশোধিত তেল কেনা, সেটা পরিবহণ করা, আরও প্রক্রিয়াজাত করা, কোথাও জমা রাখা, প্রশাসনিক কাজ এবং বিতরণ করা - এর মধ্যে পড়ে৷ এর সঙ্গে যুক্ত হয় তেল কোম্পানির দেয়া কার্বন ডাই অক্সাইড কর এবং তাদের লাভ৷
পেট্রোল ও ডিজেল বিক্রির টাকার একটা বড় অংশ সরকারও পেয়ে থাকে৷ ডিজেল বিক্রির ৩৯ শতাংশ এবং পেট্রোল বিক্রির ৪৮ শতাংশ পায় সরকার৷ এবং এই হারটা নির্ধারিত৷ তাই জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি থেকে সরকারের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম৷
মূল্য সংযোজন করটাও শতকরা হারে গণনা করা হয়৷
পেট্রোল পাম্পের মালিকরাও যে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি থেকে লাভবান হচ্ছেন তা মনে করেন না জার্মানির কিল ইন্সটিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির ইয়েন্স বোইজেন-হোগ্রেফে৷ তিনি বলেন, ‘‘জ্বালানির দাম বেশি হওয়ায় পেট্রোল পাম্পের যে ক্রেতারা আগে জ্বালানির পাশাপাশি হয়ত একটা ক্যান্ডি বারও কিনতেন, এখন সেটা কিনবেন না৷'' ফলে তেল বেঁচে মালিকরা যে টাকাটা বেশি পেতেন, অন্য খাতে বিক্রি কমে যাওয়ায় সব মিলিয়ে লাভটা খুব বেশি হবে না বলে মনে করেন বোইজেন-হোগ্রেফে৷জার্মানির বাজারে তেল, চাল, গমের সংকট
জার্মানি তার প্রয়োজনের অশোধিত তেলের পুরোটা রাশিয়া থেকে কেনে৷ ৪১ শতাংশ ডিজেলও কেনে রাশিয়া থেকে৷ কিন্তু জার্মানিতে জ্বালানির দাম বাড়ার সুফল রাশিয়ার পাওয়ার সম্ভাবনাও কম বলে মনে করেন জার্মানির জ্বালানি বিষয়ক অর্থনীতিবিদ মানুয়েল ফ্রন্ডেল৷ ‘‘রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিটা দীর্ঘমেয়াদি৷ ফলে চুক্তিতে যে দাম উল্লেখ করা আছে সেটাই রাশিয়া পাচ্ছে,'' বলেন তিনি৷
তাহলে এখন তেল শোধনাগার কোম্পানিগুলো বাকি থাকল৷ তাদের পকেট কি ভারী হচ্ছে? জার্মান অর্থনীতিবিদ ইয়ুস্টুস হাওকাপ মনে করছেন, পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বাড়ার পেছনে তাদের হাত থাকতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে এই আশঙ্কায় শোধনাগার কোম্পানিগুলো হয়ত (দাম বাড়িয়ে) সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে৷''
দাম বৃদ্ধিতে শোধনাগার কোম্পানিগুলোর দায় আছে কিনা তা তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন জার্মানির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী রোব্যার্ট হাবেক৷
তাতিয়ানা শোয়াইৎসার/জেডএইচ