ট্রেনের মালিক হলেন কৃষক
২৫ মার্চ ২০১৭সম্পূরণ সিং নামে পাঞ্জাবের লুধিয়ানার কৃষক, বছর ৪৫-এর সম্পূরণ সিংহ৷ এক সাধারণ কৃষক স্থানীয় অঞ্চলে নতুন লাইন পাতার জন্য নিজের জমির কিছুটা অংশ ভারতীয় রেল কর্তৃক্ষকে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু যথাযথ ক্ষতিপূরণ পাননি৷ এই অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সম্পূরণ৷ ২০১৫ সাল থেকে মামলা লড়ছিলেন৷ প্রথমবার সেই মামলায় জয় হয় ওই কৃষকের৷ আদালত নির্দেশ দিলেও রেলের কাছ থেকে এক পয়সাও ক্ষতিপূরণ পাননি সম্পূরণ৷ বাধ্য হয়ে ফের কোর্টে যান তিনি৷ ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিচারপতি যশপাল ভার্মা একটি এক্সপ্রেস ট্রেন সম্পূরণকে দিয়ে দেন৷ তবে ট্রেনের মালিক না হয় হওয়া গেল, এখন ওই ট্রেন নিয়ে কী করবেন? আস্ত ট্রেন তো আর মাথায় করে বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে না! লুধিয়ানার কৃষকটি মনে করছেন, আদালতের এই নজিরবিহীন রায়ের ধাক্কায় রেল এ বার তাঁর ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে বাধ্য হবে ভারতীয় রেল৷
আদালতের এই রায় শুনে ভারতের যে কোনো নাগরিকের চক্ষু চড়ক গাছ হওয়ার জোগাড়৷ উত্তর রেলের আস্ত একটা এক্সপ্রেস ট্রেনকেই ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই কৃষককে দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন লুধিয়ানার অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা আদালত৷ বিচারক জসপাল বর্মার নির্দেশে ১২০৩০ নম্বর স্বর্ণ শতাব্দী এক্সপ্রেসকে ক্ষতিপূরণের সম্পত্তি হিসেবে অ্যাটাচ করে নেওয়া হয়৷ অর্থাৎ সম্পূরণ সিংহই এখন কার্যত ট্রেনটির মালিক৷ এই স্বর্ণ শতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেনটি অমৃতসর এবং নতুন দিল্লির মধ্যে চলাচল করে৷ সম্পূরণের আইনজীবী রাকেশ গান্ধি জানিয়েছেন, ‘‘ক্ষতিপূরণ আদায়ে কোর্টে ঘুরতে ঘুরতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম৷ আদালত আমাদের সেই টাকা উসুল করতে রেলের কোনো সম্পত্তি বেছে নিতে বলে৷'' ওই এক্সেপ্রেস ট্রেনের পাশাপাশি, ট্রেনটির যেখান দিয়ে যাওয়ার কথা, সেই লুধিয়ানা স্টেশনের স্টেশন মাস্টারের অফিসের দখলও সম্পূরণ সিংকে দিয়ে দেওয়া হয়৷
লুধিয়ানা আদালত সূত্রের খবর, ২০০৭ সালের লুধিয়ানা-চণ্ডীগড় রেললাইনের জন্য জমি অধিগৃহীত হয়৷ তার মধ্যে ছিল সম্পূরণ সিংহের জমিও৷ জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪২ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন সম্পূরণ৷ কিন্তু ২০১৫ সালে আদালত ভারতের উত্তর রেলওয়েকে বকেয়া ১ দশমিক ০৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলে৷ কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ সেই টাকা দেয়নি৷ তার পরেই এই চমকে দেওয়া রায়৷ শুধু স্বর্ণ শতাব্দী এক্সপ্রেসই নয়, লুধিয়ানার স্টেশন মাস্টারের অফিসকেও ক্ষতিপূরণের সম্পত্তি হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে৷ উত্তর রেলের বিভাগীয় ম্যানেজার বলছেন ‘‘সব সময়ই এই ধরনের নির্দেশাবলী কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে৷ এখন আইন মন্ত্রক বিষয়টি দেখবে৷''
এদিকে, সম্পূরণ সিংহকে মালিকানা দেওয়ার এই নির্দেশনামা সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে স্টেশন মাস্টারের ঘরে৷ আর স্টেশনে ট্রেনটি লুধিয়ানা ঢোকার প্রায় এক ঘন্টা আগেই সম্পূরণ তাঁর আইনজীবী রাকেশ গান্ধীকে নিয়ে সেখানে হাজির হয়ে যান৷ আদালতের প্রতিনিধিও ছিলেন৷ আদেশনামা ট্রেনের চালকের হাতে তুলে দেওয়া হয়৷ রেলের এক বিভাগীয় ইঞ্জিনিয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে আদালতের প্রতিনিধির হাতে ট্রেনটিকে তুলে দেন৷ মিনিট পাঁচেকের মধ্যে গোটা পর্বটা সেরে ফেলা হয়৷ সম্পূরণ বলছেন ‘‘ট্রেনটাকে বেশি ক্ষণ থামানো হয়নি৷ না হলে বহু যাত্রীকে অসুবিধায় পড়তে হতো৷'' অবশ্য শেষ পর্যন্ত হাজার হাজার যাত্রীর অসুবিধের কথা ভেবে ট্রেনটিকে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে দেন সম্পূরণ৷ রেল কর্তৃপক্ষ অবশ্য পরবর্তী শুনানির দিন পর্যন্ত ট্রেন দখলের ওপর আদালত থেকে স্থগিতাদেশ বের করতে সফল হয়েছে৷ পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের পুরো টাকা সম্পূরণ সিংয়ের হাতে তুলে দিতে হবে রেল কর্তৃপক্ষকে৷ আর দিতে না পারলে ২০ কোচের এক্সপ্রেস ট্রেন নিলাম করে দিতে পারেন সম্পূরণ৷
বন্ধু, এমন অবাক কাণ্ড শুনেছেন কখনও? আপনার মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷