অন্য দেশের হজযাত্রা
২ আগস্ট ২০১৯এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন ধর্মপ্রাণ মুসুল্লির হজব্রত পালন করার কথা রয়েছে৷ এর মধ্যে কয়েকশ' যাচ্ছেন সরকারি খরচে৷ এরা কেউ ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসুল্লি ও কেউ আলেম ওলামা৷ এর বাইরে প্রশাসনিক দল, কারিগরি দল, চিকিৎসক দল ও চিকিৎসকদের সহায়তাকারী দল নানা ধরনের ব্যবস্থায় যাচ্ছেন এই লোকগুলো৷ তুলনামূলক হিসেবে সংখ্যাটি কম দেখালেও এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই৷ বিশেষ করে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একটি দল নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে ওঠে, যার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন খোদ সিইসি কে এম নুরুল হুদা৷
এত কিছু দেখে আমার আগ্রহ জাগল একটু খুঁজে দেখি আমাদের আশেপাশের দেশগুলোতে হজ ব্যবস্থাপনার চিত্রগুলো কেমন৷
চলুন দেখা যাক৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় হজ কোটা ইন্দোনেশিয়ানদের জন্য৷ এ বছর সে দেশের দুই লাখ ২১ হাজার জন হজ করার সুযোগ পাচ্ছেন৷ ইন্দোনেশিয়ার কলিগদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সেদেশ থেকে সরকারি খরচে হজে পাঠানোর নজির তাদের জানা নেই৷ তবে হজ প্রত্যাশীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে আবার হজযাত্রীদের ভর্তুকি দিয়ে থাকে সরকার৷ সেটা কেমন?
এ বছর হজে যেতে তাদের খরচ ধরা হয়েছে ৭২ মিলিয়ন ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়াহ ( প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার)৷ এর মধ্যে কেউ চাইলে ৩৫ মিলিয়ন রুপিয়াহ পরিশোধ করে ২৭ মিলিয়ন ভর্তুকি ও ১০ মিলিয়ন লাভ নিয়ে হজে যেতে পারবেন৷ তবে সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে ১০ বছর৷ অর্থাৎ আজ যিনি ২৫ মিলিয়ন দেবেন, দশ বছর পর আর ১০ মিলিয়ন পরিশোধ করে হজে যেতে পারবেন৷ আর দশ বছর আগে যিনি প্রাথমিক অর্থ পরিশোধ করেছেন তিনি আজ আরেকজনের দেয়া ২৫ মিলিয়ন থেকে ভর্তুকি পাবেন৷
পাকিস্তানের কলিগরা জানালেন, সে দেশে এর আগে সরকারি খরচে কিছু মানুষ হজে গিয়েছেন এমন উদাহরণ আছে৷ তবে তারা সাধারণ মুসুল্লি নন৷ আর সরকার যে ভর্তুকি দিত তা এবার বন্ধ করে দিয়েছে৷ তাই যেখানে গত বছর দুই লাখ ৬০ হাজার থেকে দুই লাখ ৭০ হাজারে লোক গেছে হজে, সেখানে এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার লাখের বেশি৷ তবে সরকার আবাসন বাবদ কিছু টাকা ফেরত দেবার কথা বলেছে৷ সেখানেও এই বিতর্ক বার বার এসেছে যে, যারা সামর্থ্যবান তাদের অর্থের যোগান কেন সরকার দেবে?
এদিকে, আফগানিস্তানে কেউ হজে যেতে চাইলে তাকে প্রথমে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হয় সরকারের হজ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দিষ্ট বিভাগে৷ সেখানে কয়েকটি শর্ত পূরণ হলেই কেবল নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নিবন্ধিত করা হয়৷ শর্তগুলোর মধ্যে ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিকভাবে ‘ফিট' কি না এবং আর্থিকভাবে সক্ষম কি না তা দেখা হয়৷ ডয়চে ভেলের আফগানিস্তানের সহকর্মীরা জানালেন, সে দেশে রাষ্ট্রীয় খরচে কোনো সরকারি কর্মচারি হজ করেন না৷ তবে প্রতি মন্ত্রণালয়ের তিনজনকে প্রতি বছর নিবন্ধনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে মুক্তি দেয়া হয়৷ অর্থাৎ তারা নিজ খরচে নিবন্ধনের প্রক্রিয়ার বাইরে হজ করতে পারেন৷
আফগান কলিগরা আরো বললেন, সরকারি অর্থে কেবল ‘শহীদ'দের পরিবারের সদস্যদের পাঠানো হয়৷ জঙ্গিদের বোমায় নিহত সাধারণ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিবারের সদস্যেরা এর আওতায় পড়েন৷ বছরে ছয়শ'র মতো লোক যান এ কোটায়৷ তবে সম্প্রতি এই পরিবারের কেউ কেউ হজে না পাঠিয়ে বরং সেই অর্থের অন্তত অর্ধেক তাদের পরিবারকে দেয়ার অনুরোধ করেছেন৷ সরকার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে৷ বিষয়টি বিবেচনায় আনা হতে পারে৷
ভারতীয় সাংবাদিকেরা জানালেন, ভারতে হজের জন্য আগে ভর্তুকি দেয়া হতো৷ ২০১২ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে এই ভর্তুকি আস্তে আস্তে বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়৷ ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভর্তুকির ব্যবস্থা ছিল৷ ২০১৮ সাল থেকে একেবারে উঠিয়ে নেয়া হয়৷ এছাড়া যারা তীর্থে যান তাদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো অর্থায়নের ব্যবস্থা নেই৷ তবে কোনো কোনো রাজ্য সরকার বয়স্কদের তীর্থ যাত্রায় বিভিন্ন রকমের সহযোগিতা করে থাকেন৷ তার মধ্যে আর্থিক সহায়তাও যেমন রয়েছে, তেমনি যাত্রার ব্যবস্থা করা বা আবাসনের ব্যবস্থা করার মতো নানান ব্যবস্থা করা হয়৷
তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমাদের চারপাশের দেশগুলোতে হজে যাওয়ার নানা রকমের প্রক্রিয়া চালু আছে৷ কোনটা ভালো, কোনটা করা যাবে, কোনটা যাবে না, তা ব্যাখ্যা করবেন আলেম ওলামারা৷