ত্যাগ ও সম্প্রীতির মন্ত্রে হজ ও ঈদুল আজহা পালিত
৭ নভেম্বর ২০১১আরব বিশ্বে চলমান আন্দোলন ও সংঘাতের মধ্যে ঈদুল আজহা ও হজ বিশেষভাবে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছিল বিশ্বের মুসলমানদের মাঝে৷ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে একদিকে নানা মত ও গোষ্ঠীর মুসলমানরা হাজির হয়েছিলেন মক্কা নগরীতে৷ আর অন্যদিকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঈদের নামাজে এক সারিতে হাজির হয়ে বিশ্ববাসীর কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করলেন কোটি মুসলমান৷ প্রথমবারের মতো এ বছর হজের সকল রীতিনীতি পালনের ভিডিও চিত্র ইউটিউবে সরবরাহ করা হয়েছে সৌদি সরকারের সহযোগিতায়৷ এছাড়া সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয় এবার হজ পালনকারীদের মোবাইলে প্রতিদিন প্রায় ৩২ লাখ এসএমএস পাঠানোর ব্যবস্থা করে৷
সৌদি সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, এ বছর সারাবিশ্ব থেকে হজ পালন করতে সৌদি আরবে হাজির হয়েছেন প্রায় ২৯ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান৷ এর মধ্যে প্রায় ১৮ লাখ মুসলমান গেছেন সৌদি আরবের বাইরে থেকে৷ রবিবার সৌদি আরবের মিনা প্রান্তরে উপস্থিত হয়ে হজ পালনকারীরা প্রতীকী শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর ছুঁড়লেন৷ এসময় সবাই মুখে ধ্বনি তোলেন ‘আল্লাহ মহান'৷ এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজে আসা ২৯ বছর বয়সি মোখতার খান বলেন, ‘‘এই রীতিটি আমাকে মানসিক শক্তি এনে দেয়৷ আমার কাছে মনে হচ্ছে এখন যেন আমি শয়তানকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছি৷'' মিশর থেকে আসা ২৫ বছর বয়সি মোহাম্মেদ হোসাইনিনের অভিব্যক্তি, ‘‘সবচেয়ে বড় শত্রু শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার পর যেন একটা তৃপ্তি অনুভব করি৷''
হজের যেসব রীতিনীতি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে মিনা প্রান্তরে পাথর নিক্ষেপ করার কাজটিই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ৷ কারণ পাথর ছুঁড়তে গিয়ে অতিরিক্ত ভিড়ে পাদপিষ্ট হয়ে ১৯৯০ সালে মারা যান ১,৪২৬ জন, ২০০৪ সালে ২৫১ জন এবং ২০০৬ সালে ৩৬৪ জন৷ তাই সৌদি সরকার বিশ্বের বৃহত্তম এই সমাবেশে উপস্থিত সবার নিরাপত্তার জন্য সম্প্রতি বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ মিনা এবং আরাফাতের ময়দানে গড়ে তোলা হয়েছে অধিক সংখ্যক থাকার জায়গা৷ বৃদ্ধি করা হয়েছে যানবাহনের সংখ্যা৷ গড়ে তোলা হয়েছে মাশায়ের রেলওয়ে বা মক্কা মেট্রো৷ এ বছরই প্রথম চালু হয়েছে এই মেট্রো সুবিধা৷ এতে প্রতি ঘণ্টায় ৭২ হাজার মানুষ পরিবহন করা সম্ভব৷ মিনা, মুজদালিফা এবং আরাফাতের মধ্যে সংযোগ তৈরি করেছে এই মেট্রো রেল সেবা৷
হজের শেষ দিনেই পশু কুরবানি করতে হয় অর্থাৎ এই দিনই শুরু হয় ঈদুল আজহার উৎসব৷ স্রষ্টার নির্দেশে পুত্র ইসমাইলকে কুরবানি করার যে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন নবি ইব্রাহিম এবং পরে পুত্রের বদলে একটি পশু কুরবানি করেছিলেন সেই ধারাবাহিকতায় মুসলমানরা ঈদুল আজহার দিনে পশু কুরবানি করে থাকেন৷ কুরবানির গোস্ত আবার বিতরণ করতে হয় আত্মীয়-স্বজন এবং গরিব-দুঃখী মানুষের মাঝে৷ ফলে একদিকে আত্মত্যাগ, উৎসর্গ এবং অন্যদিকে ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসে এই ঈদ উৎসব৷ বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুসিলো বাম্বাং ইয়োধোয়োনো এ বছর ১.২ টন গোস্ত হয় এমন পরিমাণ পশু কুরবানি দিচ্ছেন৷ এজন্য তাঁকে ৬০ টি গরু এবং ২৭ টি ছাগল কুরবানি করতে হচ্ছে৷ আর এসব গোস্ত ১০ হাজার মানুষের মাঝে বিতরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম