৯৯৯-এ ফোন করে হয়রানির শিকার
১৭ এপ্রিল ২০২২পুলিশি সেবার মধ্যে সবচেয়ে প্রশংসিত সেবা ৯৯৯৷ এখানে ফোন করে নাগরিকরা আইন-শৃঙ্খলা ছাড়াও আরো কিছু জরুরি সেবা পান৷ এই নাম্বারে ফোন করে আসামি আটক, মাদক কারবারি আটক, নবজাতক উদ্ধার, আত্মহত্যা ঠেকানো, ইভটিজিং ঠেকানো, স্বামীর নির্যাতন থেকে স্ত্রীকে বাঁচানোসহ আরো নানা ধরনের সেবা পাওয়ার খবর প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে দেখা যায়৷
কিন্তু এই নম্বরে ফোন করে উল্টো হয়রানি ও নির্যানের শিকার হওয়ার একটি ঘটনা এখন আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷ এই ঘটনায় পুলিশের তিন সদস্যকে সাময়িক করখাস্ত করা হয়েছে৷
পুলিশি নির্যাতনের ওই ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ভাইরাল হওয়া এবং তা সংবাদমাধ্যমে প্রচার হওয়ার কারণে ভুক্তভোগীরা হয়তো সাময়িক প্রতিকার পেয়েছেন৷ কিন্তু সেটা না হলে প্রতিকার পেতেন কি না সেই প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক৷
৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়ির বিবিরবাগিচা এলাকায় একটি পরিবারের সদস্যরা ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চান৷ তাদের অভিযোগ ছিলো, এক প্রতিবেশি তাদের বাসা থেকে বের হওয়ার পথ দেয়াল তুলে বন্ধ করে দিয়েছে৷ শুধু তাই না, তারা গ্যাস ও পানির লাইনও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে৷ কিন্তু ৯৯৯-এ ফোন করার পর পুলিশ গিয়ে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের পক্ষেই অবস্থান নেয়৷ অভিযোগকারীদের মারধোর করে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়৷
এই ঘটনা সংবাদ মাধ্যমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজসহ দুইদিন আগে প্রচার হওয়ার পর যাত্রাবাড়ি থানার এসআই বিশ্বজিৎ সরকার, কনস্টেবল শওকত এবং নবনিতাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷ আর একজন আনসার সদস্যকে তার বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ পুলিশ ঘটনার অধিকতর তদন্ত করছে৷
এর আগে ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ৯৯৯ এ ফোন করে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে উল্টো হয়রানির শিকার হয়েছিলেন এক নারী৷ তিনি ৯৯৯-এ এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে তাকে হয়রানির অভিযোগ করলে পুলিশ গিয়ে উল্টো ওই নারীকে নির্যাতন করে এবং তার বাড়ি ভাঙচুর করে৷ পরে অবশ্য ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে সাদুল্লাপুর থানার ধাপরহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইন্সপেক্টর নওয়াবুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়৷
৯৯৯ ন্যাশনাল সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ডিআইজি তবারক উল্লাহ বলেন,‘‘আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে, যাত্রাবাড়ির এই ঘটনা এবং গাইবান্ধায় আরেকটি ঘটনায় সেবা চেয়ে উল্টো হয়রানির ঘটনা ঘটেছে৷ এর বাইরে আমরা আর কোনো বড় ধরনের অভিযোগ পাইনি৷ আমরা কোনো অভিযোগ গ্রহণ করার পর থানা পর্যন্ত যোগাযোগ করিয়ে দিই৷ অভিযোগটি নিয়ে অনলাইনে কথা বলে নিশ্চিত হয়েই থানাকে রেফার করি৷ কিন্তু থানার পুলিশ মাঠ পর্যায়ে কী করবে তা সরাসরি দেখার জন্য তাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা আছে৷ তবে আমরাও ফলোআপ করি৷ যাত্রাবাড়ির ঘটনায় আমরাও জবাবদিহি করেছি৷ আমাদের দিক থেকে কোনো ত্রুটি ছিল না৷''
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতীয় জরুরি সেবার আওতায় এই ৯৯৯ সার্ভিস চালু হয়৷ এ পর্যন্ত তিন কোটি ১২ লাখ ৫২ হাজার নাগরিক ৯৯৯-এর সেবা পেতে কল করেছেন৷ এরমধ্যে জরুরি বিবেচনায় ৬৬ লাখ ৭৪ হাজার নাগরিককে সেবা দেয়া হয়েছে৷ যা মোট কলের ২১ ভাগ৷ বাকি কলগুলো ছিলো গুরুত্বহীন৷
সাধারণত পুলিশি সহায়তা, জরুরি পুলিশি সহায়তা, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স-এই চার ধরনের জরুরি সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে৷ মোট ১০০টি ডেস্কের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেয়া হয় ৯৯৯-এর মাধ্যমে৷ জনবল রয়েছে ৫০০৷
অতিরিক্ত ডিআইজি তবারক উল্লাহ বলেন, ‘‘আমাদের পুরো সার্ভিসটাই স্বয়ংক্রীয়ভাবে রেকর্ড হয়৷ ফলে এখানে কোনো ব্যত্যয় হলে তা সহজেই চিহ্নিত করা যায়৷ মাঠ পর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা সেবা দিতে গিয়ে কিছু সমস্যা করেন৷ তবে আমাদের কাছে সে ব্যাপারে যে অভিযোগ আসে তা খুবই অল্প৷ আর পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধেও নানা অনিয়মের অভিযোগ আমরা ৯৯৯-এর মাধ্যমে পাই৷ আমরা সেই অভিযোগ তাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দেই৷''
৯৯৯-এর কারণে পুলিশি সহায়তা পাওয়া মানুষের জন্য সহজ হয়ে গেছে৷ আর এটা সারাদেশে কাজ করে৷ সাধারণ মানুষ সরাসরি থানায় যেতে অনেক সময় ভয় পান বা ইতস্তত বোধ করেন৷ ৯৯৯ সেটা সহজ করে দিয়েছে৷
তবারক উল্লাহ বলেন, ‘‘আমরা কোনোভাবেই কোনো ব্যক্তি বা কোনো ক্ষুদ্র ইউনিটের জন্য এই সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে দেব না৷ এজন্য পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সতর্ক আছে৷ আমরা কাউন্সেলিং করি এবং এটা অব্যাহত থাকবে৷ আর ৯৯৯-এর সার্ভিস সব সময় অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবে৷''
যাত্রাবাড়ি এলাকাটি পুলিশের ওয়ারি বিভাগের অধীনে৷ ডিএমপির ওয়ারি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘‘আমি মনে করি যাত্রাবাড়ির এই একটি ঘটনার জন্য ৯৯৯-এর ওপর নাগরিকদের আস্থা কমবে না৷ বরং এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে এবং বাড়বে৷ এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ কমিটি পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে৷ অভিযুক্তদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে৷ প্রতিবেদন দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে৷''
তবে তিনি দাবি করেন, যাত্রাবাড়িতে ৯৯৯- যারা ফোন করেছে তাদের মধ্যে একজন আছেন মামলার আসামি৷ পুলিশ হয়তো আসামি সামনে আসায় আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে কোনো জটিলতা করেছে৷ অভিযোগকারীরা পুলিশের ওপর ঘরের মধ্যে হামলা করেছে যা সিসি ক্যামরার ফুটেজে আসেনি৷
তবে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য শিল্পী আক্তার বলেন, ‘‘জমি নিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রতিবেশি নুরুল ইসলামের মামলা ও আদালতের অর্ডার আছে৷ তারপরও তিনি রাস্তায় দেয়াল তুলে দেন৷ আমরা সকাল থেকে মোট চারবার ৯৯৯-এ ফোন করি৷ প্রতিবারই বিশ্বজিৎ সরকার এসে দেয়াল নির্মাণ বন্ধ না করে উল্টো আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন৷ শেষবার এসে তিনি আমাদের প্রকিপক্ষ নুরুল ইসলামের লোকজন নিয়ে ঘরে ঢুকে আমাদের মারধোর করেন৷ পুলিশ আমার বোন ও বাবাকে যে মারধোর করেছে সেটা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে আছে৷ তারা আমাদের ধরে থানায় নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়৷ আগে কোনো মামলা ছিল না৷''