প্রচারণার অভাবে অগোচরে ‘৯৯৯’
৯ অক্টোবর ২০২০সাধারণ মানুষকে জানাতেও নেই কোনো প্রচারণা৷ শুধু তাই নয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পৃথক হটলাইন থাকার কারণে মানুষ আসলে বিভ্রান্ত৷ কোন নম্বরে কোন সেবা পাওয়া যায় তা তারা জানেন না৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা তো মিডিয়ার মাধ্যমে নিয়মিত এই সেবা সম্পর্কে প্রচারণা চালাচ্ছি৷ কিন্তু সমস্যা হলো, মানুষ টিভি দেখেন না, পত্রিকা পড়েন না৷ তারা সারাদিন ফেসবুকে বসে থাকেন৷ ফলে আমাদের এই প্রচারণা তাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না৷’’
ফেসবুকেও তো প্রচারণা চালাতে পারে সরকার? তা স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সরকারি বিষয়গুলো ফেসবুকে তেমনটা প্রচারণা চালানো হয় না৷ এখন আপনি যেহেতু বললেন, দেখি কী করা যায়৷’’ সারা দেশের সব পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাধ্যমে প্রচারণার বিষয়টিও আগামিতে ভাবা হবে জানালেন তিনি৷
জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই ‘৯৯৯’ সম্পর্কে জানেন না৷ কুষ্টিয়া সদর পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই নম্বরের ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না৷ এটি সরকারি না বেসরকারি নম্বর তা-ও জানি না৷ আমাদের কাছে এই নম্বরের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা নেই৷’’ একই ধরনের কথা বললেন রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘দেশের মানুষ তো জানেন না, এই নম্বরে ফোন করে শুধু ঢাকার না, সারাদেশ থেকে সেবা পাওয়া যায়৷ এটা সরকারি সেবা হলে তো আমাদের বলার কথা৷ কেউ তো কখনো আমাদের কাছে এই সেবা সম্পর্কে কিছুই বলেনি৷’’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এই নম্বরের ব্যাপারে কিছুই জানেন না৷ সিলেটের গোয়ানঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সিলেটে জরুরি সেবার একটা নম্বর আমাদের জানা আছে৷ সেটা আমি সুযোগ পেলে সবাইকে বলি৷ কিন্তু ৯৯৯-এর সেবা সম্পর্কে কিছুই জানি না৷ এ বিষয়ে আমাদের কেউ কিছুই বলেননি৷’’ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজ মৃধা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি নিজে এই সেবা সম্পর্কে জানি৷ কিন্তু আমি নিশ্চিত সাধারণ মানুষ এটা সম্পর্কে কিছুই জানেন না৷’’ মাগুরার শালিখা উপজেলার বুনাগাতি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার রূপকুমার সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এলাকার অনেকেই বিষয়টি জানে৷ কিন্তু সরকারিভাবে জনগণকে এই সেবা সম্পর্কে জানাতে আমাদের কাছে কোনো ধরনের নির্দেশনা এখন পর্যন্ত আসেনি৷’’
৯৯৯-এর দায়িত্বে থাকা পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি তবারক উল্ল্যাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের এই সেবাটি যে এখনো সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছেনি এটা সত্যি৷ গত তিন বছরে আমাদের কাছে যে ২ কোটি ৪০ লাখ কল এসেছে যার ৪৬ শতাংশ ঢাকা বিভাগের৷ সিলেট বিভাগ থেকে কল এসেছে ৩ শতাংশ৷ বরিশাল বিভাগ থেকেও এসেছে ৩ শতাংশ কল৷ এই পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় সকল মানুষের কাছে এই সেবা পরিচিত না৷’’
৯৯৯-এ ফোন করে বহু মানুষ সেবা পেয়েছেন৷ দেশের যে কোনো জায়গা থেকে বিনা পয়সার এই নম্বরে ফোন করা যায়৷ বিশেষ করে তিন ধরনের বিপদে এখান থেকে সেবা দেওয়া হয়৷ পুলিশি সেবা পেতে এই নম্বরে ফোন করলেই সঙ্গে সঙ্গেই সেবা মেলে৷ এছাড়া ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবাও মেলে এই নম্বর থেকে৷ বিপদে পড়লে যে কোনো নারী-পুরুষ দেশের যে কোনো জায়গা থেকে এই নম্বরে ফোন করে তাৎক্ষণিক সহযোগিতা পান৷
এই নম্বরটি মানুষের কাছে পরিচিত না হওয়ার কয়েকটি কারণের কথা জানালেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজা৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘গ্রামের একজন মানুষ কয়টা নম্বর মনে রাখবে৷ কিভাবে জানবে কোন নম্বরে কী সেবা পাওয়া যায়৷ প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের আলাদা হটলাইট নম্বর আছে৷ এমনকি বিভিন্ন এনজিও'র আলাদা হটলাইন নম্বর আছে৷ আসলে সরকার তো একটি নম্বর দিয়ে দিলেই দায়িত্ব শেষ হবে না৷ এর জন্য প্রচারণা চালাতে হবে৷ তবে হ্যাঁ, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও জনপ্রতিনিধিদেরও দায়িত্ব আছে৷ কিন্তু আমরা ক'জন মানুষকে নিয়ে কাজ করি৷ মাথা থেকে পা পর্যন্ত তো সরকারি লোকজন বসে আছে৷ সরকার চাইলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমেই এটি প্রচার করার উদ্যোগ নিতে পারেন৷ কিন্তু সেই কাজটি তো হচ্ছে না৷ জনপ্রতিনিধিরাও তো কিছু বলেন না৷’’
অতিরিক্ত ডিআইজি তবারক উল্ল্যাহ স্বীকার করেছেন, ‘‘এটি চালু হওয়ার পর মিডিয়ার মাধ্যমে মানুষ যতটুকু জেনেছে৷ আসলে এটির ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য বা জনগণের দোরগোড়ায় নেওয়ার জন্য এখনো আমরা বড় ধরনের কোনো প্রোগ্রাম করতে পারিনি৷ বলতে পারেন, এটি আমাদের এক ধরনের দুর্বলতা৷ সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আসলে এটির সঙ্গে বাজেট বরাদ্দ থেকে শুরু করে অনেক কিছুই জড়িত৷ চাইলেই সবসময় সবকিছু সম্ভব হয় না৷’’
জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সালমা আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৯৯৯ থেকে কিন্তু অনেক কেস আমাদের কাছেও পাঠানো হয়৷ আমরা যতটুকু পারি সহযোগিতা করি৷ কিন্তু আমরা যে নারীদের নিয়ে কাজ করি, তারা আসলে এসব নম্বর সম্পর্কে খুব একটা জানেন না৷ এত নম্বর, কোনটা মনে রাখবে তারা৷ শুধু সরকারি না, আমাদের এনজিওগুলোরও হটলাইন নম্বর আছে৷ আমার নিজের প্রতিষ্ঠানেরও আছে৷ ফলে গ্রামের মানুষ এই নম্বরগুলো মনে রাখার চেষ্টাই করেন না৷ কারণ, তারা জানেন না, কোন সেবাটি ঢাকার আর কোনটি গ্রামের৷ ফলে এত নম্বরের ভিড়ে মানুষ কোন নম্বরেই ফোন করেন না৷’’