দায়ী বড় দুই রাজনৈতিক দল
৬ এপ্রিল ২০১৩শাহবাগের কথিত ‘নাস্তিক' ব্লগাদের ফাঁসি, ব্লাসফেমী আইন প্রণয়ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশে যত ভাস্কর্য আছে সব ভেঙ্গে ফেলা এবং নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধসহ ১৩ দফা দাবিতে লংমার্চের পর শনিবার ঢাকার মতিঝিলে অনুষ্ঠিত হয় হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ৷ মহাসমাবেশ থেকে এই দাবি আদায়ে ৮ এপ্রিল হরতাল এবং ৫ মে ঢাকা অবরোধের নতুন কর্মসূচি দেয়া হয়েছে৷ সমাবেশ সরকারকেও ‘নাস্তিক' বলে অভিহিত করে পতন ঘটানোর কথা বলা হয়৷
‘জামায়াতকে রক্ষার আন্দোলন'
অন্যদিকে এই লংমার্চ প্রতিহত করতে মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ পঁচিশটি সংগঠনের ডাকে সারদেশে ২৪ ঘণ্টার হরতাল শেষ হয়েছে শনিবার সন্ধ্যায়৷ হরতালে কোন সহিংসতা না হলেও অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানান সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসিরউদ্দিন ইউসুফ৷ বিকেলে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ থেকে জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়৷ বলা হয়, হেফাজতের আন্দোলন জামায়াতকে রক্ষার আন্দোলন ছাড়া আর কিছুই নয়৷
এদিকে, হেফাজতে ইসলামের মিছিল থেকে ঢাকার মহাখালীতে শাহরিয়ার কবিরসহ ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও সাংস্কৃতিক জোট নেতাদের ওপর হামলা চালান হয়েছে৷ ফরিদপুরে হেফাজত, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষে একজন আওয়ামী লীগ নেতা নিহত হয়েছেন৷
আক্রান্ত নারী সাংবাদিক
হেফাজতের লোকজন ঢাকায় সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালিয়েছে৷ তারা হামলা চালিয়েছে একুশে টেলিভিশনের নারী সাংবাদিক নাদিয়া শারমিনের ওপর৷ পুরুষদের সমাবেশে নারী সাংবাদিক কেন এই অজুহাত তুলে তারা নাদিয়া শারমিনকে প্রকাশ্যে বেধড়ক পোটায়৷ গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷
সহায়তায় সরকার, বিরোধী দল
হেফাজতের এই লংমার্চে সরকার বাধা দিয়েছে বলে নেতারা অভিযোগ করলেও বাস্তবে মতিঝিল শাপলা চত্বরে তাদের সহাসমাবেশের অনুমতিসহ সব ধরনের সুবিধা দিয়েছে সরকার৷ এমনকি শাহরিয়ার কবিরের ওপর হামলার সময়ও পুলিশ হেফজতের পক্ষ নেয় বলে শাহরিয়ার কবির অভিযোগ করেছেন৷ এমনকি মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে লক্ষ্য করে পানির বোতল ছুড়ে মারার পরও হেফাজত কর্মীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ৷ আর সরকার আগেই তাদের দাবি মত কয়েকজন ব্লগারকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়৷
অন্যদিকে হেফাজতের লোকজনকে পানি ও খাবার সরবরাহ করেছে বিএনপি ও জাতীয় পার্টি৷ আর মঞ্চে গিয়ে বিএনপির পক্ষে সংহতি জানিয়েছেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং জাতীয় পার্টির পক্ষে কাজী জাফর আহমেদ৷ এই দুটি দল ও জামায়াতে ইসলামী আগেই হেফাজতের কর্মসূচিকে সমর্থন দেয়৷ তাদের লোকজন বিপুল সংখ্যায় মহাসমাবেশে হাজির থাকে৷
‘নীতিহীন রাজনীতি'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দু'টি বড় রাজনৈতিক দলই সামনের নির্বাচনে ভোটের হিসাব করে হেফাজতে ইসলামকে পক্ষে নেয়ার নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে৷ বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ কেউই এক্ষত্রে পিছিয়ে নেই৷ আর একারণেই বাংলাদেশে মৌলবাদের উত্থান ঘটছে৷
‘‘দলগুলো যেকোনভাবে ক্ষমতায় যেতে চায় বা টিকে থাকতে চায়৷ তাই তাদের কাছে দেশের কল্যাণ বা অকল্যাণ বড় কথা নয়৷''
ড. আহমেদ বলেন, ‘‘এই নীতিহীন রাজনীতির কারণেই দেশ বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে৷ এই মৌলবাদীরা আরো শক্তি সঞ্চয় করবে৷ তখন হয়তো সমালাবার পথ থাকবেনা৷''