ব্লগার গ্রেপ্তার
২ এপ্রিল ২০১৩সামনের টেবিলে রাখা ল্যাপটপ, কম্পিউটার এবং হার্ডডিস্ক৷ পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন তিন ব্লগার৷ সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা৷ মঙ্গলবার তিন ব্লগারের ছবি এভাবে প্রকাশ হয়েছে ঢাকার গণমাধ্যমে৷ অথচ এই ব্লগারদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ এখনো প্রমাণিত হয়নি৷ এমনকি যেসব ছদ্মনামের আড়ালে তারা রয়েছেন বলে গোয়েন্দাদের দাবি, সেই দাবির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে খোদ ব্লগ কর্তৃপক্ষের মনে৷
গ্রেপ্তারকৃত ব্লগাররা হচ্ছেন সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজ৷ এরা বাংলা ব্লগোস্ফিয়ারে গত কয়েক বছর ধরেই সম্মানের সঙ্গে লেখালিখি করে যাচ্ছেন, যুক্ত আছেন শাহবাগ আন্দোলনের সঙ্গে৷ তাদের সাধারণ অপরাধীর মতো গণমাধ্যমের সামনে হাজির করাটা কিছুতেই মানতে পারছেন না আমার ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সুশান্ত দাসগুপ্ত৷ ডয়চে ভেলেকে জানানো প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘‘যাদেরকে ধরা হয়েছে, তারা বাংলা ব্লগের শুরু থেকেই আছে৷ স্বাধীনতার সপক্ষে লেখালিখি করছিল৷ তাদেরকে এভাবে আটকিয়ে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করছে, এই দৃশ্য আমি কোনদিন কল্পনা করি নাই৷''
সামহয়্যার ইন ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা একই বিষয়ে বলেন, ‘‘গ্রেপ্তারকৃত ব্লগারদের ছবি যেভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে, তা খুবই আপত্তিকর৷ বাকস্বাধীনতার চর্চা করতে গিয়ে কেউ এভাবে গ্রেপ্তার হন?''
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দাবি হচ্ছে, গ্রেপ্তারকৃত ব্লগাররা ‘আল্লামা শয়তান', ‘অপবাঘ' ও ‘লালু কসাই' ছদ্মনামে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন৷ কিন্তু এসব ছদ্মনাম আদৌ গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের কিনা, সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন গুপ্ত৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রথমেই এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছি, সেটা এই কারণে যে রাসেল পারভেজ, মশিউর রহমান বিপ্লব এবং সুব্রত শুভ কোনদিন তাদের নামে কোন ধরনের ধর্মীয় লেখা লিখেছে বলে আমার জানা নেই৷ আমি পাঁচ-ছয় বছর ধরে বাংলা ব্লগের সঙ্গে যুক্ত আছি৷''
এখানে বলা প্রয়োজন, প্রকৃত বা ছদ্মনামে লেখালিখি করা ব্লগারদের সম্পর্কে কারিগরি বিভিন্ন তথ্য সাধারণত ব্লগ প্ল্যাটফর্মগুলোর কাছে থাকে৷ গ্রেপ্তারকৃত ব্লগাররা সামহয়্যার ইন ব্লগ এবং আমার ব্লগে লিখতেন৷ এই দুটি ব্লগ প্ল্যাটফর্মের কর্তৃপক্ষ ডয়চে ভেলেকে নিশ্চিত করেছেন, গ্রেপ্তারকৃতদের সম্পর্কে কোন তথ্য কখনোই বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি তাদের কাছে চায়নি এবং তারাও কোন তথ্য কাউকে জানায়নি৷ ফলে গোয়েন্দা পুলিশ কোন ধরনের কারিগরি তথ্যের ভিত্তিতে ব্লগারদের গ্রেপ্তার করেছে, সেটা পরিষ্কার নয়৷
সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা এক্ষেত্রে আইনের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘হঠাৎ করে তাদের যে গ্রেপ্তার করা হলো, এই ব্যাপারটা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত হলো এবং কতটুকু আইনত হলো, এটা নিয়ে ভাববার ব্যাপার রয়েছে৷ আমরা এই ব্যাপারটি নিয়ে অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ৷''
ব্লগার সুশান্ত দাস গুপ্ত মনে করেন, এই গ্রেপ্তারের পেছনে ‘রাজনৈতিক খেলা' রয়েছে৷ কেননা গ্রেপ্তারকৃতরা যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে প্রতিষ্ঠিত শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ বিশেষ করে রাসেল পারভেজ খুব ঘনিষ্ঠভাবে জামায়াত-শিবির বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে রয়েছেন৷ গুপ্ত বলেন, ‘‘হয়ত বর্তমান সরকার হেফাজতে ইসলামকে খুশি করার জন্য এদেরকে ধরেছে৷''
উল্লেখ্য, ফেসবুক ও ব্লগে ইসলাম ও হযরত মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ‘অবমাননাকর' মন্তব্যকারীদের সনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত ১৩ মার্চ একটি কমিটি করে সরকার৷ এরপর কয়েকটি ব্লগ লিংক নিষিদ্ধে দুটি কমিউনিটি ব্লগসাইটকে নির্দেশ দেয় বিটিআরসি৷ সর্বশেষ তিন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করলো গোয়েন্দা পুলিশ৷