হাঁপানি ও অ্যালার্জির জন্য যা দায়ী
১৮ ডিসেম্বর ২০১৭বসন্তে প্রকৃতি আবার জেগে উঠছে৷ কিন্তু অনেক মানুষের জন্য বড় কষ্টের এক সময় শুরু হচ্ছে৷ ফুলের পরাগ বা পুষ্পরেণু তাদের সর্দিকাশি ও চোখ ফোলার জন্য দায়ী৷ ক্রমশঃ আরও বেশি মানুষ অ্যালার্জিতে ভুগছেন৷ শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াকে ডাক্তাররা ‘একবিংশ শতাব্দীর মহামারি' হিসেবে বর্ণনা করছেন৷ কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ ফুলের পরাগ কেন আমাদের এত কাহিল করে দেয়?
মারিয়া গ্রাফ ও তাঁর ১০ বছরের কন্যা আনা এক খামারবাড়িতে থাকেন৷ দীর্ঘমেয়াদি এক গবেষণায় স্বেচ্ছাসেবি হিসেবে তাঁরা এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে সহায়তা করছেন৷ শিশু হিসেবেই আনা গোয়ালে নানা রকম জীবাণুর সংস্পর্শে এসেছে৷ সে কারণেই কি তার ইমিউন সিস্টেম পুষ্পরেণুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে?
হলৎসলার পরিবার এমন এক ফ্ল্যাটে বসবাস করে, যেখানে কোনো গৃহপালিত পশু নেই৷ সে কারণে কি ১০ বছর বয়সি রাফায়েলের অ্যালার্জির ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি?
শিশু চিকিৎসক এরিকা ফন মুৎসিউস গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন৷ এর ফলাফল অত্যন্ত স্পষ্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি, যে সব শিশু খামারবাড়িতে থাকে, অন্যদের তুলনায় তাদের হে ফিভার, হাঁপানি বা অ্যালার্জি অনেক কম হয়৷ এই শিশুরা খুব কম বয়সে গোয়ালে গিয়ে গরুর দুধ পান করলে এবং তাদের মায়েরা গর্ভবতী অবস্থায় সেখানে সময় কাটালে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়৷ অর্থাৎ তখন শিশুদের হাঁপানি রোগ ও অ্যালার্জির সম্ভাবনা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যায়৷''
স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতিরিক্ত পরিচ্ছন্নতার ফলে কি রোগের ঝুঁকি বাড়ছে? রাফায়েল এই তত্ত্বকে কার্যত সত্য প্রমাণিত করছে৷ ঘরের মধ্যে ধুলাবালি ও ফুলের পরাগের সংস্পর্শে এলে তার শরীরে প্রতিক্রিয়া দেখা যায়৷ পাঁচ বছর বয়স থেকেই সে হে ফিভার ও হাঁপানি রোগে ভুগছে৷ বসন্তকাল তার জন্য বড় দুঃখের, কারণ তাকে এ সময় যতটা সম্ভব বাড়িতেই থাকতে হয়৷
অন্যদিকে আনা অ্যালার্জি-মুক্ত৷ কিন্তু তার এই সুরক্ষা ঠিক কোথা থেকে আসে? গবেষকরা একটি বিষয় জানতে পেরেছেন৷ শিশুরা খামারে গরুর যে তাজা দুধ পান করে, তাতে বাজারে প্যাকেটের দুধের তুলনায় অনেক বেশি জীবাণু থাকে৷ শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তখন অনেক সহজে মানিয়ে নিতে পারে৷
অ্যালার্জির বাড়-বাড়ন্তের সঙ্গে কি সামগ্রিকভাবে আমাদের খাদ্যাভ্যাস জড়িত? উল্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক গাব্রিয়েলে নাগেল ও তাঁর সহকর্মীরা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন৷ বিশ্বব্যাপী এক সমীক্ষার আওতায় তাঁরা শিশু ও কিশোরদের অ্যালার্জি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন৷
বিশাল এই প্রকল্পের আওতায় তাঁরা ৫১টি দেশে প্রায় ৫ লক্ষ ছেলেমেয়েকে জেরা করেছেন৷ প্রো. গাব্রিয়েলে নাগেল বলেন, ‘‘শিশু-কিশোর ও তাদের বাবা-মায়েদের সরাসরি প্রশ্ন করা হয়েছিল৷ খাদ্যাভ্যাস, হাঁপানি রোগ ও অ্যালার্জি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছিল৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছিল৷''
এই তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণ করতে চার বছর সময় লেগেছিল৷ এর স্পষ্ট ফলাফল এমনকি গবেষকদেরও বিস্ময়ের কারণ হয়েছিল৷ যে সব শিশু-কিশোর সপ্তাহে তিনবার অথবা তার বেশি ফাস্টফুড খায়, তাদের মধ্যে হাঁপানি রোগ, হে ফিভার ও ত্বকে লাল দাগ বেশি করে দেখা যায়৷ যারা ফলমূল ও শাকসবজি খায়, তাদের মধ্যে এই সম্ভাবনা কম৷
খাদ্য বিশ্লেষণ করেও অ্যালার্জির উৎস সম্পর্কে ইঙ্গিত পাওয়া যায়৷ হ্যামবার্গার, আলু ভাজার মতো খাবারে যে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, সেগুলিই সম্ভবত এর জন্য দায়ী৷ প্রো. গাব্রিয়েলে নাগেল বলেন, ‘‘বড় মাত্রায় ফ্যাট তৈরি করার সময় ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড সৃষ্টি হয়৷ ল্যাবে পরীক্ষায় তার প্রভাব শনাক্ত করা গেছে৷ খাদ্যের মধ্যে এনার্জি ডেনসিটিও আরেকটি কারণ৷ অর্থাৎ যে খাবারে সামগ্রিকভাবে উচ্চ মাত্রার ফ্যাট রয়েছে, সেগুলি হাঁপানি রোগ ও অ্যালার্জির লক্ষণ বাড়িয়ে দেয়৷''
অর্থাৎ সুস্থ খাদ্যাভ্যাস অ্যালার্জি এড়াতে সাহায্য করতে পারে৷ ডাক্তাররা একটি টিকাও তৈরি করার চেষ্টা করছেন৷ সেই লক্ষ্যে তারা উজ্জ্বল একটি সম্ভাবনার পথে এগোচ্ছেন৷