স্বাধীনতার জন্য ১৪০০ মাইল হাঁটা
১৬ মার্চ ২০২১প্রায় এক কোটি বাঙালিকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব এসে পড়ে ইন্দিরা গান্ধী সরকারের ওপর৷ ভারতের কিছু রাজ্যের মানুষ এতে নাখোশ হয়৷ শরণার্থীদের ফিরিয়ে দিতে আর মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য না করতে নানাভাবে তারা সরকারকে চাপ দিতে থাকে৷
ঠিক ওই সময়েই পরিকল্পনা হয় বাংলাদেশ থেকে দিল্লি পর্যন্ত ‘বিশ্ব বিবেক জাগরণ পদযাত্রা’ আয়োজনের৷ এতে অংশ নেন বিভিন্ন জেলা থেকে আগত বাংলাদেশের ৩৮ জন শিক্ষিত যুবক৷ ভারত সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি আদায়, মুজিবের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রদান, পাকিস্তানি সেনা কর্তৃক গণহত্যা ও হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা তুলে ধরে স্বাধীনতার পক্ষে ভারতীয় জনমত গড়ে তোলাই ছিল এর উদ্দেশ্য৷
পদযাত্রীরা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে জনসভা করতেন৷ গণহত্যা সম্পর্কে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে আহ্বান জানাতেন বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়ানোর৷ তাদের সকলের হাতে হাতে শোভা পেত- ‘আমাদের এক কথা-বাংলাদেশের স্বাধীনতা’, ‘মুজিবের মুক্তি চাই’ সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও জাতীয় পতাকা৷ ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে পদযাত্রাটি চলে ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত ৷ দেশি- বিদেশি গণমাধ্যমগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হতে থাকে পদযাত্রার খবর৷ সে খবর ব্যাপক আলোড়নও তোলে৷ এভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষে ভারতীয় তথা বিশ্ব জনমত গড়তে ‘বিশ্ব বিবেক জাগরণ পদযাত্রা’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল৷
পদযাত্রী দলের ডেপুটি লিডার-০২ ছিলেন কামরুল আমান৷ তাঁর বাবা চাকুরি করতেন ঢাকেশ্বরী কটন মিলে৷ সে সুবাদে থাকতেন নারায়ণগঞ্জে৷ ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন তোলারাম কলেজের ছাত্র৷ নিজ আগ্রহেই যুক্ত ছিলেন ওই সময়কার আন্দোলন সংগ্রামগুলোতে৷ ১৯৭১-এ পাকিস্তানি সেনাদের গণহত্যা আর বর্বরতা কামরুল আমান দেখেছেন খুব কাছ থেকে৷ আলাপচারিতার শুরুটা তাই গণহত্যা দিয়েই৷
তাঁর ভাষায়, ‘২৫ মার্চ, ১৯৭১৷ রাতের মধ্যেই ঢাকার গণহত্যার খবর ছড়িয়ে পড়ে সবখানে৷ কারফিউ চলছিল৷ তা শিথিল হতেই কাউকে কিছু না জানিয়েই রওনা হই ঢাকার দিকে৷ ডেমরার ডিএনডি মাটির বাঁধ৷ ওই পথেই শত শত লোক পালিয়ে আসছে ঢাকা থেকে৷ সবার মুখে লোক মরার খবর৷ মাতুয়াইলে এসে দেখি রাস্তার ঢালে পড়ে আছে ৭-৮ জনের গলাকাটা লাশ৷ তাদের কখন মারা হয়েছে কেউ জানে না৷ দেহ তখনও কই মাছের মতো নড়ছিল৷ এ যেন জিন্দা লাশ! বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় গিয়ে দেখি একজনের হাতের কব্জি বেরিয়ে এসেছে মাটির ওপরে৷ কার লাশ এটা? কেউ জানে না৷ খবর পেয়ে ছুটে যাই শাঁখারি পট্টিতে৷ আহারে! কী নির্মমভাবে ওরা মানুষ পোড়াইছে৷ কোর্ট বিল্ডিংয়ের পাশেই শাঁখারি পট্টির প্রবেশমুখ৷ সেটি বন্ধ করে আগুন দিয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনারা৷ সবাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে৷ কয়েকটি বাড়িতে তখনও আগুন জ্বলছিল৷ একটি বাড়িতে পা রাখতেই গা শিউরে ওঠে৷ মানুষ পুড়ে তার চর্বি গলে মেঝেতে পড়ে আছে৷ তাতে পড়েছে আমার পা৷ এর চেয়ে ভয়াবহ আর মর্মান্তিক দৃশ্য আর কী হতে পারে!’
পাকিস্তান আর্মিরা নারায়ণগঞ্জ দখলে নিলে কামরুল ট্রেনিংয়ের জন্য কুমিল্লার রামকৃষ্ণপুর হয়ে চলে আসেন আগরতলায়, গোকুলনগর রিক্রুটিং ক্যাম্পে৷ ট্রেনিং শুরুর দেরি দেখে পরে চলে যান কলকাতায়৷
ওখানে সিপিএম অফিসে তার সঙ্গে পরিচয় হয় দেবেন সিকদারের৷ তার পরামর্শেই তিনি কাজ শুরু করেন যশোরের বেনাপোলে, বাংলাদেশ ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোরে৷ সীমান্ত এলাকার শরণার্থীদের সেবা ও সাহায্য করাই ছিল ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজ৷ পরে তাদের মাধ্যমেই তিনি রিক্রুট হন ‘বিশ্ব বিবেক জাগরণ পদযাত্রা’র দলটিতে৷
সে ইতিহাস শুনি কামরুল আমানের মুখে৷ তাঁর ভাষায়, ‘বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের সঙ্গে পদযাত্রাটি এগিয়ে নেওয়ার সার্বিক পরিকল্পনায় যুক্ত হয় ‘অখিল ভারত শান্তি সেনা মণ্ডল’ নামের একটি সংগঠন৷ এটি গঠিত হয় মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী আটটি সংগঠনের সম্মিলনে৷ এদের সহযোগিতা করে গান্ধী পিচ ফাউন্ডেশন৷ পদযাত্রার মূল উদ্যোক্তা ভারতের অহিংস সর্বদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ এবং আহ্বায়ক ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের দীনেশ চন্দ্র মুখার্জি৷
আমাদের ৩৪ জন বাছাইয়ে কাজ করেন যশোরের শাহ হাদিউজ্জামান, মরহুম এম রওশন আলী, বিমল রায় চৌধুরী ও শেখ মোখলেসুর রহমান খোকন৷ বনগ্রাম থেকে ১৪ অক্টোবর, ১৯৭১-এ আমরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে পৌঁছি৷ সেখানে ঐতিহাসিক পলাশীর প্রান্তরের মাটি ছুঁয়ে আমরা স্বাধীনতার জন্য শপথ নিই৷ বাকি চারজন পরে এসে যোগ দেন মুর্শিদাবাদে৷’
পদযাত্রীদের নাম জানালেন কামরুল- ‘লিডার আবদুল খালেক৷ তিনি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্সের ছাত্র৷ ডেপুটি লিডার-১ খুলনার একরামুল ইসলাম৷ আমি ছিলাম ডেপুটি লিডার-২৷ বাকিরা হলেন- রফিকুল ইসলাম, খলিলুর রহমান, মুরারী মোহন সরকার, বিনয় কুমার বিশ্বাস, আজিজুর রহমান, মোহাম্মদ আবু বকর, পরিতোষ কুমার মণ্ডল, আবদুল লতিফ (১), আবদুল লতিফ (২), সৈয়দ রবিউল হক, দুলাল মণ্ডল, ওহিদুজ্জামান চাকলাদার, তুষার কান্তি সুর, শেখ আনোয়ার কামাল, সুভাষ চন্দ্র বসু, অমিত দেব, ক্ষীতিশ চন্দ্র মণ্ডল, আনন্দ মোহন রায়, প্রদীপ কুমার শীল, আবদুস সামাদ, আনোয়ারুল কাদির, পরিতোষ কান্তি কবিরাজ, দেলোয়ার হোসেন, অনিল কুমার বিশ্বাস, মইন উদ্দিন, সহিদুল ইসলাম, বিশ্বনাথ সাহা, সমীর কুমার বসু, ওমেদ আলী, আবু বকর সিদ্দিকী, শামসুল হক, মতিলাল দাস, অহিভূষণ চক্রবর্তী, সনৎ কুমার বিশ্বাস, আশরাফ হোসেন, দিলীপ কুমার নাগ৷’
শুরুর আনুষ্ঠানিকতা কেমন ছিল?
তিনি বলেন- ‘আগের দিন অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরের কাশীশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ে র্যালিসহ একটি জনসভায় আমাদের অভিনন্দন জানানো হয়৷ রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল চন্দ্র সেনের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গান্ধীপন্থি লেখক মৌলভি রেজাইল৷ বক্তব্য দেন মোহাম্মদ একরামুল, শ্রী দেশাই, আবদুল খালেক প্রমুখ৷ পরদিনই বাংলাদেশের পতাকা, ফেস্টুন ও ব্যানারসহ আমরা বহরমপুর থেকে গোকর্ণর দিকে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করি৷ বিশ্ব বিবেক জাগরণ পদযাত্রার আগাম কর্মসূচি ইংরেজি ও হিন্দিতে গণমাধ্যমগুলোতে জানিয়ে দিতেন উদ্যোক্তারা৷ প্রায় দেড় মাস দলটিকে প্রতিদিন গড়ে ১৫-১৬ মাইল পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে হতো৷ বিকেলের দিকে স্থানীয়ভাবে আয়োজন করা হতো জনসভার৷ উঠোন বৈঠকও হয় অগণিত৷ দেশ-বিদেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে চলে মতবিনিময়৷ এভাবে দলটি মুর্শিদাবাদ, সেইনথিয়া, সুরি, শান্তিনিকেতন, ককশা, দুর্গাপুর, রানীগঞ্জ, আসানসোল, নিয়ামতপুর, কুলটি, চিত্তরঞ্জন ও বিহার, পাটনা, লখনৌ, আগ্রাসহ প্রভৃতি জায়গায় পদযাত্রা করে৷
৩০ জানুয়ারি ছিল গান্ধী প্রয়াণ দিবস৷ ওইদিন দিল্লির রাজঘাট গান্ধী সমাধিতে পদযাত্রাটি শেষ হবে- এমনটিই ছিল পরিকল্পনা৷ কিন্তু তার আগেই স্বাধীনতা লাভ করায় ১৭ ডিসেম্বর ভারতের উত্তরপ্রদেশে এসে পদযাত্রাটি শেষ হয়৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যদি আরও সময় লাগতো তাহলে এই দলটিকেই প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংগে পাঠানোর চিন্তা ছিল৷
এ নিয়ে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?
কামরুল আমান বলেন, ‘পদযাত্রায় স্থানীয় জনগণই আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করত৷ পাটনাতে যখন গেলাম ওখানকার চিফ আমাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন৷ পল্টনের মতো বিশাল একটি মাঠে মিটিং হয়৷ বক্তৃতায় বললাম নিজের অভিজ্ঞতার কথা, গলা কাটা লাশ, বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশের মাটিচাপা, পুরান ঢাকার মানুষ পোড়ানো, মানুষের চর্বি গলানো মেঝেতে নিজের পায়ের ছাপ৷ লিডার খালেক বললেন রাজশাহীতে গণহত্যার বর্বরতার কথা৷ বর্ণনাগুলো যখন হিন্দিতে অনুবাদ করে বলা হচ্ছিল তখনই দেখলাম ওখানকার মানুষ হু হু করে কাঁদছে৷
লখনৌ ইউনিভার্সিটিতে আমাদের বক্তব্য শুনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে কণ্ঠ মিলায় ছাত্রছাত্রীরা৷ মুজিবের মুক্তিতে পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকারও করে তারা৷ এভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ভারতীয় জনগণ একাট্টা ছিল৷ তাদের সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সমর্থনটা ছিল আমাদের জন্য অনেক বড় শক্তি৷
আন্তর্জাতিক জাতীয়তাবাদটা মানুষের মনের ভেতরই গাঁথা থাকে৷ কে কোন দেশের, সেটা বড় কথা নয়৷ মানুষের মুক্তির, মানুষের স্বাধীনতার জন্য মানুষই মানুষের পাশে দাঁড়ায়৷ একাত্তরে এটাই প্রমাণ করেছিল ভারতীয় জনসাধারণ৷’
ভিন্ন অভিজ্ঞতাও ছিল কামরুলদের৷ তার ভাষায়- মুর্শিদাবাদে এক উঠোন বৈঠকে ভারতীয় একদল মুসলমান আমাদের ওপর বেশ রাগান্বিত হয়ে বলেন- ‘পাকিস্তান ছিল একটা মুসলমানের দেশ৷ তোমরা সেটা ভেঙে দিতেছ৷ এক কোটি লোক আইসা আমগো ওপর খাইতাছ৷ আমগো ভারতও ধ্বংস করবা তোমরা৷ যুদ্ধ তোমাদের, কিন্তু সৈন্য মরে আমগো৷ এই যুদ্ধ আমাদের দরকার নাই৷ বিদায় হও তোমরা৷'
আমরা ধৈর্য হারাই না৷ পাকিস্তানে মুসলমান যে মুসলমানকে তেইশ বছরে ধরে কীভাবে নির্যাতন করেছে, মুসলমান মুসলমানের শিক্ষা-সংস্কৃতিকে কীভাবে পদদলিত করেছে৷ এটা আমার বোঝানোর চেষ্টা করি৷ বলি, মুসলমান ব্যাপার না, আসল বিষয় শোষণ আর নির্যাতনের৷ শুধু কংগ্রেস, সিপিএম, সিপিআই ছাড়া ভারতের মুসলমান গোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ওই সময় বেশ কনফিউজড ছিল৷ এ ক্ষেত্রে ‘বিশ্ব বিবেক জাগরণ পদযাত্রা’র দলটি একটি বড় অ্যাম্বাসেডরের কাজ করেছিল৷’
১৬ ডিসেম্বর৷ দেশ তখন স্বাধীন৷ ১৮ ডিসেম্বর লখনৌতে বিশাল আয়োজনে উদযাপিত হয় বিজয় দিবস৷ ভারতীয় বিমান, সেনা ও নৌবাহিনী, ক্যাডেট, স্কাউট, গার্লস গাইড ও জনসাধারণের সঙ্গে বাংলাদেশের ডেলিগেট হিসেবে জাতীয় পতাকাসহ অংশ নেয় পদযাত্রার দলটি৷ ওই অনুষ্ঠানের সংবাদ ওই সময় ভারত ও বিদেশি রেডিও, টিভি ও সংবাদপত্রেও ফলাও করে প্রচার করা হয়৷ ১৯ ডিসেম্বরে দেশে ফিরে আসে ‘বিশ্ব বিবেক জাগরণ পদযাত্রা’ দলটির যুবকরা৷
বিশ্ববিবেক জাগরণ পদযাত্রা'র দলটি স্বাধীনতার জন্য ভারতে হেঁটেছিল ১৪শ মাইল৷ মুক্তিযুদ্ধটা কেন ন্যায় যুদ্ধ- সেটি ভারতীয়সহ বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরাই ছিল তাদের কাজ৷ পদযাত্রীদের কাছে ওটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধ৷ যেসব ভারতীয় নেতা ‘বিশ্ব বিবেক জাগরণ পদযাত্রা’র আয়োজনে উদ্যোগী ভূমিকা রেখেছিলেন, বর্তমান সরকার তাদের এনে সম্মাননা দিয়েছে৷ এটাও ভাল উদ্যোগ৷ কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরেও পদযাত্রায় অংশ নেয়া ৩৮ জনকে কন্ঠযোদ্ধা বা ফুটবল যোদ্ধাদের ন্যায় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়নি৷ যা প্রত্যাশিত নয়৷ পাশাপাশি এ সরকারের উচিত গৌরবের এ ইতিহাসটি প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া৷