‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়েই দেশের মানুষ শঙ্কায়’
১১ অক্টোবর ২০১৯ডয়চে ভেলে : ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে শুধু ভারত লাভবান হচ্ছে বলে অনেকে মনে করছেন৷ আপনি কি মনে করেন?
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: এটা তো আসলে মনে করার বিষয় না, এটা স্বতঃসিদ্ধ বিষয়৷ এটা সবার কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে৷ দুই দেশের সম্পর্ক যেখানে হওয়া উচিৎ ছিল পারষ্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান এবং সবার স্বার্থ রক্ষা কোরে, সে সম্পর্কতো হচ্ছে না৷ এটা তো দিনের আলোর মতো পরিস্কার৷ আমাদের যে মূল দাবি তার কোনোটাই পাওয়া যাচ্ছে না৷ অথচ আমাদের তরফ থেকে সবকিছু দেয়া হচ্ছে৷ এটা এখন সর্বজনবিদিত৷ সর্বশেষ সফরে বাংলাদেশের কোন স্বার্থই রক্ষা হয়নি৷ ভারতের স্বার্থ তারা তো চাইবে? কিন্তু আমাদের স্বার্থ কে দেখবে?
তিস্তা নিয়ে কি বাংলাদেশের আর কোন আশা আছে?
সরকারের সঙ্গে ভারতের যে আলাপ আলোচনা হচ্ছে সেখানে তো আশার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ তিস্তায় পানি না পাওয়ার কারণে ওই অঞ্চলে চাষাবাদ বা জীববৈচিত্র্য যেভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সেটার সমাধান না করে উল্টো আমাদের নদী থেকে পানি দেয়া হচ্ছে৷ এ থেকে মনে হয়না যে, আমাদের হাতে আর কিছু আছে৷
নাগরিকপঞ্জি, মোদি আশ্বাস দিলেও তার সরকারের মন্ত্রীরা নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন? এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু আছে কি-না?
নিশ্চয়ই উদ্বেগ আছে৷ সরকারি দলের একজন মন্ত্রী যখন এসব কথা বলেন তখন তো আপনাকে ভাবতে হবে৷ তাছাড়া দুই দেশের যে যৌথ বিবৃতি সেখানে তো এসব নিয়ে কিছুর উল্লেখ নেই৷ এটাতো যৌথ বিবৃতিতে উঠে আসার কথা ছিল৷ এটাইতো এখন বড় প্রশ্ন৷ বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন কিছু বিবৃতিতে আসেনি৷ অথচ তাদের স্বার্থের বিষয়টি পরিস্কারভাবে তুলে এনেছে৷ এটা এখন পরিস্কার যে, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি একেবারেই নতজানু অবস্থায় চলে গেছে৷
নানা ধরনের আশ্বাসের পরও সীমান্ত হত্যা শূণ্যে আসছে না৷ এখনও সীমান্তে মানুষ মারা যাচ্ছেন৷ এটা কেন বন্ধ হচ্ছে না?
দেখেন এখানেও যৌথ বিবৃতিতে এটা নিয়ে কিছুই বলা হয়নি৷ এ নিয়ে কোন ধরনের টাইমফ্রেমও তৈরি হয়নি৷
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘটতি তো বেড়েই চলছে৷ এই বাণিজ্য অসমতা কি দূর করা সম্ভব?
এটার জন্য তো রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে৷ তা না হলেতো এটার সমাধান হবে না৷ এ কারণেই এর কোন সমাধান হচ্ছে না৷
বাংলাদেশ কী তাহলে নতি স্বীকার করছে বলে আপনি মনে করেন?
এটা তো বাংলাদেশের সবারই ধারণা৷ দেশের মানুষ মনে করেন, সরকার শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশের সব স্বার্থ যেভাবে বিসর্জন দিচ্ছে তাতেতো নতি স্বীকারের বিষয় না, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের বিষয়টা এখানে চলে আসে৷ দেশের মানুষের কাছেতো এটা বড় ধরণের শঙ্কা৷
বাংলাদেশের কূটনীতি কি তাহলে ব্যর্থ?
কূটনীতিতো রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার৷ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যদি দেশের পক্ষে না থাকে, তাহলে কূটনীতিকরা কি করবেন? আগে তো আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ তারপর কূটনীতিকরা কাজ করবেন৷
দেশে কি জাতীয় ঐকমত্যের অভাব রয়েছে?
জাতীয় ঐক্যমত্যতো জাতির পক্ষেই আছে৷ যেখানে একটা অনির্বাচিত সরকার থাকে সেখানেতো তারা জনগনের মতের পক্ষে থাকে না৷ তারাতো জাতির মতের বিরুদ্ধে গিয়ে সরকার গঠন করেছে৷
চীন ও ভারতের সঙ্গে ভারসাম্য নীতি বজায় রেখে চলতে গিয়ে কি বাংলাদেশকে এই ধরনের ছাড় দিতে হচ্ছে?
যে দেশের কথাই বলেন, দিন শেষে দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার তা না থাকলে কোনো সিদ্ধান্তই আপনি পক্ষে পাবেন না৷ আপনার সদিচ্ছা থাকলে আপনি যে চুক্তিই করেন সেখানে এর প্রতিফলন থাকবে৷ কোনো দেশই নিজের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে অন্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না৷ বাংলাদেশেরও উচিৎ না৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷