1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমির হামজার স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাহার

১৮ মার্চ ২০২২

সমালোচনার ঝড় ওঠায় দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা থেকে আমির হামজার নাম বাদ দিয়েছে সরকার।

https://p.dw.com/p/48fvZ
ছবি: AudioVision

ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবর অনুযায়ী, শুক্রবার ৯ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সেখানে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত আমির হামজার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে৷ 

এবারের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত ১০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হয় গত ১৫ মার্চ৷  প্রয়াত আমির হামজার নাম ঘোষণা করা হয় সাহিত্য ক্যাটাগরিতে৷ নাগরিক মহলে অচেনা আমির হামজার নাম দেখে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেন৷ ‘বাঘের থাবা', ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি' ও ‘একুশের পাঁচালি' নামে আমির হামজার তিনটি বইয়ের হদিস পাওয়া যায়৷ তার জন্মস্থান মাগুরায় তিনি গানের আসরে বসে গান লিখতেন, সুর করতেন বলে অনেকে তাকে ‘চারণ কবি' হিসেবে চিনতেন৷ তিনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন বলে স্থানীয়রা জানায়৷ 

তবে তিনি ১৯৭৮ সালে আমির হামজা একটি খুনের মামলার প্রধান আসামি ছিলেন বলেও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসে৷ বিচারিক আদালতের রায়ে ওই মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা হলেও পরবর্তীতে বিএনপি সরকারের আমলে ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়' সাধারণ ক্ষমা পান৷ আমির হামজার ছেলে আসাদুজ্জামান সরকারি কর্মকর্তা৷ এখন তিনি খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন৷  

২০১৯ সালে মারা যাওয়া আমির হামজাকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে তার ছেলের তৎপরতার কথাও আসে সংবাদ মাধ্যমে৷ 

এ বিষয়ে মন্ত্রী মোজাম্মেল বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা পত্রপত্রিকায় দেখেছি, লক্ষ্য করেছি বিভিন্ন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মতামত৷ আমি খতিয়ে দেখি সেগুলো সঠিক অভিযোগ কিনা৷ যেমন- মার্ডার, এগুলোর সাথে সম্পৃক্ত কিনা৷ তার সাহিত্যকর্ম কী আছে, সেগুলো ভালো করে খতিয়ে দেখবো৷” 

২০২০ সালে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদের সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তি নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল৷ সোশাল মিডিয়ায় অনেকের সমালোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশসহ টেলিভিশন টক শোর আলোচনার বিষয়বস্তুও হয়ে উঠেছিলেন রইজ উদ্দিন৷ সমালোচনার মুখে সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করে রইজকে বাদ দিয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ৷ তিনি সে সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, "কেন দিলো, কেনই বা কেড়ে নিলো!” 

স্বাধীনতা পুরস্কারের  জন্য মনোনীতদের সাধারণত ২৫ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার দেওয়া হয়৷ মনোনীতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী৷ রইজ উদ্দিনের মতো আমির হামজার বিষয়টিও পুনর্বিবেচনার সুযোগ আছে কিনা- এ প্রশ্নে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, "হ্যাঁ, তা তো আছেই৷” রইজ উদ্দিনের পর আমির হামজার নাম দেখে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ জাতীয় পদকের জন্য আমলানির্ভর মনোনয়ন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে৷ 

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার দেওয়ার জন্য রয়েছে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার সংক্রান্ত নির্দেশাবলী', যা সর্বশেষ ২০১৯ সালে সংশোধন করা হয়৷ সেখানে বলা হয়, "স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বিধায় এই পুরস্কারের জন্য চূড়ান্তভাবে প্রার্থী নির্বাচনকালে দেশ ও মানুষের কল্যাণে অসাধারণ অবদান রাখিয়াছেন, এমন সীমিত সংখ্যক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেই বিবেচনা করা হইবে৷” নির্দেশাবলিতে রয়েছে, পুরস্কারের সংখ্যা সাধারণভাবে কোনো বছর ১০টির বেশি হবে না৷ তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে সংখ্যা বাড়ানো কিংবা কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷ 

পুরস্কারের পদ্ধতিসহ নির্দেশাবলিতে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসে পরবর্তী বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব আহ্বান করে সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগে এবং এর আগে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার বা স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের কাছে চিঠি পাঠাবে৷   

"মন্ত্রণালয় বা বিভাগসমূহ নিজ নিজ কার্যসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পুরস্কারের জন্য এবং ইতঃপূর্বে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার বা স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তগণ নির্ধারিত যে যে কোনো ক্ষেত্রে পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করিতে পারিবে/পারিবেন৷ ” 

এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে পাওয়া নামের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করবে ‘প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি'৷ যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রস্তাব জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনা ও সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপন করা হয়৷নির্দেশিকায় বলা হয়, মন্ত্রণালয় বা বিভাগের থেকে প্রস্তাবের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিব প্রস্তাবে স্বাক্ষর করবেন৷ 

এ বছর সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য আমির হামজার নাম  প্রস্তাব করেছেন বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি তা স্বীকার করেছেন৷ 

বাণিজ্য সচিব প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সদস্য এবং জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে ‘সহায়তাদানকারী' কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত তপন কান্তি ঘোষ৷   

এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য