1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর হামলা ও চাপ বাড়ছে

৩ জানুয়ারি ২০২৪

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র তিনদিন বাকি। শেষ মূহুর্তে নানাভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর চাপ বাড়ছে। এই চাপ দিতে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহারেরও অভিযোগ উঠেছে।

https://p.dw.com/p/4apmE
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের অন্তত ৮০ জন প্রার্থীকে আতঙ্কে রেখেছেন আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের অন্তত ৮০ জন প্রার্থীকে আতঙ্কে রেখেছেন আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।ছবি: Syed Mahamudur Rahman/NurPhoto/picture alliance

বিএনপির বর্জনের মুখে এবারের নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি এবং প্রার্থী বাড়াতে আওয়ামী লীগ নতুন কৌশল নেয়। তাই বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র , ডামি সবার প্রতি উদারতা দেখানোর নীতি অবলম্বন করে দলটি। প্রধানমন্ত্রী  ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাও স্বতন্ত্রদের উৎসাহিত করেন। কিন্তু এতে আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্রদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যান দলের নোমিনেশন পাওয়া নৌকার প্রার্থীরা। এছাড়া জাতীয় পার্টি, ১৪ দলীয় জোট ও সরকারের সমর্থক ছোট ছোট দলের যারা একটি করে আসনের আশায় আছেন, তারাও নানা কৌশলে পার পেতে চাচ্ছেন

আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের অন্তত ৮০ জন প্রার্থীকে আতঙ্কে রেখেছেন আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অভিযোগ- স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে এখন নতুন ধরনের চাপ তৈরি করা হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর।

বুধবার নোয়াখালী -৪ ( সদর- সুবর্ণচর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন শাহীন সংবাদ সম্মেলন করে তার নেতা-কর্মীদের ওপর অব্যাহত হামলার অভিযোগ করেছেন।তিনি বাড়ি-ঘরে হামলারও অভিযোগ করেন। আর এই অভিযোগ নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর লোকজনের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার রাতে গাইবন্ধা-৩(পলাশবাড়ি-সাদুল্লাপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুল হক সরকারের কর্মীদের ওপর হামলা হয়। পুলিশকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ।

প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ না করলে এই হামলা আরো বাড়বে: মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন শাহীন

মঙ্গলবার বরিশাল-২( বানারীপাড়া-উজিরপুর) স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাইজুল হক রাজুর সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে ১৫টি মোটর সাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়। আহত হন ২০ জন নেতা-কর্মী। ফাইজুল হক এই হামলার জন্য নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননের লোকজনকে দায়ী করেছেন।

শরিয়তপুর-২ ( নড়িয়া-সখিপুর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা. খালিদ শওকত আলীর নির্বাচনী মিছিলে বোমা হামলা হয় গত ৩১ ডিসেম্বর। ওই আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা মার্কার এনামুল হক শামী৷ তিনি একজন উপমন্ত্রী।

পাবনা-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হামিদ মাস্টার নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মকবুল হোসেনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে দফায় দফায় হামলা, মারধরের অভিযোগ করেছেন সংবাদ সম্মেলন করে।

নির্বাচন কমিশন এ পর্যন্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রায় ৩০০ অভিযোগ পেয়েছে। তার মধ্যে ৭০ ভাগ অভিযোগই নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ৫৫ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আছেন।

তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরাও কোথাও কোথাও হামলা চালাচ্ছেন নৌকার সমর্থকদের ওপর। আবার কোনো কোনো ধনী স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে টাকা ছাড়ানোর অভিযোগও উঠেছে। ফরিদপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের বিরুদ্ধে টাকা ছড়ানোর অভিযোগ নৌকার প্রার্থী শামীম হকের। আর শামীম হকের সমর্থকদের বিরুদ্ধে অব্যাহত হামলার অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের।

আমার কর্মী সমর্থকদের হুমকি ও মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হচ্ছে: জাফর আলম

এদিকে কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে যেতেও বাধ্য হছেন। এই সংখ্যা আগামী দুই-একদিনে আরো বাড়তে পারে।

কক্সবাজার-১  আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম অভিযোগ করেন যে, তার নেতা-কমীদের ওপর অব্যাহত হামলার পর এখন একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি অভিযোগ করেন, "এই আসনে নৌকার প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার পর কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীমের পক্ষে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কাজ করছে। আমার কর্মী সমর্থকদের হুমকি ও মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া হচ্ছে। তার লোকজন বলছেন, যেকোনো উপায়ে তাকে পাস করানো হবে।” জাফর আলম আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হলেও তিনি দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

নোয়াখালী -৪ ( সদর- সুবর্ণচর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন শাহীন বলেন ,"গত এক সপ্তাহ ধরে আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। তারা আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন।  আমার এক সমর্থককে অপহরণ করা হয়েছে। তাকে উদ্ধারের পরও থানার ওসি কোনো মামলা নেননি।”

সংঘাত সংঘর্ষ যা হচ্ছে তা স্থানীয় সমস্যা: এস এম কামাল হোসেন

তিনি নির্বাচন কমিশনে  অভিযোগ করেছেন কিন্তু এখনো কোনো প্রতিকার পাননি। তার কথা, "প্রশাসন নিরপেক্ষ আচরণ না করলে এই হামলা আরো বাড়বে।” তার অভিযোগ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন দাবি করেন, "সরকার ও নির্বাচন কমিশন তাদের নীতিতে অটল আছে। নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ। আওয়ামী লীগেরও একই নীতি। স্থানীয় পর্যায়ে হয়তো কেউ প্রভাব দেখাতে হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে।”

তার কথা, "আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নৌকার কোনো প্রার্থীকে কোনো সুবিধা দিতে বলা হয়নি। প্রশাসনও নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। সংঘাত সংঘর্ষ যা হচ্ছে তা স্থানীয় সমস্যা। আমার কথা হচ্ছে,, আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো।”

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বুধবার নির্বাচন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে হামলা ও সহিংসতার প্রশ্নে বলেন, "যেখানেই সহিংসতা হবে সেখানেই নির্বাচন কমিশন অ্যাকশনে যাবে। আমাদের যতগুলো আয়োজন সকল আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য শান্তি-শৃঙ্খলার সঙ্গে ভোট পরিচালনা করা।পরিবেশ সুন্দর করার জন্য ও সবাই যাতে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারে সেই জন্যই সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে।যতটুকু দেখার সুযোগ হয়েছে, আমরা যতটুকু বাইরের পরিবেশ দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য