স্পেস স্টেশনে সব দায়িত্ব নভোচারীদেরই কাঁধে
২৯ মার্চ ২০১৪ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উপরে ভাসমান আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন আইএসএস৷ ২০০০ সাল থেকে নভোচারীরা এখানে একটানা কাজ করে চলেছেন৷ জার্মানির আলেক্সান্ডার গেয়ার্স্ট মহাকাশের এই ল্যাবে যাবার আগে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অতীতে মানুষ সমুদ্রতটে দাঁড়িয়ে যেভাবে ভাবতো ওপারে কী আছে, আজ আমরাও ঠিক সেই মনোভাব নিয়ে মহাকাশে যাই৷ তখন মানুষ অজানাকে আবিষ্কার করতে জাহাজে করে পাড়ি দিতো৷ আসলে মানবজাতি আবিষ্কারের নেশায় মত্ত৷''
অ্যামেরিকার টেক্সাস রাজ্যের হিউস্টনে প্রশিক্ষণের একটা অংশ সারা হয়৷ প্রতিটি পদক্ষেপ বার বার অনুশীলন করানো হয়৷ কারণ পরে তো আর পরীক্ষার কোনো অবকাশ নেই৷ ৪ বছর ধরে গেয়ার্স্ট মহাকাশ অভিযানের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ বেশ কয়েক ঘণ্টা স্পেসস্যুট পরে থাকতে হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা সবচেয়ে কঠিন প্রশিক্ষণের অন্যতম৷ প্রায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা এই পোশাক পরে থাকতে হয়৷ প্রবল চাপ থাকে৷ বায়ুশূন্য অবস্থায় এটাই তো রক্ষাকবচ৷ অর্থাৎ বায়ুমণ্ডলের এক তৃতীয়াংশ চাপ থাকে পোশাকের মধ্যে৷ প্রতিটি মুভমেন্ট, হাত দিয়ে কিছু ধরা মানে যেন এক টেনিস বল পিষে দেওয়া৷ বুঝতেই পারছেন, ৭ ঘণ্টা ধরে এমনটা করে গেলে অবশেষে খুব ক্লান্ত লাগে৷''
আইএসএস-এ নভোচারীরা একাধারে বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী৷ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ তাঁদেরই করতে হয়৷ এছাড়া ল্যাবে পরীক্ষার কাজ তো আছেই৷ মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ছাড়াও এমন অনেক বিষয় আছে, যেগুলি পৃথিবীতে কাজে লাগে৷ যেমন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বাইরে বিভিন্ন পদার্থের আচরণ গবেষণা করা৷ নভোচারীদের নিজস্ব বিষয়ের বাইরেও অনেক কিছু জানতে হয়৷ গেয়ার্স্ট বলেন, ‘‘স্পেস স্টেশনে নভোচারী হিসেবে আমরা তো শুধু নিজেদের জন্য বিজ্ঞান চর্চা করছি না৷ ভূ-পৃষ্ঠে অনেক বিজ্ঞানীদের সাহায্য করছি৷ প্রত্যেকটি এক্সপেরিমেন্ট এক বিশাল টিমের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে করা হয়৷ এর অর্থ, শুধু আমার বিষয় – অর্থাৎ ভূ-বিজ্ঞান নয়, আরও অনেক বিষয়ে আমাকে গবেষণা করতে হয়৷''
নভোচারী হবার আগে আলেক্সান্ডার আগ্নেয়গিরি নিয়ে কাজ করেছেন৷ এখন তিনি ভবিষ্যৎ মঙ্গলগ্রহ অভিযানের ক্ষেত্রে নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করবেন৷ মহাকাশের স্বপ্ন শুধু স্পেস স্টেশন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, আরও দূরে পাড়ি দেওয়া প্রত্যেক নভোচারীর স্বপ্ন৷ চাঁদ, গ্রহাণুর বলয়, তারপর মঙ্গলগ্রহ৷ এই মুহূর্তে আমাদের নাগালে মঙ্গলগ্রহই সবচেয়ে আকর্ষণীয় মহাজাগতিক বস্তু৷ বায়ুমণ্ডলের দিকে তাকালে বোঝা যায়, এই গ্রহ এককালে প্রাণের উপযুক্ত ছিল৷ ভূ-পৃষ্ঠে তরল পানি ছিল৷ এখন জায়গাটি মরু অঞ্চলের মতো শূন্য৷ পৃথিবীরও যাতে একই দশা না হয়, তা কীভাবে আমরা নিশ্চিত করবো?''
আলেক্সান্ডার গেয়ার্স্ট আপাতত এক সোয়ুজ রকেটে করে আইএসএস-এর উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবেন৷ কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে৷ মে মাসে অভিযান শুরু হওয়ার কথা৷ ৬ মাসের জন্য তিনি মহাকাশ থেকে পৃথিবী পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন৷ তৃতীয় জার্মান হিসেবে তিনি আইএসএস-এর বাসিন্দা হবেন৷
বিশেষ ঘোষণা: এই সপ্তাহের অন্বেষণ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন এখানে৷