কঠিন কাজ
৯ নভেম্বর ২০১৩পৃথিবী থেকে আকাশ দেখাটা যতটা ইন্টারেস্টিং, আকাশ থেকে পৃথিবী দেখা তার চেয়ে অনেক বেশি ইন্টারেস্টিং৷ যেন ঝলমল করছে – বিশেষ করে রাইনহোল্ড এভাল্ড-এর চোখে৷ রাইনহোল্ড ১৯৯৭ সালে একটি জার্মান-রুশ অভিযানে নভোচারী ছিলেন৷ ইএসএ-র নভোচারী রাইনহোল্ড এভাল্ড বলেন, ‘‘কক্ষপথে পৌঁছনোর কিছু পরেই আমি পোর্টহোল দিয়ে দেখতে পাচ্ছিলাম, কী আশ্চর্য সুন্দর দৃশ্য! মেঘ আর পানি, কেননা পৃথিবীর অধিকাংশই হল মেঘ আর পানি৷ অন্তত মাটির ৪০০ কিলোমিটার ওপর থেকে দেখলে৷''
সাত বছর ধরে রাইনহোল্ড তাঁর অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন৷ বিশেষ করে মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় শরীরটাকে অভ্যস্ত করতে হয়৷ এছাড়া মহাকাশে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শিখতে হয়৷
নভোচারীদের প্রশিক্ষণের ঠিক এই অংশটাই চলে কোলোনে জার্মান এয়ারোস্পেস প্রতিষ্ঠান ডিএলআর-এ৷ ‘স্কিন বি' এক্সপেরিমেন্টটিতে ভূপৃষ্ঠে নভোচারীর ত্বকের আর্দ্রতা মেপে দেখা হয়৷ মহাকাশযানে নভোচারী স্বয়ং তাঁর ত্বকের আর্দ্রতা মেপে দেখেন – একবার দু'বার নয়, সাতবার৷ একটি যন্ত্র তার খুঁটিনাটি ভিডিও হিসেবে দেখাতেও পারে৷
বিজ্ঞানীরা জানতে চান, ত্বকের উপর মহাকাশযাত্রার কী প্রভাব পড়ে৷ ইতিমধ্যেই জানা গেছে, ত্বক মহাকাশে খুব তাড়াতাড়ি বুড়িয়ে যায়, অন্যদিকে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমে যায়৷
আরো একটি এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কোন পর্যায়ে আছে, তা পরীক্ষা করা হয়৷ সে জন্য পৃথিবী থেকেই বিভিন্ন কোষসমষ্টি মহাকাশে পাঠানো হয়৷ এছাড়া ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, যা দিয়ে নভোচারীরা নিজেরাই নিজেদের রক্তের নমুনা নিতে পারেন৷ নমুনাগুলো আবার আধারে পোরা হয়, তারপর পুরোটা এই ইনকিউবেটরে ঢোকানো হয়৷ এভাবে পৃথিবীতে বসা বিজ্ঞানীরা নমুনাগুলো সরাসরি বিশ্লেষণ করতে পারেন৷
এ সবই এখন আলেক্সান্ডার গ্যার্স্ট-কে শিখতে হবে, কেননা তিনি তাঁর প্রথম মহাকাশযাত্রার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন৷ শক্ত প্রশিক্ষণ, জটিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এ সবে তাঁর কিছু আসে যায় না৷ তাঁর কাছে সবচেয়ে সমস্যাকর ছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণের সবচেয়ে শক্ত কাজ ছিল, তিনমাসের মধ্যে রুশ ভাষা শেখা৷ সেটা আমার খুবই কঠিন মনে হয়েছিল৷''
এছাড়া আলেক্সান্ডার গ্যার্স্ট-কে মহাকাশযানের প্রতিটি অংশ জানতে হয়েছে, চিনতে হয়েছে – বিশেষ করে, সেগুলো কীভাবে কাজ করে৷ নভোচারীদের যাতে বাড়ির জন্য মন কেমন না করে, সেজন্য তারা ব্যক্তিগত কিছু জিনিসপত্র সঙ্গে নিতে পারেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের খুব বেশি জায়গা নেই৷ জুতোর বাক্সর সাইজের একটি ছোট ব্যাগ, তাতে আমাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রাখতে পারি৷ তার অধিকাংশই বোধহয় এমন হবে, যাতে আমার পৃথিবীর কথা মনে পড়ে: বন্ধুদের, বাড়ির লোকেদের ছবি, আর স্বভাবতই আমার মিউজিক, যা আমার কাছে খুবই জরুরি৷ ওপরে একটা এমপি-থ্রি প্লেয়ার আছে কিনা৷ কাজেই আমি আমার সব মিউজিক একটা হার্ড ডিস্ক ভরে ওপরে নিয়ে যাব৷''
২০১৪ সালের মে মাসে আলেক্সান্ডার গ্যার্স্ট আকাশে উঠবেন, মহাকাশে৷ কিছু কিছু নভোচারীর সেজন্য বছর দশেকের প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে৷ নভোচারীদের তাতেও আপত্তি নেই৷ আপত্তি কেন? তাতেই তো তাদের আনন্দ: মহাকাশ সম্পর্কে জানা, সেটা তাদের ব্যক্তিগত মিশন, ব্যক্তিগত অভিযান৷