সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়ন্ত্রণ কতটা জরুরি
২ নভেম্বর ২০১৯ফেসবুক, ট্যুইটার-এর মতো সোশ্যাল মিডিয়া মুক্ত গণমাধ্যমের সম্ভাবনা তৈরি করেছে৷ দ্রুত ও অবাধ মতপ্রকাশের মঞ্চ হিসেবে উপমহাদেশে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছে পশ্চিমী এই মাধ্যমগুলি৷ রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের বিদ্ধ করছে এই সমালোচনা৷ আবার অনেক ক্ষেত্রে স্বাধীনতার সুযোগে শালীনতার সীমা অতিক্রম করছে বিরোধীরা৷ তার থেকে বড় কথা, একে হাতিয়ার করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, বিদ্বেষ রটানো হচ্ছে৷বাক স্বাধীনতা বজায় রেখে অপপ্রচার নিয়ন্ত্রণ করার মধ্যে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারের দাবি উঠছে৷
এর পথ যখন খোঁজা চলছে, তখনই একের পর এক গ্রেফতারির ঘটনা সামনে আসছে৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কার্টুন আঁকা, তাঁর ছবি বিকৃতি বা কুরুচিকর মন্তব্যের জন্য পুলিশি হয়রানির মুখে পড়েছেন অধ্যাপক থেকে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী৷ আবার কট্টর সমালোচনা করেও গ্রেপ্তার হয়েছেন বিরোধী দলের নেতা৷ সম্প্রতি কংগ্রেস নেতা ও সাংবাদিক সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারি ঘিরে হইচই হয়েছে৷ দীর্ঘদিন ধরেই ফেসবুকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কট্টর সমালোচনা করে চলেছেন তিনি৷ তাঁর বিরুদ্ধে এ জন্য থানায় অভিযোগও জমা পড়ে৷ গত মাসে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়৷ এখন তিনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন৷ সন্ময়ের অভিযোগ, ‘‘রাজ্যে ব্যাপক অরাজকতা চলছে৷ তার বিরুদ্ধে আমি লিখেছি, সে জন্য গ্রেফতার করে নেবে? পরোয়ানা ছাড়াই আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছে, মারধর করেছে৷'' টাটার গাড়ি কারখানা ও জমির লড়াইয়ের জন্য পরিচিত সিঙ্গুরের বিজেপি কর্মী চন্দন ভট্টাচার্যকে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুরুচিকর পোস্টের জন্য গ্রেফতার করা হয়৷ মু্খ্যমন্ত্রীর ছবি বিকৃত করার জন্য অতীতে প্রিয়াংকা শর্মা নামে বিজেপি যুব মোর্চার নেত্রীকে গ্রেফতার হতে হয়৷
এই গ্রেফতারির তালিকায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রও রয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি ব্যঙ্গাত্মক কার্টুনের জন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হয়৷ সন্ময়ের মতো তাঁর ক্ষেত্রেও বেশ হইচই হয়েছিল৷ সেই অধ্যাপকও কিছুটা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে৷ তিনি বলেন, ‘‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকার অর্থ ঘৃণা বা বিদ্বেষ ছড়ানো নয়৷ আবার সরকারের সমালোচনা করলেই গ্রেফতারি অসহিষ্ণুতার লক্ষণ৷ তাই একটা নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত৷'' কোনও পোস্ট আপত্তিকর না বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা, এটা কে ঠিক করবে? অধ্যাপকের প্রস্তাব, ‘‘এখানে তৃতীয় একটি স্তর থাকা উচিত৷ মানবাধিকার নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গড়া হোক৷ কোনও অভিযোগ উঠলে এই কমিটিই বিচার করবে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে৷''
সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট ঘিরে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টে অনেক মামলা বিচারাধীন৷ সেই মামলাগুলি সর্বোচ্চ আদালতে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবর, বিদ্বেষ, গুজব, দেশবিরোধী প্রচার রুখতে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণবিধি চূড়ান্ত করা হবে৷ যদিও শীর্ষ আদালত বলেছে, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এ নিয়ে শুনানি হবে৷ সরকার চায়, কোনও আপত্তিকর বার্তার উৎসে থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য দিক হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক৷ কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার পরিচালকরা এ ব্যাপারে তাদের অক্ষমতার কথা জানিয়েছে৷ কী ধরনের বিধি হতে পারে, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷ তবে বিধির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ জারি এই সমস্যার সমাধান নয় বলে মনে করেন তৃণমূল নেতা নির্বেদ রায়৷ তাঁর মতে, ‘‘চারজনের আড্ডায় যে কোনো কথা বলাই যায়, সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখে দিলে সমস্যা হয়৷ তবে একটা সময় আসবে যখন এই মাধ্যম মানুষের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারবে না৷ সেটা ভাবনাচিন্তার একেবারে নীচের স্তরে চলে যাবে৷ রাষ্ট্র বা রাজনৈতিক দলও তো নিজেদের প্রচার এটিকে কাজে লাগাচ্ছে৷”