ওবামা-পুটিন টেলিফোন আলাপ
২ মার্চ ২০১৪সপ্তাহখানেক আগে ইউক্রেনের রুশপন্থি প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রতিক্রিয়ায় ক্রাইমিয়ায় সৈন্য পাঠান পুটিন৷ এর আগে তিনি ইউক্রেনে সৈন্য পাঠাতে রুশ সংসদের উচ্চকক্ষের সমর্থন পান৷
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, ক্রাইমিয়ার সংসদ ভবন, বিমানবন্দর, টেলিভিশন কেন্দ্র, টেলিযোগাযোগ অফিস সহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ছয় হাজার রুশ সেনা অবস্থান নিয়েছেন৷
ওবামা-পুটিন টেলিফোন আলাপ
শনিবার দিন শেষে এই দুই নেতার মধ্যে টেলিফোনে প্রায় দেড় ঘণ্টা কথা হয়৷ হোয়াইট হাউসের দেয়া এ সংক্রান্ত বিবৃতিতে দুই নেতার মধ্যে কথাবার্তায় উত্তেজনার আভাষ পাওয়া গেছে৷ শীতল যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এই দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে আলোচনার এমন পরিবেশ খুব একটা দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা পুটিনকে বলেন, ইউক্রেনে সৈন্য পাঠিয়ে রাশিয়া আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে৷ এছাড়া ইউক্রেনীয়দের সার্বভৌমত্বের ওপর রাশিয়ার হস্তক্ষেপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ওবামা৷ নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষমতা ইউক্রেনীয়দের রয়েছে বলে পুটিনকে মনে করিয়ে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
তবে রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিন ওবামাকে জানিয়েছেন, ক্রাইমিয়ায় থাকা রুশভাষী জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাশিয়ার৷ উল্লেখ্য, ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ক্রাইমিয়ার প্রায় সাড়ে ৫৮ শতাংশ মানুষ এথনিক রুশ এবং সেখানকার প্রায় ৭৭ শতাংশ জনগণ রুশ ভাষায় কথা বলে৷
এর জবাবে ওবামা পুটিনকে বলেন, এথনিক রুশদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও ‘অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ' বা ওএসসিই-এর মাধ্যমে ক্রাইমিয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক পাঠানো যেতে পারে৷ আর রাশিয়া যেহেতু এই দুই সংস্থারই সদস্য, তাই রাশিয়াও এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে৷
তবে এই দুই নেতার মধ্যে টেলিফোন আলাপের পর রাশিয়ার অবস্থান পরিবর্তিত হবে বলে মনে হচ্ছে না৷ বরং এই আলাপ নিয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে, তাতে অভিযান আরও বাড়ানোর আভাস পাওয়া গেছে৷ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘ইন্টারেস্টস' রক্ষার অধিকার পুটিনের রয়েছে৷
পুটিনের সাথে কথা বলা ছাড়াও ওবামা ফ্রান্স ও ক্যানাডার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ইউরোপ ও ক্যানাডার অন্তত ছয়জন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে শনিবার কথা বলেন৷ এদিকে আগামী সপ্তাহে ইটালির রোমে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জন কেরির সাক্ষাৎ হওয়ার কথা রয়েছে৷
যুক্তরাষ্ট্র যা করতে পারে
রাশিয়াকে তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে ওবামা ইতিমধ্যে পুটিনকে জানিয়েছেন যে, আগামী জুন মাসে রাশিয়ার সোচিতে জি-৮ এর যে শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা, তার প্রস্তুতিমূলক বৈঠক বয়কট করবে যুক্তরাষ্ট্র৷ এর বাইরে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও বাড়াতে রাশিয়ার যে আগ্রহ, সেটা বন্ধ করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র৷ তাছাড়া ন্যাটোর মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব সহযোগী রয়েছে তাদের প্রতি এক ধরণের সামরিক সমর্থন দেখাতে পারে৷
অর্থাৎ, রাশিয়ার সঙ্গে শীতল-যুদ্ধকালীন সময়ের কোনো সম্পর্কে জড়াতে চাইবে না যুক্তরাষ্ট্র৷ কেননা সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস ও ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা সহ পররাষ্ট্রনীতির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়ার সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে৷
ইউক্রেনের প্রস্তুতি
দেশটির অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট ওলেক্সান্দর তুরচিনভ তাঁর দেশের সেনাবাহিনীকে ‘সর্বোচ্চ যুদ্ধ সতর্কাবস্থা'-য় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন৷ অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী আরসেনি ইয়াৎসেনইউক বলেছেন, রাশিয়া যদি সামরিক অভিযান শুরু করে, তাহলে সেটা হবে যুদ্ধের শুরু আর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্কের সমাপ্তি৷ এদিকে, ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ন্যাটোর সহযোগিতা কামনা করেছেন৷ এর জবাবে ন্যাটোর মহাসচিব আন্ডার্স ফগ রাসমুসেন শনিবার এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে রবিবার এক জরুরি বৈঠকে বসবে ন্যাটো৷
জার্মানির অবস্থান
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, ক্রাইমিয়ার ঘটনা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন৷ এছাড়া তিনি ইউক্রেনের ‘টেরিটোরিয়াল ইন্টেগ্রিটি রক্ষার' উপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷ শনিবার তিনি ইউক্রেনের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী আরসেনি ইয়াৎসেনইউকের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন৷ তবে তাঁদের মধ্যে কি নিয়ে কথা হয়েছে সেটা জানা যায়নি৷ ওদিকে, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের প্রতি রাশিয়ার শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স)