1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুপেয় পানি পায় না ২ কোটি মানুষ

২২ মার্চ ২০১৭

উপকূলে লবণাক্ততা, আর্সেনিক দূষণ আর ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় পানীয় জলের সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ৷ গ্রামাঞ্চলে ৩০ কিমি দূরে গিয়ে পানীয় জল সংগ্রহ করতে হচ্ছে আর শহরে গভীর নলকূপেও পাওয়া যাচ্ছে না সুপেয় পানি৷

https://p.dw.com/p/2ZkLJ
Bildergalerie Wasserverschwendung in Bangladesch
ছবি: MUFTY MUNIR/AFP/Getty Images

খুলনা শহর থেকে ৪০ কিমি দূরে দাকোপ উপজেলা৷ সেই উপজেলায় এখন পানীয় জলের প্রধান উৎস একটি গভীর নলকূপ৷ আগের নলকূপগুলো থেকে লবণ পানি ওঠে৷ তাই সেই পানি পান করা যায় না৷ দু'বছর হলো নতুন বসানো এই নলকূপটির পানি সুপেয়৷ এই নলকূপের পানি নিতে প্রতিদিন কম করে হলেও ৩০ হাজার মানুষ ভিড় করেন৷ ডয়চে ভেলেকে এই তথ্য জানান খুলনার সাংবাদিক হেদায়েত হোসেন৷

তিনি বলেন, ‘‘দূর দূরান্ত থেকে মানুষ পানি নিতে আসেন৷ নৌকা যোগে কলসি বা ড্রামে করে তাঁরা পানি নিয়ে যান৷ প্রতি কলসি পানি সংগ্রহ করতে খরচ পড়ে যায় ১০ টাকার মতো৷ তাও সবাই পান না সেই পানি৷’’

খুলনার উপকূলবর্তী কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপে চলছে লবণ পানির আগ্রাসন৷ দু-একটি গভীর নলকূপে সুপেয় পানি পওয়া যায়৷ বাকি নলকূপে লবণ পানি ওঠে৷ পুকুরের পানিই ভরসা৷ তবে সব পুকুরের পানি পানযোগ্য নয়, নয় নিরাপদ৷ তারপরও ঐ সব অঞ্চলে কিছু বড় বড় পুকুর আছে, যেখান থেকে মানুষ পানীয় জল সংগ্রহ করে৷

খুলানা দীঘলিয়া, রূপসা আর ফুলতার নলকূপের পানিতে রয়েছে আর্সেনিক৷ হেদায়েত বলেন, ‘‘আর্সেনিক, লবন পানির আগ্রাসন আর পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় এই অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট চলছে৷’’

খুলনা শহরে গভীর নলকূপে পানি পাওয়া যায় না৷ এই মৌসুমে তাই খুলনা শহরে পানীয় জলের সংকট চলছে বলে জানান হেদায়েত৷

বাংলাদেশের দক্ষিণের বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুরসহ ১৬টি জেলার কোনোটাতেই পর্যাপ্ত সুপেয় পানি নেই৷ সবখানেই লবণ পানির আগ্রাসন৷ কোথাও কোথাও আবার নলকূপের পানিতে রয়েছে আর্সেনিক৷

‘কলসি প্রতি খরচ হয় ১০ টাকার মত’

পিরোজপুরের সাংবাদিক দেবদাস মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের গ্রামের মানুষ পুকুরের পানির ওপরই নির্ভরশীল৷ তবে পুকুরগুলোর দীঘদিন সংস্কার হয় না৷ ফলে অনেক সময়ই এলাকাবাসীরা বাধ্য হয়ে দূষিত পানি পান করেন৷ সিডরের পর কয়েকটি দাতা সংস্থার উদ্যোগে পিরোজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় পুকুরের পানি বিশুদ্ধ করে পানের উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ এ জন্য পন্ড স্যান্ড ফিল্টার বা পিএসএফ বসানো হয় পুকুরে৷ কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তার অধিকাংশই আজ অকেজো হয়ে গেছে৷’’

আর যেগুলো সচল আছে তা থেকে পানি নিতে দূর দূরান্ত থেকে নারী-পুরুষরা ভিড় করছেন৷ কেউ কেউ আবার বৃষ্টির পানি ধরে রাখছেন পানীয় জলের জন্য৷

গতবছর ‘‘নেপোটিজম অ্যান্ড নেগলেক্ট: দ্য ফেইলিং রেসপন্স টু আর্সেনিক ইন দ্য ড্রিংকিং ওয়াটার অফ বাংলাদেশ'স রুরাল পুয়র’’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বা এইচআরডাব্লিউ জানায়, ‘‘বাংলাদেশের প্রায় দু’কোটি মানুষ আর্সেনিক ঝুঁকির ভেতর রয়েছে৷ এছাড়া প্রতিবছর ৪৩ হাজার মানুষ আর্সেনিকজনিত রোগে মারা যাচ্ছেন৷ দেশে খাওয়ার পানিতে আর্সেনিক শনাক্ত হওয়ার ২০ বছর পরও বাংলাদেশ সরকার এই সমস্যার প্রতিকারে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে৷’’

অনেক সময় বাধ্য হয়ে তাঁরা দূষিত পানি পান করেন: মজুমদার

এইচআরডাব্লিউ-র দাবি, ‘আর্সেনিক দূষণের শিকার অধিকাংশ মানুষের ত্বকে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না৷ অথচ আর্সেনিকের কারণে অনেকক্ষেত্রেই ক্যানসার, হৃদরোগ ও ফুসফুসের সমস্যা তৈরি হচ্ছে৷ তাই অনেকে জানেনই না যে তাঁরা আর্সেনিক সমস্যায় আক্রান্ত৷’’

এদিকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৫০ কোটি লিটার৷ কিন্তু সরবরাহ করা হয় মাত্র ২০০ থেকে ২০৫ কোটি লিটার৷ অর্থআৎ ৪৫ কোটি লিটার ঘাটতি থেকে যায়৷ ঢাকায় এক দশকে আড়াই মিটার হারে ভুগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাচ্ছে৷ এছাড়া ওয়াসার পানি পানযোগ্য কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷ তাই পানীয় জল হিসেবে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বোতলজাত পানির চাহিদা বাড়ছে৷

ওয়াটার এইড-এর হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের দু'কোটিরও বেশি মানুষ নিরপাদ পানি থেকে বঞ্চিত৷ তাদের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে প্রতিবছর পাঁচ বছরের কম বয়সি কমপক্ষে ৪,১০০ শিশু মারা যায় নিরাপদ পানি এবং সেনিটেশন সুবিধার অভাবে৷

প্রিয় পাঠক, এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য জানাতে পারেন নীচে মন্তব্যের ঘরে... 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান