1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুচিত্রা সেনের বাড়ি দখলমুক্ত

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৭ জুলাই ২০১৪

প্রায় তিন যুগ পর বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটি দখলমুক্ত হয়েছে৷ বুধবার পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাড়িটি দখলে নিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন৷

https://p.dw.com/p/1Ce4V
Haus der bengalischen Schauspielerin Suchitra Sen
ছবি: Harunur Rashid Swapan

বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িটি বুঝে নেবে জেলা প্রশাসন৷ বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে জামায়াত-নিয়ন্ত্রিত ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টের দখলে ছিল৷ উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়৷ গত ৪ মে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বাড়িটি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেয়া হয়৷ পাবনা জেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তারা বড়িটি ছেড়ে দিয়েছে৷

Indien Schauspielerin Suchitra Sen gestorben
৮৩ বছর বয়সে মারা যান সুচিত্রা সেনছবি: picture-alliance/AP

পাবনার সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মৌলবাদী জামায়াত চক্র দীর্ঘদিন ধরে বাড়িটি দখল করে ছিল৷ পাবনা জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় বাড়িটির নিয়ন্ত্রণভার জেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করবে৷

পাবনার সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. রামদুলাল ভৌমিক বলেন, ‘‘আমরা খুশি যে আমাদের ৫ বছরের আন্দোলনে বাড়িটি উদ্ধার করে সরকারের দখলে আনা সম্ভব হয়েছে৷ এখন আরেকটি বড় প্রক্রিয়া হচ্ছে ওই বাড়িতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা তৈরি করা৷'' ইতিমধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি৷ রামদুলাল ভৌমিক জানান, পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের এই বাড়িতেই কেটেছে মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের শৈশব ও কৈশোর৷

আর পাবনার একুশে বইমেলা উদযাপন পরিষদের কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘‘আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের সফলতায় সুচিত্রার বাড়িটি উদ্ধার হওয়ায় পাবনার সব মানুষ খুশি৷''

স্মৃতির আয়নায়

পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি৷ সেখানে তিনি বাবা-মা ও ভাইবোনের সঙ্গে শৈশব-কৈশোর কাটিয়েছেন৷ নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রার বিয়ে হয়৷ এরপর স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় চলে যান তিনি৷

সুচিত্রা সেনের বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত পাবনা পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে কর্মরত ছিলেন৷ ১৯৫১ সালে তিনি অবসরে যান৷ ১৯৬০ সালে বাড়িটি জেলা প্রশাসনের কাছে ভাড়া দিয়ে পরিবার নিয়ে কলকাতায় চলে যান করুণাময় দাশগুপ্ত৷ তখন জেলা প্রশাসন বাড়িটিকে সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার বানায়৷ এরপর আর সুচিত্রা সেনের পরিবারের কেউ পাবনায় ফিরে আসেননি৷

গত ১৭ জানুয়ারি কোলকাতায় ৮৩ বছর বয়সে মারা যান সুচিত্রা সেন৷ অবশ্য এর আগেই ১৯৭৮ সালে আকস্মিকভাবেই অভিনয় জীবনের ইতি টেনে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান তিনি৷

জামায়াত নেতাদের দখল ও উদ্ধার আন্দোলন

১৯৮৭ সালে পাবনার সেসময়ের জেলা প্রশাসক সৈয়দুর রহমান সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটিকে অর্পিত সম্পত্তি দেখিয়ে ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টকে ইজারা দেন৷ এই ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সুবহান এবং সেক্রেটারি হলেন জেলা জামায়াতের আইন বিষয়ক সম্পাদক আবিদ হাসান৷

Raima Sen Schauspielerin aus Indien
নাতনি রাইমা সেন যেন মহানায়িকারই ছায়া...ছবি: DW/P. M. Tewari

পরবর্তী সময়ে ইজারার টাকা পরিশোধ না করায় ১৯৯৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয় ইজারা বাতিল করে৷ এরপর ট্রাস্টের নেতারা বকেয়া পরিশোধ করে ১৯৯৫ সালের ১৫ আগস্ট ইজারা নবায়ন করান৷

পাবনাবাসী বাড়িটি দখলমুক্ত করে সেখানে সুচিত্রা সংগ্রহশালা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে ২০০৯ সালে পাবনা জেলা প্রশাসন বাড়িটির ইজারা বাতিল করে ইমাম গাজ্জালী ট্রাস্টকে দখল ছাড়ার নির্দেশ দেয়৷ কিন্তু জামায়াত নেতারা দখল না ছেড়ে উচ্চ আদালতে যান৷ আদালত তাঁদের পক্ষে স্থিতাবস্থা'র আদেশ দেন৷

২০১১ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী মঞ্জিল মোরসেদ বাড়িটি দখলমুক্ত করতে রিট করলে হাই কোর্ট বাড়িটি দখলমুক্ত করার নির্দেশ দেন৷ এরপর দখলকারীরা লিভ টু আপিল করেন৷ গত ৪ মে উচ্চ আদালত লিভ টু আপিল বাতিল করে বাড়িটি দখলমুক্ত করার নির্দেশ বহাল রাখেন৷ গত ১০ জুলাই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে বুধবার সকালে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বাড়িটিতে হাজির হয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য