সুইডেনে ধর্ষণ মামলা ফের চালু হচ্ছে আসাঞ্জের বিরুদ্ধে
১৩ মে ২০১৯সোমবার সুইডেনের রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি জানান, তাঁরা আসাঞ্জের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করতে যাচ্ছেন৷ যুক্তরাজ্য থেকে তাঁর ‘বহিঃসমর্পণ'ও চাওয়া হবে ওই আবেদনে৷
আইনজীবী ইভা-ম্যারি পারসন এক সংবাদ সম্মেলন বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ চালু এবং প্রাথমিক তদন্ত শেষ করতে চাইছেন তিনি৷ আসাঞ্জ লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয়ে থাকায় ২০১৭ সালে ওই তদন্ত থেমে গিয়েছিল৷
সাত বছর লণ্ডনের ওই দূতাবাসে আটকে থাকার পর গত মাসে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক আসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ পুলিশ৷ উইকিলসের মাধ্যমে গোপনীয় নথি ফাঁসের অভিযোগে আসাঞ্জকে বহিঃসমর্পণের আবেদন আসছে যুক্তরাষ্ট্র৷
সুইডিশ প্রসিকিউটরের কার্যালয় জানিয়েছে, ধর্ষণের অভিযোগে তারা আসাঞ্জকে গ্রেপ্তারের আবেদন করবেন৷এর ফলে তার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে৷
১০ বছর আগে ইকুয়েডর দূতাবাসে ‘পালানোর সময়' জামিনের শর্তভঙ্গের অভিযোগে আসাঞ্জকে ৫০ সপ্তাহের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷ সেই দণ্ড মাথায় নিয়ে তিনি এখন তিনি কারাগারে আছেন৷
সুইডেনে মামলা পুনর্জ্জীবিত করার আবেদনের পর আসাঞ্জকে কোথায় ফেরত পাঠানো হবে, সে নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে৷ এই মামলায় সুইডেনে তাঁর বহিঃসমর্পণ হবে, নাকি গোপনীয় নথি ফাঁসের অভিযোগে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র পাঠানো হবে৷
এক্ষেত্রে প্রথমে ব্রিটিশ আদালত একটি আদেশ দেবে৷ এরপর সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাবিদ সিদ্ধান্ত নিবেন, কোন আবেদনটি গ্রহণ করা হবে৷ তবে সুইডেনের আবেদন অগ্রাধিকার পেতে পারে বলে এক আইনজীবী জানিয়েছেন৷
সুইডিশ প্রসিকিউটররা আসাঞ্জের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অভিযোগ দাখিল করেছিলেন৷ যাতে দুইজন নারী অভিযোগ করেন, ২০১০ সালে এক সফরের সময় উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা তাঁদেরেক ধর্ষণ করেছেন৷ এখনও পর্যন্ত ওই নারীদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি৷
ওই অভিযোগ ওঠার পর সুইডেন থেকে ব্রিটেনে চলে যান আসাঞ্জ৷ এরপর সুইডেনে বহিঃসমর্পণের ভয়ে ২০১২ সালে লন্ডনে ইকুয়েডর দূতাবাসে পালিয়েছিলেন তিনি৷
আসাঞ্জ দূতাবাসে আটক থাকার মধ্যে সময় পেছানোর আবেদন করার সুযোগ শেষ হওয়ায় ২০১৭ মামলাটি স্থগিত করেন প্রসিকিউটররা৷ এবার তাঁর আটকের মাধ্যমে নতুনভাবে মামলাটি চালুর সুযোগ হলো৷ অভিযোগ প্রমাণ হলে সুইডেনে আসাঞ্জের চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷
উইকিলিকস ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অসংখ্য গোপন নথি ফাঁস করে সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন ৪৭ বছর বয়সি জুলিয়ান৷ ২০১২ সালে সুইডেনে বহিঃসমর্পণ ঠেকাতে যুক্তরাজ্যে জামিনের শর্ত ভেঙে তিনি ইকুয়েডরের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চান৷
এরপর থেকে যুক্তরাজ্যোর ইকুয়েডর দূতাবাসে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছিলেন তিনি৷ প্রায় সাত বছর পর গত মাসে ইকুয়েডর রাজনৈতিক আশ্রয় তুলে নিলে আসাঞ্জকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাজ্য পুলিশ৷
এদিকে, মামলার পুনরুজ্জীবনের ফলে অভিযোগকারী নারীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবী৷
‘বিস্মিত' আসাঞ্জের আইনজীবী
ব্রিটেনে জেলখাটার মধ্যে আসাঞ্জের বিরুদ্ধে সুইডেনের মামলাটি পুনরায় চালু করায় ‘গভীর বিস্ময়' প্রকাশ করেছেন তাঁর সুইডিশ আইনজীবী পার ই স্যামুয়েলসন৷
তিনি বলেন, ‘‘একজন মানুষকে এমন মানসিক পীড়ন দেওয়া খুবই অযৌক্তিক৷ কারণ তিনি ব্রিটেনে সাজা ভোগ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সাংবাদিকতার কারণে তাঁকে বহিঃসমর্পণের আবেদন ইতোমধ্যে করেছে৷''
মক্কেল আসাঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া নিয়েও সন্দিহান আইনজীবী স্যামুয়েলসন৷
এদিকে আসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা পুনর্জ্জীবনকে ধর্ষণের অভিযোগ থেকে তাঁর খালাসের সুযোগ হিসাবে দেখছেন উইকিলিকসের প্রধান সম্পাদক ক্রিস্টিন রাফনসন৷
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মামলাটি চালু করার জন্য ‘ভয়াবহ মাত্রায় রাজনৈতিক চাপের মধ্যে' আছেন সুইডিশ প্রসিকিউটর ইভা-ম্যারি পারসন৷ মামলাটি শুরু থেকেই ‘বাজেভাবে' এগোচ্ছিল৷
এমবি/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ, এপি, এএফপি)