উত্তর কোরিয়ার অর্কেস্ট্রা
১৫ মার্চ ২০১২প্যারিসে অর্কেস্ট্রার জলসা, এ আর নতুন কথা কি? কিন্তু বুধবার শহরে যে কনসার্ট হয়ে গেল, তার মেজাজই ছিল আলাদা৷ কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ঘটনাটিকে বিপ্লবও বলা যেতে পারে৷ এক দক্ষিণ কোরীয় কন্ডাক্টর'এর নেতৃত্বে আস্ত এক উত্তর কোরীয় অর্কেস্ট্রার সংগীত পরিবেশন সত্যিই অত্যন্ত বিরল ঘটনা৷
উত্তর কোরিয়ার মতো গোপনীয়তার বেড়াজালে বাঁধা সমাজ বিশ্বে আর কোথাও অবশিষ্ট নেই৷ মাঝে মধ্যে পরিবর্তনের দমকা হাওয়া দেখা দিলেও ঝড় ওঠার সম্ভাবনা দেখে না কেউ৷ এমনকি ডিসেম্বর মাসে সর্বোচ্চ নেতা কিম জং ইল'এর মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী তরুণ ছেলে কিম জং উন বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও সংশয় থেকেই গেছে৷ অতএব উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া সহ বাকি বিশ্বের উত্তেজনার চূড়ান্ত অবসানের স্বপ্ন দেখার সাহস এখনো কারো নেই৷
রাজনৈতিক আঙিনায় দুই মেরুতে থাকলেও ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিসত্ত্বার নিরিখে দেখলে দুই কোরিয়ার মানুষই একটি একান্নবর্তী পরিবারের মতো৷ দক্ষিণ কোরিয়ার কন্ডাক্টর বা অর্কেস্ট্রা পরিচালক মিয়ুং উন চুং তাই প্যারিসের জলসাকে ‘ফ্যামিলি কনসার্ট' হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ উত্তর কোরিয়ার ‘উনহাসু' সংগীত গোষ্ঠীর ৭৫ জন শিল্পীকে নেতৃত্ব দিতে পেরে তিনি অত্যন্ত সন্তুষ্ট৷ গত প্রায় ৩ দশক ধরে তিনি এই যৌথ সাংগীতিক উদ্যোগের জন্য চেষ্টা চালিয়ে এসেছেন৷ শুধু পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সংগীত নয়, কোরীয় উপদ্বীপের নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র নিয়ে কোরীয় সংগীতও পরিবেশন করেছে এই অর্কেস্ট্রা৷ চুং মনে করেন, বহির্বিশ্বের কাছে কোরিয়ার সাংস্কৃতিক পরিচয় এক৷ তাই রাজনৈতিক বিবাদ সরিয়ে রেখে এমন যৌথ উদ্যোগের সত্যি প্রয়োজন রয়েছে৷
এস্টোনিয়া ছাড়া ইউরোপে ফ্রান্সই একমাত্র দেশ, যার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে৷ গত বছর সেদেশ পিয়ং ইয়ং'এ সাংস্কৃতিক ও মানবিক সহযোগিতা বাড়াতে এক দপ্তর খুলেছে৷ তারই ফল পাওয়া গেল বুধবার৷ রেডিও ফ্রান্স'এর ফিলহার্মনিক অর্কেস্ট্রার সঙ্গে দুই কোরিয়ার শিল্পীরা এই অসাধারণ কনসার্ট পরিবেশন করার সুযোগ পেলেন৷ মিয়ুং উন চুং নিজে ২০০০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এই ফিলহার্মনিক অর্কেস্ট্রার নেতৃত্ব দিয়েছেন৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ