সিসিটিভি কি সন্ত্রাস রুখতে পারবে?
২৮ ডিসেম্বর ২০১৬সিসিটিভি বসানোর সমর্থকরা আপাতত যে দু'টি দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন, তার প্রথমটি ঘটে সপ্তাহ দুয়েক আগে রাজধানীর হ্যারমানস্ট্রাসে মেট্রো স্টেশনে৷ স্থানটি ব্রাইটশাইডপ্লাৎস থেকে তিন স্টপ দূরে৷ হ্যারমানস্ট্রাসে মেট্রো স্টেশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একজন পুরুষ কীভাবে এক তরুণীকে বিনা প্ররোচনায় পিছন থেকে লাথি মেরে সাবওয়েতে নামার সিঁড়ি দিয়ে ফেলে দিচ্ছে৷
ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মহিলার হাত ভেঙে যায়৷ ভিডিও ফুটেজ থেকে মহিলার আক্রমণকারীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়৷ ২৭ বছর বয়সি বুলগেরীয় যে বুলগেরিয়ায় পলায়ন করেছে, তদন্ত থেকে তা-ও জানা যায়৷
এ ধরনের দ্বিতীয় ঘটনা ঘটেছে ঐ বার্লিনেই, যেখানে গত ২৪শে ডিসেম্বর সাতজন কিশোর বা তরুণ এক রাস্তায় শোয়া নিরাশ্রয় ব্যক্তির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেবার চেষ্টা করে৷ আক্রমণটি ঘটে শ্যোনলাইনস্ট্রাসে মেট্রো স্টেশনে৷ ১৫ থেকে ২১ বছরের কিশোর ও তরুণরা এক ৩৭ বছর বয়সি নিরাশ্রয় ব্যক্তির বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেয়৷ আক্রান্ত ব্যক্তির কোনো ক্ষতি না ঘটলেও তাঁর জিনিসপত্র সব পুড়ে যায়৷ মেট্রো ট্রেনের এক ড্রাইভার সহ পথচারীরা একটি ‘ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার' ব্যবহার করে আগুন নিভিয়ে ফেলেন৷
পরে পুলিশ একটি সাবওয়ে ট্রেনের কামরায় সংশ্লিষ্ট কিশোর-তরুণদের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করলে পর, সন্দেহভাজনদের ছ'জন স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে ধরা দেয়৷ জানা যায় যে, তাদের সাতজন এসেছে সিরিয়া থেকে আর সপ্তম জন এসেছে লিবিয়া থেকে৷
আনিস আমরির কাহিনি
ব্রাইটশাইডপ্লাৎসের বড়দিনের বাজারে ট্রাক নিয়ে যে আক্রমণ চালায়, সেই আনিস আমরি কিন্তু ভিডিও নজরদারির ধার ধারেনি৷ ১৯শে ডিসেম্বর আক্রমণ চালানোর পর আমরি যে ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা সত্ত্বেও কী করে পুলিশে ও গোয়েন্দা বিভাগের নজর এড়িয়ে ফ্রান্স হয়ে ইটালি পৌঁছাল, তা নিয়ে এখনও জল্পনা-কল্পনা চলেছে৷ ২৪ বছর বয়সি টিউনিশীয় চারদিন পরে মিলানে ইটালীয় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়৷
জার্মান ডাব্লিউডিআর টেলিভিশন সংস্থার বিবরণ অনুযায়ী, আমরি নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের রুয়র শিল্পাঞ্চলের ১২টি বিভিন্ন মসজিদে গেছে, এছাড়া জার্মানির অন্যত্র আরো তিনটি মসজিদে তার যাতায়াত ছিল৷ আমরি সব মিলিয়ে আটটি ভুয়ো নাম ব্যবহার করেছে, তার মধ্যে একটি ওবারহাউজেনে তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন দাখিল করার সময়৷
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে আমরি মোটামুটি বার্লিনেই ছিল, যদিও তার নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্য ছাড়ার কথা নয়, কেননা তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন ঐ রাজ্যে জমা পড়েছে৷ এমনকি রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তর মে মাসের ১০ তারিখে আমরিকে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের পর্যায়ভুক্ত করে৷ আমরি বার্লিনে বিশেষভাবে সন্দেহজনক আচরণ করে; উগ্রপন্থি সালাফি ও ইসলামপন্থিদের সঙ্গেও তার সংযোগ ছিল৷ বার্লিনে সে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাদের মধ্যে দু'জন সন্ত্রাসী আক্রমণের পরিকল্পনা করছে, বলে পুলিশের কাছে খবর ছিল৷ নর্থরাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের ডর্টমুন্ডে আমরির দুই ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, যাদের দৃশ্যত তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে সংযোগ আছে৷
‘সিসিটিভি দিয়ে সন্ত্রাস রোখা যায় না'
এ কথা বলেছেন জার্মান পুলিশ সংগঠন সমিতির উপপ্রধান অ্যার্নস্ট ভাল্টার৷ বলেছেন, ‘‘কিন্তু আততায়ীদের ধরতে তা কাজে লাগানো যেতে পারে৷ জার্মানিতে সেটা কত খারাপ, তা আমরা দেখলাম৷ আমরি উধাও হলো, আমরা তাকে গ্রেপ্তার কতে পারলাম না৷''
অপরদিকে জার্মান বিচারক সমিতির মুখপাত্র ইয়েন্স নিসা ডিপিএ সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, প্রকাশ্য ভিডিও নজরদারির ফলে সন্ত্রাসবাদীরা উৎসাহিত বোধ করতে পারে, বলে বিচারক সমিতির আশঙ্কা৷ ভিডিও ফুটেজ সন্ত্রাসীদের আরো বেশি পাবলিসিটি এনে দেবে৷
একটি সাম্প্রতিক ইউগভ জরিপে কিন্তু ৬০ শতাংশ জার্মান বলেছেন যে, ভিডিও নজরদারি জার্মানিকে আরো নিরাপদ করে তুলবে, বলে তাঁদের ধারণা৷
সিসিটিভি কি সত্যিই সন্ত্রাস রুখতে পারবে? আপনার কী মনে হয়? লিখুন নীচের ঘরে৷