সিরিয়া
২৮ ডিসেম্বর ২০১২সিরিয়ায় প্রায় ২২ মাসব্যাপী চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সর্বময় ক্ষমতাধর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব পেশ করেছেন লাখদার ব্রাহিমি৷ বৃহস্পতিবার রাজধানী দামেস্কে পাঁচ দিনের সফরের শেষ পর্যায়ে তিনি এই প্রস্তাব দেন৷ প্রায় ছয় মাস আগে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে অনুষ্ঠিত সিরিয়া সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বৈঠকের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘জেনেভাতেও এটা পরিষ্কার ছিল এবং এখন সেটা আরও সুস্পষ্ট যে, সিরিয়ায় শুধু বাহ্যিক পরিবর্তন দিয়ে কোনো কাজ হবে না৷ আমি বিশ্বাস করি যে, সিরিয়ার মানুষের এটা প্রয়োজন এবং তারা চায় সেখানে প্রকৃত পরিবর্তন আসুক৷''
চলতি সপ্তাহের শেষে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সাথে বৈঠক করার কথা রয়েছে লাখদার ব্রাহিমির৷ মস্কো সফরের আগে ব্রাহিমি বললেন, ‘‘সিরিয়ায় এমন একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে যার হাতে সকল ক্ষমতা দিতে হবে৷ নির্বাচনের আগে পর্যন্ত সেই সরকারকে দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ এই অন্তর্বর্তী সময়ে রাষ্ট্র এবং তার কোনো প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়লে চলবে না৷ আমরা এমন একটি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে চাই, যেটির ব্যাপারে সকল পক্ষই একমত হবে৷ আর তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের দিকেই ফিরে যেতে হবে এবং সেক্ষেত্রে তারা সকল পক্ষের জন্য বাধ্যতামূলক কোনো প্রস্তাব অনুমোদন করবে৷''
গত আগস্ট মাসে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ালে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন ব্রাহিমি৷ এবারের সিরিয়া সফরে তিনি প্রেসিডেন্ট আসাদের সাথে এবং আসাদ প্রশাসনের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য বিরোধী দলগুলোর সাথে বৈঠক করেন৷ তবে জাতিসংঘ এবং আরব লিগের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে সিরিয়ার সংকট সমাধানে এখনও পর্যন্ত তাঁর সাফল্য তেমন কিছু নেই বললেই চলে৷
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এক কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায় যে, গত রবিবার সিরিয়ায় পৌঁছানোর পর থেকে ব্রাহিমি কোনো পক্ষ থেকেই যথেষ্ট সহযোগিতা পাননি৷ ঐ কূটনীতিক বলেন, ‘‘আসাদ আবারও ব্রাহিমিকে চেপে রেখেছেন৷ তাছাড়া সিরিয়ায় ব্রাহিমির যে সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল, সেরকম কোনো সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ৷ অন্যদিকে, সেদেশের বিদ্রোহীরাও কোনো ধরণের সমঝোতায় আসতে নারাজ৷''
এমন পরিস্থিতিতে সিরিয়ার মিত্র দেশ রাশিয়ায় যাচ্ছেন ব্রাহিমি৷ সেখানে রুশ এবং মার্কিন প্রতিনিধিদের সাথে তিনি সিরিয়ার সংকট সমাধানের পন্থা নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে৷ এর আগে সিরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল মুকদাদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়ায় যান৷ লাভরভ ও মুকদাদের মধ্যে বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু না প্রকাশ করে রুশ মুখপাত্র আলেক্সান্ডার লুকাশেভিচ বলেন, ‘‘আমরা যে শুধু সরকারের সাথেই নয়, বরং সকল বিরোধী পক্ষের সঙ্গেও আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের চেষ্টা করছি, সেই প্রক্রিয়ারই একটি ধাপ এটি৷''
এদিকে, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত নিরাপত্তা বাহিনী থেকে একের পর এক কর্মকর্তা ও সদস্যরা দল ত্যাগ করে বিদ্রোহীদের দলে যোগ দিচ্ছে৷ এবার সরকার পক্ষ ত্যাগ করে বিরোধীদের সাথে হাত মিলিয়েছেন সিরিয়ার সামরিক পুলিশ প্রধান মেজর জেনারেল জাসেম আল-শালাল৷ আল-আরাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘আল-আসাদের সামরিক বাহিনী এখন শুধু হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কাজে লিপ্ত রয়েছে৷ তাই আমি সামরিক বাহিনী থেকে দলত্যাগ করছি৷ নিশ্চয়ই আরো অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা দলত্যাগ করতে চান৷ কিন্তু তাঁরা শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষায় রয়েছেন৷''
দলত্যাগী এই সেনা কর্মকর্তা তুরস্কে গেছেন কিংবা তুরস্কের সীমান্তবর্তী সিরিয়ার কোনো শহরে রয়েছেন বলে ভিন্ন ভিন্ন সূত্রের খবরে বলা হয়েছে৷
এএইচ/ডিজি (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)