ধনী-গরিব বৈষম্য
২২ জানুয়ারি ২০১৮আজকের কথা নয়৷ খ্রিস্টপূর্ব প্রায় সাড়ে চারশ' বছর আগে এথেন্সে বসে দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন, ‘‘শহরের আকার যত ছোটই হোক না কেন, তা মূলত দু'ভাগে বিভক্ত৷ অতি ধনী আর অতি গরিব৷ এই দু'পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলবেই৷’’
প্লেটোর এত বছর পরেও মূলগত সেই যুদ্ধের অবসান ঘটেনি৷ ‘যুদ্ধ’ চলছেই৷ সম্প্রতি ব্রিটেনভিত্তিক সংস্থা ‘অক্সফাম’এর রিপোর্টে আবার সে কথা স্পষ্ট হয়েছে৷ সংস্থাটির দাবি, ২০১৭ সালে পৃথিবীর এক শতাংশ ধনীর ধনভাণ্ডারের বৃদ্ধির পরিমাণ ৭৬২ বিলিয়ন ডলার৷ শুধু তাই নয়, বলা হয়েছে, এই পরিমাণ টাকা যদি গরিবি দূর করার কাজে ব্যবহৃত হতো, তাহলে ৭ বার বিশ্বের গরিবি দূর করা সম্ভব হতো৷
অক্সফামের রিপোর্ট বলছে, ২০১৭ সালে মোট ধনের ৮২ শতাংশই সামান্য কিছু ধনী পরিবার লাভ করেছে৷ অথচ ৫০ শতাংশ গরিব মানুষের জীবনযাপনের কোনো উন্নতি হয়নি৷ অর্থাৎ, মোট উৎপন্ন ধনের কোনো অংশই গরিব মানুষের কাছে পৌঁছায়নি৷
নানা দিক থেকে গরিব-বড়লোকের ধনবৈষম্য দেখিয়েছে অক্সফাম৷ তাদের দাবি, গত বছরে রেকর্ড ২,০৪৩ জন বিলিয়নেয়ার তৈরি হয়েছে পৃথিবীতে৷ কিন্তু কীভাবে বিলিয়নেয়ারদের হাতে অর্থ আসছে? অক্সফামের দাবি, পরিশ্রম করে নয়, পারিবারিকভাবে অথবা সরকারের বদান্যতায়, অথবা গরিব মানুষকে শোষণ করে অর্থবানেরা আরও বেশি অর্থ উপার্জন করছেন৷ ফলে, তাঁদের অর্থ, সার্বিক ধনবন্টনে মোটেই সহায়ক হচ্ছে না৷ অর্থনীতিতে একটি তত্ত্ব আছে, যেখানে বলা হয়, উপর থেকে চুইয়ে পরা ধনে নীচের অংশ উপকৃত হয়৷ কিন্তু অক্সফামের রিপোর্ট বলছে, সেই তত্ত্বও এখন কাজ করছে না৷ ধনীর অর্থে গরিবের বিন্দুমাত্র অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না৷ বরং পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছে৷ ফলে সংস্থাটি চলতি বাজার অর্থনীতিকে ‘বুমিং’ তো বলতে চাইছেই না, বরং ‘পরাজিত’ বলতে চাইছে৷ তাদের দাবি, অর্থনীতি এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ব জুড়ে অবৈধ কাজ, দুর্নীতি আরো বৃদ্ধি পাবে৷ ইতিমধ্যেই এমন ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে সর্বত্র৷ তাদের বক্তব্যের সপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে অক্সফাম দেখিয়েছে, পৃথিবীর ৪২জন ধনীর হাতে যে অর্থ আছে, তার মোট পরিমাণ বিশ্বের ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন মানুষের সম্পত্তির সমান৷
সংস্থাটির দাবি, অর্থনীতির এই বৈষম্যের জন্য, বিশ্ব জুড়ে গরিবদের অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে৷ তাঁরা কর্মস্থলে পরিশ্রম করছেন সাধ্যের অতীত, বহুক্ষেত্রেই তাঁরা ৮ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রাপ্য অর্থ পাচ্ছেন না৷
অক্সফামের এই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর অবশ্য অন্যান্য বহু অর্থনৈতিক সংস্থাই এর বিরোধিতা করে৷ বলা হয়, অক্সফামের রিপোর্ট পক্ষপাতদুষ্ট এবং অর্থনীতির অতিসরলিকরণ৷ বিরোধীদের বক্তব্য, চলতি বাজার অর্থনীতির সমালোচনা করতে গিয়ে অক্সফাম একটি সহজ সত্য এড়িয়ে গিয়েছে৷ তাঁরা বলছেন, ১৯২৯ সালে পৃথিবীর মোট গরিব ছিল ৭৫ শতাংশ, সেই তুলনায় এখন দরিদ্র অনেক কমেছে৷ অর্থাৎ, গরিব মানুষের উন্নতি হচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, পৃথিবীর বহুদেশে গরিবেরা এখন কর্মস্থলে তাদের সুযোগসুবিধা, অধিকার বিষয়ে দাবি জানাতে পারেন৷
ধনী-গরিবের বৈষম্য নিয়ে অক্সফাম নিয়মিতই প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ এর আগেও তারা দেখিয়েছে, বিশ্ব জুড়ে কীভাবে ধনবৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ তাদের রিপোর্টকে হাতিয়ার করা হয়েছিল ‘অকুপাই’ আন্দোলনেও৷ ১ শতাংশ ধনী আর ৯৯ শতাংশ সাধারণ মানুষের তত্ত্ব উঠে এসেছিল সেখান থেকেই৷
নিক মার্টিন/এসজি
২০১৬ সালের ছবিঘরটি দেখুন...