দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত, যুদ্ধবিহীন বিশ্বের প্রত্যাশা
৩১ ডিসেম্বর ২০১১কৃষি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে কৃষিখাতে ভালো ফসল এবং খাদ্য ঘাটতি নয় বরং খাদ্যে বাংলাদেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করলেন সেন্টার ফর অ্যাকশন রিসার্চ বরিন্দ - কার্ব এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ - বিএমডিএ'র সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. আসাদ উজ-জামান৷
আরব অঞ্চলের গণ জাগরণ ও বাংলাদেশ
বার্তা সংস্থা এপি'র বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধান সাংবাদিক ফরিদ হোসেনের মতে আরব অঞ্চলের দেশসমূহে গণ জাগরণ এবং এর ফলে সেখানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে মানুষের আন্দোলন বিদায়ী বছরের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা৷ বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থনীতির উপরে এর নেতিবাচক ছোঁয়া পড়েছে৷ কারণ এসব দেশে বাংলাদেশের বহু জনশক্তি কাজ করে৷ এই আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সেখান থেকে অনেক বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনতে হয়েছে৷ এর ফলে রেমিটেন্স হ্রাস পেয়েছে এবং বাংলাদেশের রিজার্ভ তহবিলও কমে গেছে৷
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ধস
বাংলাদেশের আমদানি ব্যবসার সাথে জড়িত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বশির ডয়চে ভেলেকে বলেন, বাংলাদেশের জন্য ২০১১ সালটা খুব একটা ভালো যায়নি৷ বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ধসের কারণে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছে এবং পথে বসতে হয়েছে৷ এছাড়া বাংলাদেশের টাকার তুলনায় ডলারের দাম এতো বেড়ে গেছে যে, ব্যবসায়ীদের জন্য একটা প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে৷ ২০১২ সালে তাঁর প্রত্যাশা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যেন সর্বাত্মকভাবে প্রচেষ্টা চালান৷
‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট' আন্দোলন
সৌদি আরবের জাযান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বললেন, ২০১১ সাল অত্যন্ত ঘটনাবহুল৷ তবে ইতিবাচক ঘটনার চেয়ে নেতিবাচক ঘটনার সংখ্যাই বেশি৷ একদিকে বাংলাদেশে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে, ভারতের সাথে সম্ভাব্য তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদন হয়নি এবং শেয়ার বাজারে ঘটেছে অনেক বেশি উত্থান-পতন৷ তবে ইতিবাচক একটি ঘটনা হলো বাংলাদেশ বেশ সফলভাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজনের সহযোগী দেশ হিসেবে ভূমিকা রেখেছে৷ আর আন্তর্জাতিকভাবে বলতে গেলে, ২০১১ সালটি ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগের বছর৷ এছাড়া বিদায়ী বছরে আরব অঞ্চলের গণ জাগরণ এবং তার ঠিক পরই দেখা গেছে অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলন৷ ঘটেছে উইকিলিক্সের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসাঞ্জের বিশাল গোপন দলিল প্রকাশের ঘটনা৷ এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি আলোড়ন তোলে৷ তবে ইরান ইস্যুতে যা ঘটছে তার প্রেক্ষিতে আরো একটি যুদ্ধের দিকে এগুচ্ছে কিনা বিশ্ব এমন একটি আশঙ্কা এখন অনেকের মনে৷ আর এই সভ্য যুগেও নতুন করে আরো একটি যুদ্ধ বাঁধলে সেটি হবে অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক ঘটনা৷
ভারতের বিশ্বকাপ জয়
ভারতের দি টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক দেবারতি মুখার্জি বললেন, ‘‘বছরের শুরুতেই ভারত ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জিতে আবারও তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে৷ অন্যদিকে দেখতে গেলে ভারতের মাটিতে ফরমুলা ওয়ানের আগমন একটি গর্বের ব্যাপারে৷ তবে এবছরও আমরা ছাড়া পেলাম না নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড থেকে৷ ১৩/৭ এর মুম্বই হামলার শিকার হলো অনেক সাধারণ মানুষ৷ এছাড়া ভারতের মাটি থেকে ভ্রষ্টাচার দূর করতে আন্না হাজারের যে প্রচেষ্টা সেই লোকপাল বিল যেন ২০১২ সালে বাস্তবে রূপ পায় সেটি আমি প্রত্যাশা করি৷ এছাড়া ২০১২ সালে জাতি, ধর্ম, বর্ণ সকল ভেদাভেদ দূরে ঠেলে নাশকতা থেকে রক্ষা পেতে পারি এবং নতুন বছর হোক সুখ-শান্তিময় ও সমৃদ্ধিপূর্ণ৷''
ভারতে মূল্যস্ফীতি
কলকাতার অন্দরসজ্জা বিশেষজ্ঞ শর্মীষ্ঠা চক্রবর্তীর মতে, ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে বিদায়ী বছরটি খুব একটা সন্তোষজনক কাটেনি৷ এক বছরে বহুবার জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির দরুণ বিশ্ববাজারে টাকার মূল্য কমে যাওয়ায় অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি ঘটেছে৷ মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য এটা মোটেও সুখকর নয়৷ এছাড়া উগ্রবাদী সন্ত্রাস ও বিভিন্ন রাজনৈতিক টালমাটালের কারণে দেশে একটা অস্থির অবস্থারও সৃষ্টি হয়েছিল যা দেশে উন্নতির প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে৷ তবে বিদায়ী বছরে কিছু সন্ত্রাসবাদী দমন সম্ভব হয়েছে৷ এটি সারাবিশ্বেই শান্তির একটি বার্তা ছড়িয়েছে বলে মনে করেন শর্মীষ্ঠা৷
ইউরো অঞ্চলের সংকট
যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির গবেষক দেবাশিষ দাস বলেন, ২০১১ সালের অন্যতম আলোচিত ঘটনা ইউরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক সংকট৷ এই সংকট শুধু ইউরোপে এবং উন্নত দেশের উপরেও নয় বরং উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপরেও প্রভাব ফেলেছে৷ কারণ উন্নয়নশীল দেশগুলোর রপ্তানিখাত অনেকাংশে ইউরোপমুখী৷ এছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর বার্ষিক বাজেটও অনেকাংশে ইউরোপের দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক সহায়তা ও ঋণের উপর নির্ভরশীল৷ তাই ২০১২ সালে তিনি আশা করেন যে, ইউরো অঞ্চলের সংকট দূর হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে আবারও সুবাতাস বইবে৷
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংঘাত ও মতানৈক্য
অস্ট্রেলিয়ার ‘ইনকন্ট্রো' প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাহমুদুর রহমান সোহেল ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘২০১১ সাল নিয়ে আমার বড় আশা ছিল যে, বর্তমান বিশ্বে যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে সেগুলো দূর হবে৷ কিন্তু সেক্ষেত্রে আমি তেমন একটা অগ্রগতি দেখতে পাইনি৷ এখনও আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ বেশ কিছু দেশে তীব্র রাজনৈতিক সংকট ও সহিংসতা বিরাজ করছে৷ এছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও আমি আশাহত৷ কারণ এখনও সেখানে প্রচলিত ধারায় সরকারি ও বিরোধী দল পরস্পরের উপর দোষ চাপিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তারা কোন মতৈক্যে পৌঁছাচ্ছে না৷'' নতুন বছরে তাঁর প্রত্যাশা, বাংলাদেশের মানুষ অন্তত দেখতে পাক যে, সরকারি ও বিরোধী দল একসাথে সুন্দরভাবে দেশের উন্নয়নে কাজ করছে এবং রাজনৈতিক সংঘাত থেকে দেশবাসীকে তারা মুক্তি দেবে৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম