সামাজিক মাধ্যম: শুধু অ্যাকাউন্ট বন্ধ সঠিক উপায় নয়
১১ জানুয়ারি ২০২১ট্রাম্পের মতো, সম্ভবত তাদের প্ল্যাটফর্মের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যবহারকারীর, অ্যাকাউন্ট স্থগিত করে টুইটার, ফেসবুক জানিয়ে দিল, কারা, কীভাবে তাদের প্ল্যাটফর্মে মত প্রকাশ করতে পারবে৷ আমরা তা হতে দিতে পারিনা, বলছেন ডিডাব্লিউর প্রধান সম্পাদক মানুয়েলা কাসপার-ক্ল্যারিজ৷
টুইটারে ট্রাম্পের আট কোটি ৮০ লাখ অনুসারী এবং ফেসবুকের তিন কোটি ৫০ লাখ অনুসারী এখন থেকে আর ট্রাম্পের কোনো বিবৃতির দেখা পাবেন না৷ ট্রাম্পের বিবৃতি অনেকসময় বর্ণবাদী ও বিপজ্জনক ছিল৷
বিরোধী পক্ষের সঙ্গে লড়তে এই অ্যাকাউন্টগুলোকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন ট্রাম্প৷ হেট স্পিচ আর ভুয়া খবর ছিল এসবের ট্রেডমার্ক৷ তার টুইটের কারণে কী হতে পারে, তা সম্প্রতি ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় দেখা গেছে৷
অবশেষে অনেকের মতো আমিও হাফ ছেড়েছিলাম৷ কিন্তু মাত্র কিছুক্ষণের জন্য৷ কারণ আপনি বাকস্বাধীনতা চাইলে সেই বাকস্বাধীনতা যতই অপ্রিয়, বিরক্তিকর হোক না কেন, আপনাকে তা মেনে নিতে হবে৷ এটা ভেবে আমি শঙ্কিত হচ্ছি যে, অল্পসংখ্যক ব্যক্তি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
একটা বিষয় আগে স্পষ্ট হওয়া দরকার: আমরা হেট স্পিচ আর ভুয়া খবর নিয়ে কথা বলছি না৷ এগুলো খুঁজে বের করে লেবেল লাগিয়ে দিতে হবে, কিংবা মুছে ফেলতে হবে৷ এটা প্ল্যাটফর্ম অপারেটরদের কাজ, যা তারা অনিচ্ছা নিয়ে কয়েক মাস আগে শুরু করেছে৷
গতবছর মে মাসে প্রথম টুইটার ট্রাম্পের দুটি টুইট সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সতর্ক করে দিয়েছিল৷ এরপর আরও অনেক টুইটে লেবেল লাগানো হয়েছে, এমনকি মুছেও দেয়া হয়েছে৷ ফলে ব্যবহারকারীরা জানতে পেরেছেন, ট্রাম্পের কিছু টুইট কতটা অগুরুত্বপূর্ণ ও বিপজ্জনক ছিল৷ সেটা ভাল ছিল৷
ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার কাজটি সহজ৷ এর মাধ্যমে অপারেটররা আসলে তাদের দায়িত্ব কমিয়ে নিলেন৷ ট্রাম্প ছাড়াও লাখ লাখ ভুয়া খবর, হেট স্পিচ আর প্রোপাগাণ্ডা অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে৷ ফলে টুইটার, ফেসবুকসহ অন্য প্ল্যাটফর্মকে তাদের সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে হবে৷ তাদের নিয়মিতভাবে ভুয়া খবর খুঁজে বের করে সেগুলোতে লেবেল লাগানো, বা মুছে দেয়ার কাজ করতে হবে৷
এটা ভুলে গেলে চলবে না, যেসব দেশে বাকস্বাধীনতা খর্ব করা হয় সেসব দেশে মতপ্রকাশের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম এই সামাজিক মাধ্যম৷ তবে শুধু শেয়ারহোল্ডারদের কাছে দায়বদ্ধ থাকা অল্প কিছু কোম্পানির প্রধানের বাকস্বাধীনতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারটি গণতান্ত্রিক নয়৷
ফেসবুক, টুইটার এবং গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনের ক্ষমতা গণতান্ত্রিক ও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার সময় এসে গেছে৷ এসব কোম্পানিকেও জবাবদিহির মধ্যে নিয়ে আসতে হবে৷
এ ব্যাপারে জার্মানি ইতিমধ্যে প্রথম পদক্ষেপটি নিয়েছে৷ ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ‘নেটওয়ার্ক এনফোর্সমেন্ট অ্যাক্ট' চালু আছে৷ এই আইনের কারণে সামাজিক মাধ্যমগুলো ভুয়া খবরের বিরুদ্ধে লড়তে বাধ্য৷
ইইউ কমিশন এই আইনকে স্বাগত জানিয়েছে৷ ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যম পোস্টের উপর নজর রাখা এবং প্রয়োজন হলে মুছে দেয়ার জন্য জার্মানিতে কয়েকশ ‘কন্টেন্ট মডারেটর' নিয়োগ দিয়েছে৷
ট্রাম্পের ক্ষেত্রে যেমনটা করা হয়েছে, শুধু অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া অবশ্যই সঠিক কোনো উপায় নয়৷ কারণ এর ফলে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো সহজে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে৷
মানুয়েলা কাসপার-ক্ল্যারিজ/জেডএইচ