সাধারণ ব্যায়ামকে অন্য স্তরে নিয়ে যায় ক্যালিস্থেনিক্স
২১ মে ২০২১ব্যায়াম হিসেবে ক্যালিস্থেনিক্স দেখতে সহজ মনে হলেও আসলে বেশ কঠিন মনে হতে পারে৷ এ বিষয়ে আরও জানতে ও সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতা পেতে বার্লিনে এক পেশাদার অ্যাথলেটিক্সের শরণাপন্ন হয়েছিলেন ডিডাব্লিউ রিপোর্টার
ইয়োসেফিনে গ্যুন্টার৷ তিনি বলেন, ‘‘খেলাধুলা করি না, এমনটা বলতে পারবো না৷ কিন্তু এই তরুণদের দেখলে মনে শ্রদ্ধা জাগে বৈকি! একে বলে ক্যালিস্থেনিক্স৷ সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে এক পেশাদারী খেলোয়াড়কে প্রশ্ন করা যাক৷''
পেশাদারী ক্যালিস্থেনিক্স অ্যাথলিট হিসেবে ডেনিস ভিতালিয়েভ বলেন, ‘‘ক্যালিস্থেনিক্স আসলে নিজের শরীরের ওজনের সাহায্যে ধীরে ধীরে শক্তি বাড়ানোর অনুশীলন৷ অর্থাৎ কত বার, কত ওজন তোলা হচ্ছে আমরা সে দিকে নজর দেই না৷ বরং নতুন ক্ষমতা আয়ত্ত করতে আমাদের শরীর কতটা চাপ নিতে প্রস্তুত অথবা আমরা আমাদের শরীরকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সেটাই আসল বিষয়৷ ক্যালিস্থেনিক্স এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে৷ অনেকটা জিমনাস্টিক্সের মতো৷''
৪০ বছর বয়সি ডেনিস ভিতালিয়েভ আগে পারফর্মেন্স জিমনাস্ট ছিলেন৷ ২০১৩ সালে তিনি বার্লিনে প্রথম ক্যালিস্থেনিক্স চালু করেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে বহু বছর ধরে ‘স্ট্রিট ওয়ার্কআউট' চলে আসছে৷ ডেনিস বলেন, ‘‘রাশিয়া থেকে এসেছি বলে শিশু বয়সেই আমি ক্যালিস্থেনিক্স আবিষ্কার করেছিলাম৷ সোভিয়েত আমলে সেখানে কোনো জিম ছিল না৷ খোলা আকাশের নীচে পুল-আপ বা প্যারালেল বারের মতো ব্যায়ামের কিছু সরঞ্জাম বসানো থাকতো৷ অনেক প্রজন্ম ধরে সেখানে মানুষ অনুশীলন করেছে৷ ঘর থেকে বেরিয়ে সেখানেই এমনটা করা যেতো৷''
প্রাচীন গ্রিসে যোদ্ধারাও এমন ব্যায়াম করে নিজেদের শরীর শক্তিশালী করে তুলতো৷ ক্যালিস্থেনিক্স শব্দটিও গ্রিক ভাষা থেকে এসেছে৷ এর আক্ষরিক অর্থ ‘সুন্দর শক্তি'-র কাছাকাছি৷ এবার ইয়োসেফিনে গ্যুন্টারের আসরে নামার পালা৷ তাঁর মতো ‘আনাড়ির' জন্য কোন ব্যায়াম উপযুক্ত? এই প্রশ্নের উত্তরে ডেনিস ভিতালিয়েভ বলেন, ‘‘প্রথমত, ওয়ার্ম আপ ছাড়া একেবারেই খেলাধুলা নয়৷ তাছাড়া একেবারে মৌলিক ব্যায়াম দিয়ে আমরা অনুশীলন শুরু করি৷ যেমন ডনবৈঠক, নীচু বারের উপর রোয়িং ইত্যাদি৷ এভাবে সঞ্চালন, পায়ের কাজ বেড়ে যায়৷ আজ আমরা পাঁচটি মৌলিক ব্যায়ামের সবক'টি করবো৷''
অতএব আর দেরি নয়৷ ওয়ার্ম আপের পর আসল ব্যায়ামের পালা৷ তার মধ্যে কয়েকটি ২০ বছর আগে খেলার মাঠে শেষ দৌড়ের কথা মনে করিয়ে দেয়৷ দেখতে বেশ মজার মনে হলেও করতে গেলে বেশ বেগ পেতে হয়৷ তবে মনের আনন্দ সেই ক্লান্তি দূর করে দেয়৷ ডেনিস বলেন, ‘‘ছোট-বড় যে কোনো বয়সের মানুষ এমন ব্যায়াম পরখ করে দেখতে চাইলে এখানে আসতে পারেন৷ কারণ এই জায়গাটি সবার নাগালের মধ্যেই রয়েছে৷ এত রকম সরঞ্জাম ঘেঁটে যে কোনো ব্যায়ামের স্বাদ নিয়ে ইচ্ছামতো শুরু করা যায়৷''
এর মধ্যে ‘হিউম্যান ফ্ল্যাগ' ব্যায়ামটি সত্যি চোখে পড়ার মতো৷ ক্যালিস্থেনিক্স জগতের সেরা এই ব্যায়াম মোটেই আনাড়িদের জন্য নয়৷ ডেনিস ভিতালিয়েভ এই ব্যায়ামের কৌশল ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘হিউম্যান ফ্ল্যাগের ক্ষেত্রে হাতের কবজি একে অপরের উপরে রাখা অত্যন্ত জরুরি৷ কারণ পতাকার ডাণ্ডা ধরে ওঠার সময় ঘুরে গেলে চলবে না৷ দ্বিতীয়ত হাত মেলে ধরতে হবে৷ নীচের হাত শরীরের উপর চাপ সৃষ্টি করে, তাই সেটিকে সম্পূর্ণ সোজা রাখতে হয়৷ উপরের হাত শরীর টেনে ধরে৷ অর্থাৎ এভাবে দুটি বিপরীতমুখী শক্তি সৃষ্টি হয়৷ এক হাত চাপ দেয়, অন্য হাত টান মারে৷ হাতের শক্তি কাজে লাগিয়ে শরীরকে সঠিক অবস্থানে রাখতে হয়৷''
একবার জমির উপর এভাবে ভাসার স্বপ্ন অনেকেই দেখে৷ তাদের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে৷ ইউরোপ তথা গোটা বিশ্বে ক্যালিস্থেনিক্সের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে৷ কয়েক লাখ মানুষ এমন অনুশীলন করে চলেছেন৷
ইয়োসেফিনে গ্যুন্টার/এসবি