ফিট থাকার চাবিকাঠি খেলাধুলা ও ব্যায়াম
২ সেপ্টেম্বর ২০১৯নড়াচড়া ও ভারসাম্যের মধ্যে কীভাবে সংযোগ স্থাপন করা যায়, বয়স্ক এই ইঁদুর তা দেখিয়ে দিচ্ছে৷ সেটি দিনে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করে৷ অন্যদিকে সমবয়সি আরেক ইঁদুরকে সারা জীবনের জন্য এমন চক্রযান থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে৷
এই দুই বৃদ্ধ ইঁদুরের মধ্যে তুলনা করলে ভারসাম্যের উপর শরীর সঞ্চালনের প্রভাব সম্পর্কে জানা যায়৷ ইঁদুরের মতো দৌড়াতে পারলে, মানুষের আচরণও সম্ভবত একই রকম হবে৷ বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস্টফ হান্ডশিন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘ইঁদুরগুলি সহনশীলতা বাড়াতে ব্যায়াম করছে৷ সে ক্ষেত্রে কিন্তু তাদের সমন্বয় বা ভারসাম্যের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না৷ বরং এটি সাধারণ এন্ডিউরেন্স ট্রেনিং বলা চলে৷ এর এত শক্তিশালী প্রভাব দেখা যাবে, এমনটা আমাদের প্রত্যাশা ছিল না৷''
বাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর মলিকিউলার লাইফ সাইন্সে ক্রিস্টফ হান্ডশিন ও অন্যান্য গবেষকরা সক্রিয় বৃদ্ধ ইঁদুরের ক্ষমতা দেখে অবাক হয়েছেন৷ কারণ সেটিকেও শুরুতে চক্রযান থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল৷ ভারসাম্য পরীক্ষার মাত্র ৬ সপ্তাহ আগে সেটি অনুশীলন শুরু করে৷ সেই প্রক্রিয়ায় ঠিক কী ঘটেছিল?
সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় বৃদ্ধ ইঁদুর এবং কমবয়সি ইঁদুরের মেরুদণ্ড বিশ্লেষণ করে তাঁরা আসল কারণ খুঁজে পান৷ ক্রিস্টফ হান্ডশিন-এর টিম আবিষ্কার করে, যে অনুশীলনের ফলে ইঁদুরের মেরুদণ্ডে স্নায়ুকোষ বিকশিত হয়েছে৷ তথাকথিত এই মোটর নিউরন পেশি সঞ্চালন করে৷ এখানে তার রং বেগুনি হিসেবে দেখানো হচ্ছে৷ ভেস্টিবুলার নিউরনের সঙ্গে তার সংযোগস্থল সবুজ রং করা হয়েছে৷ এই স্নায়ুকোষ মস্তিষ্ক ও অন্তঃকর্ণে ভারসাম্যের অনুভূতি নিশ্চিত করে৷ হান্ডশিন বলেন, ‘‘
এখানে বাম দিকে কমবয়সি এক ইঁদুরের ছবি দেখা যাচ্ছে৷ মোটর নিউরনও দেখা যাচ্ছে৷ সেগুলির সঙ্গে ভেস্টিবুলার নিউরনের অনেক সংযোগস্থলও স্পষ্ট৷ # মাঝে এক বৃদ্ধ ইঁদুরের ছবি রয়েছে, যেটি কোনো অনুশীলন করে নি৷ সেখানে সবুজ বিন্দুর সংখ্যা অনেক কম৷ # ডানদিকে সেই বৃদ্ধ ইঁদুরের ছবি, যেটি অনুশীলন করেছে৷ এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি সবুজ বিন্দু চোখে পড়ছে৷ অনুশীলন করার কারণে বৃদ্ধ ইঁদুরকে কমবয়সি ইঁদুরের মতো দেখতে লাগছে৷''
ফলে এটা স্পষ্ট, যে এমনকি বেশি বয়সেও পেশি সঞ্চালন সবকিছু স্থির করে৷ ক্রিস্টফ হান্ডশিন মনে করেন, ‘‘বেশি বয়সেও অনুশীলন শুরু করে যে ফল পাওয়া যায়, আমরা সেটা দেখাচ্ছি৷ মানুষের ক্ষেত্রেও এমন গবেষণা হয়েছে৷ কিছু না করার তুলনায় সবকিছুই ভালো৷ কখনোই বলা চলে না, যে অনেক দেরি হয়ে গেছে৷''
ইয়োসেফ বিশফব্যার্গার-এর টিম সক্রিয় এক ইঁদুরের মস্তিষ্কে এখনো সক্রিয় কোষ পরীক্ষা করেছেন৷ এই সব কোষ সবে তৈরি হয়েছে৷ একটি বিষয় তাঁদের চোখে পড়েছে৷ তাঁর মতে, আশেপাশের পুরানো কোষের তুলনায় এই নতুন কোষকে অনেক সহজে উদ্দীপিত করা যায়৷
তাছাড়া সেগুলি পুরানো কোষের তুলনায় অনেক সহজে অন্যান্য কোষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে৷ সক্রিয়, তাজা কোষ স্মৃতিশক্তির জন্যও আদর্শ৷
মস্তিষ্কে নতুন ও তাজা কোষের কল্যাণে সক্রিয় ইঁদুরের স্মৃতিশক্তি আরও নিখুঁত হয়৷ তবে গোটা প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি সমস্যা রয়েছে৷ ইয়োসেফ বিশফব্যার্গার বলেন, কাজে না লাগালে সেই কোষ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মরে যায়৷
অর্থাৎ শুধু খেলাধুলার মাধ্যমে ইঁদুর বা মানুষ আইনস্টাইন হয়ে উঠতে পারে না৷
সিমন ইয়লার/এসবি