সহসাই সমাধান দেখছে না নিরাপত্তা পরিষদ
২৯ এপ্রিল ২০১৮নিরপত্তা পরিষদের ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল কুয়েত থেকে সরাসরি কক্সবাজার আসেন শনিবার বিকেলে৷ সেখানে তারা বিকেলেই বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷
রবিবার তাঁরা বাংলাদেশ মিয়ানমরার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অবস্থারত প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে দেখতে যান৷ এরপর কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন৷ এই ক্যাম্পে সাড়ে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা আছেন৷ ক্যাম্পে ১০০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে তিনভাগে ভাগ হয়ে কথা বলে প্রতিনিধি দলটি৷ পরে তাঁরা মুখোমুখি হন সংবাদিকদের৷
প্রতিনিধি দলের প্রধান পেরুর গুস্তাভো মেজা কোয়াদ্রার বলেন, ‘‘আমরা এই শরণার্থী সংকট দেখে খুব উদ্বিগ্ন৷ আমরা এই পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি৷ রোহিঙ্গাদের জন্য যেন কিছু করতে পারি, তাই সমস্যাটিকে আরও ভালোভাবে জানার জন্য আমরা এখানে এসেছি৷''
কুয়েতের প্রতিনিধি মনসুর আল উতাইবি বলেন, ‘‘আমরা এখান থেকে মিয়ানমারে যাবো এবং সেখান থেকে নিউইয়র্কে ফিরে বিষয়টি নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচনা করবো৷ তবে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে আমরা কোনও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না৷''
যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি কারেন পিয়ার্স বলেন, ‘‘আমরা এখান থেকে মিয়ানমারে যাবো৷ তাদের কাছ থেকে শুনতে চাইবো, সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হতে পারেন তারা৷ রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আমরা নিরাপত্তা পরিষদে সমর্থন দেয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবো এবং রোহিঙ্গাদের উপকারে আসে এমন সিদ্ধান্ত নেব৷''
প্রতিনিধি দলের খবর সংগ্রহে কক্সবাজারে অবস্থানরত বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি শেখ শাহরিয়ার জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘তাঁরা নিশ্চিত করেছেন যে রোহিঙ্গা ইস্যুটিকে হারিয়ে যেতে দেবেন না৷ তবে তাঁরা এও মনে করেন যে, খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে না৷ তাঁরা মূলত রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে এসেছেন৷ পরিদর্শনের ভিত্তিতে নিউইয়র্কে গিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন তারা৷''
তিনি বলেন, ‘‘এই প্রতিনিধি দল মিয়ানমারেও যাবেন৷ তাঁরা রাখাইনে যাবেন৷ রাখাইনের দু'টি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাম পরিদর্শন করতে চেয়েছিলেন তাঁরা৷ কিন্তু মিয়ানমার তাতে সম্মত হয়নি৷ তারা হেলিকপ্টারে করে এরিয়েল ভিউ-এর সুযোগ পাবেন৷''
শেখ শাহরিয়ার জামান বলেন, ‘‘নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন৷''
মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল শহীদুল হক (অব.) মনে করেন, ‘‘নিরাপত্তা পরিষদের এই উদ্যোগ সুফল বয়ে আনবে এবং এটা কার্যকর একটা উদ্যোগ৷''
তিনি বলেন, ‘‘এই সময়ে আমরা চার ধরণের উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি৷ ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট, সিকিউরিটি কাউন্সিল, কমনওয়েলথ আর সামনে ওআইসি সম্মেলন৷ আমার মনে হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে একটা কার্যকর উদ্যোগ চায়৷ তার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি৷''
তিনি বলেন, ‘‘এখন যা বিশ্ব পরিস্থিতি তাতে রাশিয়ার অবস্থান কি হবে তা বলা মুশকিল৷ তবে ভারত ও চীন রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পক্ষেই অবস্থান নেবে৷ আমার মনে হচ্ছে সিকিউরিটি কাউন্সিলের এই উদ্যোগে একটা কিছু হতে পারে৷''
নিরপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দল সোমাবার ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করবে৷ এরপর তাঁরা এখান থেকেই মিয়ানমার যাওয়ার কথা রয়েছে৷
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা এসেছেন৷ ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত এসেছেন ৮৭ হাজার৷ সব মিলিয়ে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার কথা বলছে মিয়ানমার৷ আর এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআর যুক্ত হয়েছে৷
রোহিঙ্গা সমস্যা কি আদৌ সমাধান হবে? মতামত লিখুন নীচের ঘরে৷