‘সরকারের ভুল নীতিতে ধ্বংস হচ্ছে নদী'
১ অক্টোবর ২০১৮ডয়চে ভেলে: প্রতিবার বর্ষাকালেই বাংলাদেশে নদী ভাঙন দেখা দেয়৷ সেক্ষেত্রে সরকারের তো আগে থেকেই প্রস্তুতি থাকে এইসব এলাকায় নদী ভাঙন হতে পারে৷ কিন্তু তারপরও সেটা ঠেকানো যায় না কেন?
ড. আব্দুল মতিন: এই ইস্যুটা আসলে অনেক গভীরে৷ সরকার প্রস্তুত থেকেও কিছু করতে পারবে না, কারণ সরকারের প্রস্তুতিটা খুব টেম্পোরারি৷ প্রতি বছরই একটা কাজ রিপিটেডলি করে আসছেন, কিছু এলাকা খনন করা, কিছু এলাকা ক্লিয়ার করা, কিছু নদীর পাড় বাঁধাই করা৷ ইটস নট আ টোটাল অ্যাকশন৷ নদী ভাঙনের কারণ হলো, আমাদের নদীগুলোর ওয়াটার ক্যারিয়িং ক্যাপাসিটিও কমে গেছে৷ এটা তলা থেকে ভরাট হয়ে আসছে৷
ট্রান্সবাউন্ডারি রিভারগুলোই মূলত পানি সাপ্লাই করে আমাদের দেশে৷ ভারত এবং চীন থেকে আসা নদীগুলোতে অনেক সময় পানি উইথড্র করা হয়, নানা ধরনের অবস্ট্রাকশন তৈরি করা হয়৷ ফলে শীতকালে যখন আমাদের নদীগুলোতে রিটার্ডেড ফ্লো থাকে. তখন সেগুলো স্লো হয়ে যায়, সেডিমেন্ট বেশি পড়ে৷ আমরা যদি আলোচনা করে ফ্লো বাড়াতে না পারি, তাহলে তো সেডিমেন্টেশন বাড়বে৷ ফলে ভরাট হয়ে যাওয়া নদী বর্ষার সময় পানি ধারণ করতে পারে না৷ তখন পানির ধাক্কায় পাড় ভেঙে যায়৷ ফলে সরকারের যে প্রস্তুতি সেটা কোনো কাজে লাগছে না৷ এ কারণেই একই ঘটনা ঘটছে প্রতি বছর৷
বিশেষজ্ঞরা অভিযোগ করে থাকেন, অপরিকল্পিত নদীশাসন নদী ভাঙনের একটি বড় কারণ৷
অফ কোর্স, এটা ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট পয়েন্ট৷ আগে ট্রান্সবাউন্ডারির সমস্যা বলেছি তো৷ আপনি যেটা বললেন, সেটা আমাদের ইন্টার্নাল সমস্যা৷ আমরা বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ দিয়ে, স্লুইস গেট দিয়ে আমরা ইন্টার্নালি ওয়াটার ফ্লো স্লো বা রিটার্ড করছি৷ এর ফলে আমাদের ছোটছোট নদীগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷
পানি উন্নয়ন প্রকল্পের ভুল একটা পরিকল্পনা আছে৷ আপনারা জানেন যে, ষাটের দশক থেকে পাকিস্তান আমলে প্রোব মিশনের আইডিয়া থেকে তাঁরা এটা করেছেন৷ অ্যামেরিকান সেই প্রোব মিশনের আইডিয়া ছিল, বন্যা হচ্ছে, নদীর পানি আটকে দাও বা ডাইভার্ট করে দাও৷ এটা একটা রং পলিসি৷ আধুনিক হাইড্রোলজিতে এটা কোনো সঠিক পদ্ধতি নয়৷ আমরা এই পদ্ধতির নাম দিয়েছি কর্ডন অ্যাপ্রোচ, নদীকে বেঁধে ফেলার চেষ্টা৷ এর ফলে আমাদের নদীগুলো ধ্বংস হচ্ছে৷ ষাটের দশকের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় শ'পাঁচেক নদী আমাদের ইন্টার্নাল মিসম্যানেজমেন্ট এবং রং পলিসির কারণে ধ্বংস হয়েছে৷
এ বিষয়গুলো নিশ্চয়ই আপনারা সরকারের কাছে তুলে ধরছেন৷ সরকার তো নিশ্চয়ই এ বিষয়গুলো জানে৷
অবশ্যই৷ এখন সরকার আবার ভুল নীতির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ ডেলটা প্ল্যান (বিডিপি) নামে আরেকটা ত্রুটিযুক্ত পরিকল্পনা করছে৷ সেটা নিয়েও আমরা কথা বলেছি৷ আমরা ট্রান্স-বাউন্ডারি নদীর সমস্যা সমাধান, ওয়াটার পলিসি, সবকিছু নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সও করেছি৷ এর সব ডকুমেন্টই আমরা সরকারকে দিয়েছি৷ আমাদের সুন্দর একটা নদী নীতি আছে, সেটাও আমরা সরকারকে বহুবার দিয়েছি৷
কিন্তু গভর্নমেন্ট তার মতোই চলতে চায় আসলে৷ সরকার যেহেতু পলিটিশিয়ানরা চালায়, তাঁদের কিছু স্পেশালাইজড আইডিয়া আছে, তাঁরা সেগুলোকেই ইমপোজ করে৷ কিন্তু পলিটিক্স মাথায় রেখে তো নদী বাঁচাতে পারবেন না, কারণ, ইট ইজ আ সায়েন্টিফিক ইস্যু৷ বিজ্ঞানের ইস্যুতে পলিটিক্যাল পজিশন থেকে সিদ্ধান্ত নিলে তো হবে না৷ এজন্যই কাজগুলি আগাচ্ছে না৷
কিন্তু এখন আসলে কী করার আছে? সাধারণ মানুষ তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷
ওভার অল নদী রিভিউ করতে হবে৷ জাতিসংঘেও একটা নদী বিষয়ক কমিশন আছে৷ বাংলাদেশ প্রথমে সেটা মেনে নিয়েছিল, কিন্তু পরে তারা সেটি রেটিফিকেশন করেনি৷ ওয়াটার কনভেনশন-১৯৯৭৷ দু'বছর আগে এটি রেক্টিফাইড হয়েছে৷ সারা বিশ্বের জন্য এটা একটি বাধ্যতামূলক নদী আইন৷ সেখানেও কিন্তু আমাদের এই বক্তব্যগুলিই আছে৷ বলা হয়েছে, ওপেন অ্যাপ্রোচে নদীকে দেখতে হবে, কর্ডন অ্যাপ্রোচে নয়৷
টোটাল রিভার ম্যনেজমেন্ট করতে হলে আপনাকে জাতিসংঘের এই কনভেনশন রেটিফাই করতে হবে৷ কিন্তু এই কনভেনশন রেটিফাই বাংলাদেশ করেনি, ভারত করেনি, চীন করেনি, কেউই করেনি এই এলাকার৷ কিন্তু বহুদিন থেকে নদীর ওপর যে কার্যক্রম চলছে, সে জায়গা থেকে তাদের তো ব্যাক করা দরকার৷ সেটা রাজনৈতিক কারণেই হোক, অন্য কোনো কারণেই হোক, আমি দুর্নীতির কথা না-ইবা বললাম, তাঁরা ওপেন অ্যাপ্রোচে নদীগুলোকে দেখেন না৷ তাঁরা সেই মান্ধাতার আমলের কর্ডন অ্যাপ্রোচেই নদীকে দেখেন৷ ফলে আমাদের নদীগুলো ক্রমাগত ধ্বংস হচ্ছে৷