নতুন আচরণ বিধিমালা
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪সরকারি চাকরিতে থেকে সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বাংলাদেশে বিরল কোনো ঘটনা নয়৷ তাছাড়া রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়া আজকাল স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে৷ আবার সরকারি চাকুরে পেশাজীবীরা রাজনৈতিক আদর্শের নানা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন৷ বিষয়টি এতটাই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সরকারও এটা নিয়ে বিব্রত৷ তাই সরকারি চাকরিজীবীদের আচরণ বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘সরকারি কর্মচারীদের আচরণ বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলছে৷ এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে মতামত জানতে চওয়া হয়েছে এবং তারা মতামত দিয়েছে৷ এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে৷ তাই শীঘ্রই এটা চূড়ান্ত হবে৷''
প্রচলিত সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালায় সরকারি কর্মচারীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, পরিবার পরিজনের বিষয়ে কিছু বলা নাই৷ শুধু বলা আছে যে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ত্রী বা স্বামী রাজনীতিতে জড়িত থাকলে তা সরকারকে জানাতে হবে৷ কিন্তু এই বিধান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না৷ মন্ত্রী এমপিসহ অনেক রাজনৈতিক নেতার স্বামী বা স্ত্রী সরকারি চাকরি করলেও তাঁরা সরকারকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাচ্ছেন না৷ এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেরাও রাজনীতিতে জড়াচ্ছেন৷ নিজের এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন, প্রভাব বিস্তার করছেন৷
এ রকম অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে৷ আর সরকারি চাকুরেদের রাজনীতিতে এই অতি উত্সাহের লাগাম টেনে ধরতেই নতুন নীতিমালা কঠোর করা হচ্ছে৷ তবে নতুন এই নীতিমালা প্রযোজ্য হবে নীতিমালা তৈরির পর যাঁরা সরকারি চাকরিতে ঢুকবেন, তাঁদের জন্য৷
এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলি ইমাম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারি চাকরিজীবীরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না – এই নীতিমালা আগে থেকেই আছে৷ কিন্তু এটা কেউ কেউ মানছেন না৷ তবে সরকারি চাকরিজীবীদের স্বামী বা স্ত্রী সক্রিয় রাজনীতি করতে পারবে না – এ ধরণের বিধিমালা করা সঠিক হবে না৷ কারণ এতে ব্যক্তির নাগরিক অধিকার খর্ব হবে৷ প্রত্যেক ব্যক্তিরই স্বাধীনভাবে বৈধ পেশা বা কাজ বেছে নেয়ার অধিকার আছে৷ তাই কেউ সরকারি চাকরি করলে তাঁর স্বামী বা স্ত্রী রাজনীতি করতে পারবেন না, তা হতে পারে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘আসল সমস্যা অন্য জায়গায়৷ আর সেটা হলো স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রশ্নে৷ কোনো সরকারি চাকুরে যেন তাঁর রাজনীতিবিদ স্বামী বা স্ত্রীর ক্ষমতা ব্যবহার করে বাড়তি বা অবৈধ সুবিধা নিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে৷ এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ কারণ যাঁরা সরকারে যান, তাঁরা প্রশাসনকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেন৷ এর সুবিধা নিয়ে কিছু অতি উত্সাহী, সুবিধাবাদী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন৷''
আলি ইমাম মজুমদার বলেন, ‘‘আমি আমার চাকরি জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে, অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চান৷ কিন্তু কখনো কখনো তাঁরা বাধ্য হয়ে রাজনৈতিক হয়ে ওঠেন৷ দলবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী হাতে গোনা৷''
জানা গেছে, নতুন বিধিমালায় সরকারের অনুমতি ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইচ্ছেমতো সম্পদের মালিক হতে পারবেন না৷ প্লট, ফ্ল্যাট বা গাড়ি কিনতে হলে অর্থের উত্স সম্পর্কে জানিয়ে সরকারের অনুমতি নিতে হবে৷ আর উত্স হতে হবে বৈধ এবং অবশ্যই গ্রহণযোগ্য৷