মালয়েশিয়ায় ‘আধুনিক দাসত্ব’
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪মালয়েশিয়ার ইলেকট্রনিক্স শিল্পের অন্তত ২৮ শতাংশ কর্মী – বিশেষ করে যাঁরা কাছাকাছি দরিদ্র দেশগুলো থেকে কাজের আশায় এসেছেন – সে ধরনের কর্মীরা দালাল ও দালালি সংস্থাদের বিপুল পরিমাণ ‘রিক্রুটমেন্ট ফি' দিতে গিয়ে যে ঋণ করে বসেন, তা শোধ না করতে পেরে বস্তুত ‘ক্রীতদাস' হয়ে যান৷
ভেরিটে-র এই জরিপ ফরমায়েশ করেছিলেন নাকি খোদ মার্কিন সরকার৷ প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফোর্সড লেবার' বা জোরজবরদস্তি করে আদায় করা শ্রম থেকে নির্মিত পণ্য আমদানি করা নিষেধ৷ অথচ ভেরিটে মালয়েশিয়ার সব মুখ্য ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী এলাকাগুলিতে জরিপ করে, সব ধরনের ইলেকট্রনিক পণ্যের কোম্পানি যাচাই করে, বিভিন্ন নাগরিকত্বের পুরুষ এবং নারী শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে যে, ‘ফোর্সড লেবার প্রায় সর্বত্র বর্তমান৷ অর্থাৎ ‘আধুনিক দাসত্বের' এই সব নিদর্শন একক বা বিক্ষিপ্ত নয়, বরং ব্যাপক ও সর্বজনগ্রাহ্য৷
গ্লোবাল সাপ্লায়ার
ভেরিটে সারা দেশে ৫০১ জন কারখানা শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেয়৷ মনে রাখা দরকার, এক হিসেবে মালয়েশিয়ার ইলেকট্রনিক্স শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্লোবাল সাপ্লায়ার: তারা সেমিকন্ডাক্টর, কম্পিউটার পেরিফেরাল্স বা আনুষঙ্গিক, ইলেকট্রনিক্স ভোগ্যপণ্য, টেলিযোগাযোগের সরঞ্জাম এবং অনুরূপ অনেক কিছু উৎপাদন করে থাকে৷ এই শিল্পের খরিদ্দারদের মধ্যে রয়েছে অ্যাপল, স্যামসাং, সোনি এবং অন্যান্য গ্লোবাল ব্র্যান্ড৷ কিন্তু মালয়েশিয়ার এই বাণিজ্যিক সাফল্যের মূল্য দিতে হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া, নেপাল, ভারত, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ অথবা মিয়ানমার থেকে আসা দরিদ্র ও বিপন্ন বিদেশি শ্রমিকদের৷
বিপদটা প্রথমেই ঘটে চাকরি পাবার জন্য রিক্রুটমেন্ট ফি দিতে হয় বলে, যা কিনা – বিদেশে – এক মাসের মাইনে পর্যন্ত হতে পারে৷ দেশ ছাড়ার আগে এবং মালয়েশিয়ার পৌঁছানোর পরে, উভয় স্থানেই দালালদের কমিশন দিতে হয় – যার জন্য ঋণ করতে হয়, যেমন দেশে, তেমনই বিদেশে৷ এবং বিদেশি শ্রমিকরা যে শত জ্বালা, শত বঞ্চনা সত্ত্বেও বিদেশে চাকুরি আঁকড়ে পড়ে থাকেন, তার একটা কারণ হলো এই ঋণ৷ অপরদিকে বিদেশে চাকুরি প্রার্থীদের কাজের পরিবেশ, বেতনের পর্যায়, চাকুরি ছাড়ার শর্ত ইত্যাদি ব্যাপারে প্রায়শই ভুল কথা বলা হয় – এক কথায়, ভ্রান্ত করা হয়৷
ভেরিটে-র জরিপে বিদেশি শ্রমিকদের অনেকে বলেছেন, তাঁরা ওভারটাইম করতে বাধ্য, বলে তাঁরা মনে করেন৷ ৩৮ শতাংশ জানিয়েছেন, রাতে তাঁরা ছোট ছোট ঘরে আটজন করে ঘুমান, ঘরে প্রায় হাঁটাচলা করার মতো জায়গা থাকে না৷ ৯৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁদের পাসপোর্ট রেখে দেওয়া হয় – আর ৭১ শতাংশ জানিয়েছেন যে, সে পাসপোর্ট ফিরে পাওয়া দুঃসাধ্য৷
মিয়ানমার থেকে আগত এক বিদেশি শ্রমিক ভেরিটে-কে বলেন: ‘‘আমাদের পাসপোর্ট রেখে দেওয়ার অর্থ আধুনিক দাসত্ব ছাড়া আর কিছু নয়৷''
এসি/ডিজি (এএফপি)