‘সরকারি খরচে কারা হজে যাচ্ছেন, সেটা আমাদের জানানো হয় না’
৩ জুন ২০২২অনেকেই একাধিকার সরকারি খরচে হজে যাওয়ার সুযোগ পান৷ কীভাবে এই তালিকা তৈরি হয়? কেনই বা এই তালিকা নিয়ে বিতর্ক? এসব নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী এমপি৷
ডয়চে ভেলে : সরকারি খরচে হজে যেতে বিশেষ কোন যোগ্যতার প্রয়োজন হয়?
মো. হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী এমপি: যোগ্যতা বলতে, দুস্থ হতে হয়, গরিব হতে হয়, আলেমদের মধ্যে কিছু নেওয়া হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু নেওয়া হয়, সেনাবাহিনী-পুলিশ থেকেও কিছু নেওয়া হয়৷ প্রধানমন্ত্রী এটা সিলেক্ট করেন৷
অভিযোগ আছে, ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা রাজনৈতিক বিবেচনায় বহু মানুষকে হজে পাঠানো হয়৷ এটা কি ঠিক?
এটা তো বাংলাদেশ৷ কিছুটা তো হতেই পারে৷ দুই বছর আগে যে পরিমাণ পাঠানো হয়েছে, এবার তার চেয়ে কম৷ শুনেছি, প্রধানমন্ত্রী নাকি তালিকা কমিয়ে দিয়েছেন৷ প্রধানমন্ত্রী যে তালিকা করেন সেখানে আবার মন্ত্রী-এমপিরা থাকেন৷ আমাদের কাছেও অনেক সুপারিশ আসে৷ আমি সংসদীয় কমিটির সভাপতি আমার কাছেও অনেক সুপারিশ আসে৷ তবে সর্বশেষ কীভাবে তালিকা হয়েছে সেটা আমি জানি না৷
এ বছরও ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি থেকে আপনারা তিনজন সদস্যকে সরকারি খরচে হজে পাঠানোর সুপারিশ করেছিলেন৷ এদের কাউকে কি নেওয়া হচ্ছে?
তিনজন নেওয়া হচ্ছে না সেটা আমি নিশ্চিত৷ তবে এক বা দুই জন হতে পারে৷
সরকারি খরচে কারা হজে যাবেন, এটা কীভাবে নির্ধারিত হয়?
ধর্ম মন্ত্রী কিছু নাম দেন, আমরাও কিছু দিয়ে থাকি, অন্যান্য জায়গা থেকেও প্রধানমন্ত্রী নাম সংগ্রহ করেন৷ এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দেন৷
একই ব্যক্তি সরকারি খরচে একাধিকবার হজ করেন, এটা কি অপচয় না?
অবশ্যই অপচয়৷ এটা তো হচ্ছে৷ আপনারাই খোঁজ নিতে পারেন৷ আমি অনেকবার হজ করেছি৷ দুই বছর আগেও সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে ভিআইপি প্রতিনিধি দলে আমাকে রাখা হয়েছিল, আমি যাইনি৷ আমি বলেছি, আমি অনেকবার হজ করেছি৷ আমার জায়গায় একজন গরিব মানুষকে দিয়েছি৷ এ বছরও আমার নাম যাতে না থাকে সেটা আমি ওমরাহ করতে যাওয়ার আগে বলে গেছি৷ আমি বলেছি, আমি যাব না৷ আমি জীবনে ২২-২৪ বার হজ করেছি৷ গরিব মানুষ যারা যেতে পারে না সরকারি টাকায় তারা যাক৷ এ বছরও আমার নাম আমি কাটায় দিয়েছি৷ বলেছি, প্রতিনিধি দলে আমি যাব না৷
জনগণের করের পয়সায় হজ পালন কি ধর্ম অনুমোদন দেয়?
জনগণের করের পয়সা, সব পয়সায়ই তো সরকারের৷ সরকার যেভাবে খরচ করে৷ এটা আলেম-ওলামারা ভালো বলতে পারবেন৷
সরকারি তালিকায় থাকা অনেকেই ধনবান৷ তাদের হজের দায়িত্ব কেন রাষ্ট্র নেবে?
যারা উচ্চ পর্যায়ে আছেন তারা ভালো বলতে পারবেন৷ যারা নামগুলো সিলেক্ট করেন তারাই তো বলতে পারবেন কেন নাম দিয়েছেন৷ আমাদের তো এই ক্ষমতা নেই৷
এবার তো ২৭৯ জন সরকারি খরচে হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন৷ এই তালিকার ১২০ জন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের৷ মন্ত্রণালয় থেকেই কেন এত মানুষকে হজে নেওয়া হচ্ছে?
যারা এই তালিকা করেছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন৷ মন্ত্রী মহোদয় ক্ষমতাধর, হয়তো উনি যেভাবে তালিকা দিয়েছেন সেভাবেই প্রধানমন্ত্রী পাস করে দিয়েছেন৷ আমরা যদি তালিকা দিতাম তাহলে আপনি আমাকে বলতে পারতেন৷ যাদের পাওয়ার আছে তারাই তালিকা দিচ্ছেন৷
সহায়তার জন্য যাদের সরকারি খরচে হজে নেওয়া হয়, তারা আসলে জানেন না, সেখানে তাদের কাজটা কী? তাহলে কেন তাদের নেওয়া হয়?
আমরাও জানি না, কত ধরনের লোক নিচ্ছে৷ আমরা শুধু জানি, প্রধানমন্ত্রী সরকারি খরচে হজে যাওয়ার জন্য কিছু মানুষকে অনুমোদন দেন৷ এই তালিকায় কারা থাকছেন সেটা আমাদেরও জানানো হয় না৷ আমি তো সংসদীয় কমিটির সভাপতি৷ ডাক্তার, নার্স, সহকারীসহ অনেক ধরনের লোকই তো নেওয়া হয়৷
এবার চিকিৎসক দলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের পিএসও সুযোগ পেয়েছেন৷ তিনি তো চিকিৎসক না, তাহলে তার কাজ কী হবে?
আপনি যে ধরনের তথ্য জানেন, এই তথ্য আমার কাছেও নেই৷ ফলে যারা এই তালিকা করে তারাই ভালো বলতে পারবে৷ কাদের নিচ্ছে তাদের লিস্টও তো আমাদের কাছে নেই৷ আমার কাছে নেই, আমার সংসদীয় কমিটিতে যে ১০ জন সংসদ সদস্য আছেন তাদের কারো কাছেও নেই৷ এ ব্যাপারে আগামী ১২ জুন মিটিং ডেকেছি৷ সেখানে কমিটির সদস্যরা থাকবেন, মন্ত্রীও থাকবেন৷ ওই দিন হয়ত জানতে পারব৷ এরপর পরিস্কার করে আমি বলতে পারব৷
এবার ৯৯ জনকে নেওয়া হচ্ছে প্রশাসনিক সহযোগিতার জন্য৷ তাদের কাজটা আসলে কী?
এই যে ৯৯ জন যাচ্ছে প্রশাসনিক সহযোগিতার জন্য, এই তথ্যই আমি আপনার কাছে প্রথম শুনলাম৷ আমার ধারণা এরা সৌদি প্রশাসনের সঙ্গে প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করেন৷ কোন সমস্যা হলে হয়ত তারা কাজ করেন৷ এই সিস্টেমে আমি কখনও যাইনি, ফলে আসলে জানি না তারা কি করে৷
মন্ত্রণালয়ের যারা এবার হজে যাচ্ছেন তাদের অনেকেই তো একাধিকবার সরকারি খরচে হজে গেছেন?
আমি তো মনে করি, এটা ঠিক করেনি৷ যদি সরকার নীতিমালা করে থাকে, যারা আগে হজ করেছেন তারা অভিজ্ঞ, তাদের আবার পাঠাবে, তাহলে তো নতুন করে নাম সিলেক্ট করার প্রয়োজন নেই, তাদের পাঠালেই হয়৷ আমি তো নিজের নাম বাদ দিলাম৷ আমি ওমরাহ করে এলাম, চাইলে কি সরকারি খরচে ভিআইপি তালিকায় যেতে পারতাম না? পারতাম৷ কিন্তু আমি যাইনি৷ একজন গরিব মানুষকে পাঠালাম৷ আমার এই জিনিসটা বাধে৷ হজ করতে আল্লাহর ঘরে যাবে, মদিনা যাবে এই ইচ্ছে তো সবারই থাকে৷ অনেক মানুষই তো আছে অসহায় যেতে পারেন না৷ তাদের হয়ত আশাও নেই৷ প্রধানমন্ত্রী হয়ত তাদের কথা চিন্তা করেই এটার অনুমোদন দেন৷ প্রধানমন্ত্রীর তো অনেক ফান্ড আছে, কোন একটা ফান্ড থেকে হয়ত টাকা দেন৷