সরকার বিএনপিকে সংগঠিত হতে দিতে চায় না
৮ নভেম্বর ২০১৪এর আগেও ঢাকায় সমাবেশ করতে গিয়ে বিএনপি বাধার মুখে পড়েছে৷ গত ১৬ মে ডেমরা, যাত্রাবাড়ি, মাতুয়াইল এবং নারায়ণগঞ্জে সমাবেশের অনুমতি পায়নি দলটি৷ তখন তারা নারায়ণগঞ্জে সাতখুন এবং গুম-অপহরণের বিরুদ্ধে একযোগে এই সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছিল৷ ২০১৩ সালের ১৪ মে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও একইভাবে সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি বিএনপিকে৷ এর আগে ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে তাণ্ডবের কারণে অনুমতি দেয়া হয়নি বলে তখন পুলিশ জানিয়েছিল৷
তবে এরমধ্যে পুলিশ যেসব সমাবেশের অনুমতি দিয়েছিল তাতে ছিল নানারকম শর্ত৷ যেমন মাইক ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করার প্রতিশ্রতি ইত্যাদি৷ এছাড়া অনুমতি মিলেছিল একেবারে শেষ মুহূর্তে, নানা দৌড়ঝাপের পর৷
বিএনপির বক্তব্য
শনিবার সমাবেশ করতে না পেরে বিএনপি রবিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে৷ দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, সারাদেশে মহানগরের থানায় এবং জেলায় জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে৷
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘দেশে এখন গণতন্ত্র নেই৷ গণতন্ত্র এখন পুলিশের বুটের নিচে৷ পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনৈতিক নেতাদের ভাষায় কথা বলছেন৷ পুলিশ কর্মকর্তারা এতই ক্ষমতাশালী হয়েছেন যে তাঁরা সমাবেশের অনুমতি দেন না৷ পুলিশ দ্বৈতনীতি নিয়েছে৷ তারা আওয়ামী লীগকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়, কিন্তু বিএনপিকে অনুমতি দেয় না৷''
বিএনপি জানায়, সমাবেশের ঘোষণা দেয়ার পর প্রথমে ৭ নভেম্বরের কথা বলা হলেও পরে তা এক দিন পিছিয়ে ৮ নভেম্বরের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি৷ কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুমতি না পাওয়ায় দলের যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ ভুলু ও অর্থ সম্পাদক আবদুস সালাম ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে যান৷ প্রায় এক ঘণ্টা তারা সেখানে অবস্থান করলেও অনুমতির বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি৷ পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি না দেয়ার ব্যাখ্যা দেয়নি৷
‘পুলিশের ব্যাপার’
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দেয়া পুলিশের ব্যাপার৷ তারা কী কারণে অনুমতি দেননি তারাই ভালো বলতে পারবেন৷
আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সরকার কোনোভাবেই এই মুহূর্তে বিএনপিকে সংগঠিত হতে দিতে চায় না৷ তাঁদের আশঙ্কা, সমাবেশে জামায়াত শিবির ঢুকে গিয়ে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে৷ তাঁরা মনে করেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর এই সরকারের এক বছর পূর্তি হতে আর মাত্র দুই মাস বাকি৷ বিএনপি হয়তো চাইবে এই একবছরকে সামনে রেখে নতুন করে দলকে চাঙ্গা করে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে৷ তাই সরকার আগামী মার্চ এপ্রিল পর্যন্ত সতর্ক অবস্থানে থাকবে৷ বিশেষ করে বিএনপিসহ নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো যাতে কোনোভাবেই নতুন করে সংগঠিত হতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে৷
শনিবারের সমাবেশ ছিল বিএনপির ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস'এর৷ যাকে আওয়ামী লীগ গ্রহণ করে না এবং এটাকে তারা দেখে সৈনিক হত্যা দিবস হিসেবে৷ তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের কাছে এ নিয়ে ডয়চে ভেলে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
জামায়াতেরও বিক্ষোভ রবিবার
কামারুজ্জামানসহ যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত ও বিচারাধীন দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে রোববার সারা দেশে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী৷ যুদ্ধাপরাধ মামলায় দলের তিন নেতার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিবাদে গত সপ্তাহজুড়ে হরতাল করার পর এ কর্মসূচি ঘোষণা করল দলটি৷ শনিবার এক বিবৃতিতে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন৷